Reliance on Liquid Oxygen : দেশে সবথেকে বেশি মেডিক্যাল অক্সিজেন উৎপাদনের লক্ষ্য, জামনগরে যুদ্ধকালীন তৎপরতা রিলায়েন্সের
মহামারী-পর্ব থেকে শুরু করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এখন দেশের সবথেকে বড় মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেনের উৎপাদক। তাও আবার একটি মাত্র জায়গা থেকে। জামনগরের শোধনাগার তথা পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স থেকে প্রতিদিন ১০০০ MT-র বেশি মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদন করছে RIL।
মুম্বই, ১ মে ২০২১ : করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা এবার ৪ লক্ষর গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুমিছিল। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। এই 'প্রাণবায়ুর' জোগান দিয়ে মূল্যবান বহু জীবন রক্ষার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এবার এগিয়ে এল রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। আজ এক প্রেস বিবৃতি দিয়ে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে...
প্রথাগতভাবে, মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদন করে না রিলায়েন্স। কিন্তু মহামারী-পর্ব থেকে শুরু করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এখন দেশের সবথেকে বড় মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেনের উৎপাদক। তাও আবার একটি মাত্র জায়গা থেকে। জামনগরের শোধনাগার তথা পেট্রোকেমিক্যাল কমপ্লেক্স থেকে প্রতিদিন ১০০০ MT-র বেশি মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদন করছে RIL। শতাংশের বিচারে, দেশের মোট উৎপাদনের ১১ শতাংশের বেশি। আর এর মাধ্যমে দেশের দশজন রোগী পিছু একজনের চাহিদা মেটাচ্ছে সংস্থা।
সংস্থার চেয়ারম্যন ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ আম্বানির ব্যক্তিগত তদারকিতে জামনগরে মেডিক্যাল অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়াতে দুই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
১. রিলায়েন্সের জামনগর ইউনিটে শিল্পের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় নজর দেওয়া যাতে দ্রুত মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেনের উৎপাদন বাড়ানো যায়।
২. উৎপাদনের পর তা গাড়িতে তোলা এবং পরিবহণ ক্ষমতা বাড়ানো, যাতে দ্রুত বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে উৎপাদিত অক্সিজেন নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া যায়।
রিলায়েন্সে মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন উৎপাদনে জোর দেওয়া
- রিলায়েন্স আগে মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদন করত না। কিন্তু, RIL-এর ইঞ্জিনিয়াররা দ্রুত শোধিত ও পেট্রোকেমিক্যালস গ্রেড অক্সিজেনকে বিশুদ্ধ গুণ-সম্পন্ন মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন উৎপাদনের নকশা বানিয়ে ফেলেছেন।
- ১৮৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেনকে তরলে পরিণত করতে হয়। এবং এর বিশুদ্ধতা থাকতে হবে ৯৯.৫ শতাংশ। এই কাজে প্রচুর চ্যালেঞ্জ এবং ঝুঁকি আছে।
- বিরামহীন কাজ করে চলেছেন রিলায়েন্সের ইঞ্জিনিয়াররা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশি পরিমাণে মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন তৈরি ক্রায়োজেনিক এয়ার সেপারেশন ইউনিটে।
- রিলায়েন্স এখন প্রতিদিন ১০০০ MT-র বেশি মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম। যা দেশের উৎপাদনের ১১ শতাংশের বেশি।
- প্রতিদিন ১ লক্ষর বেশি রোগীকে স্বস্তি দিতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই অক্সিজেন বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
- ২০২০ মার্চে মহামারীর শুরু সময় থেকে রিলায়নেন্স ৫৫০০০ MT-র বেশি মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন সরবরাহ করেছে।
বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দ্রুত অক্সিজেনের জোগান নিশ্চিত করা
- উচ্চগুণ সম্পন্ন মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদনের সাথে সাথে আর একটা চ্যালেঞ্জ আসে, তা হল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তা সরবরাহ করা। এই চাহিদা থেকে নিরাপদে ও দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য বহন ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।
- এই কাজে রিলায়েন্সের ইঞ্জিনিয়াররা রেল এবং সড়ক পরিবহণে কিছু অদল বদল করেছেন। একই ধরনের লাইন পেতে বিভিন্ন চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে লিকুইড ট্যাঙ্কারগুলি তোলা হচ্ছে। কারণ, অল্প সময়ের মধ্যে লিকুইড অক্সিজেন পাম্প ইনস্টল করা সম্ভব নয়।
- রয়েছে আরও আবিষ্কার। মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেন সরবরাহের জন্য নাইট্রোজেন ট্যাঙ্কারগুলিকে পরিবহণ ট্রাকে পরিণত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত সরকারের পেট্রোলবিয়াম অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস সেফটি অর্গানাইজেশনের অনুমোদনও রয়েছে।
- এছাড়া রিলায়েন্স সৌদি আরব, জার্মানি এবং বেলজিয়াম থেকে আকাশপথে ২৪টি ISO কন্টেনার নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে। এর সাথে নেদারল্যান্ডস ও থাইল্যান্ড যোগ করেছে ৫০০ MT লিকুইড অক্সিজেন। এই ISO কন্টেনারগুলি দেশে মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন পরিবহণের সমস্যা মেটাবে। আগামী কয়েকদিনে রিলায়েন্স আরও ISO কন্টেনার নিয়ে আসবে।
- করোনা মোকাবিলায় ISO কন্টেনার নিয়ে আসতে সাহায্য করার জন্য Aramco, BP ও IAF-কে ধন্যবাদ।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুকেশ আম্বানি বলেন, "করোনার নতুন ঢেউয়ের বিরুদ্ধে লড়ছে দেশ। এই পরিস্থিতিতে আমি এবং রিলায়েন্সের সবার কাছে প্রত্যেকের জীবন রক্ষা করার থেকে বড় আর কিছু নেই। দেশে জরুরি ভিত্তিতে মেডিক্যাল গ্রেড অক্সিজেনের উৎপাদন এবং পরিবহণর প্রয়োজন রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় যেভাবে আমাদের জামনগরের ইঞ্জিনিয়াররা দেশপ্রেমের মানসিকতা নিয়ে বিরামহীন কাজ করে চলেছেন, তাতে আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। রিলায়েন্স পরিবারের এই তরুণ ও উজ্জ্বল সদস্যরা যেভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানসিকতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন তাতে আমি সত্যিই অভিভূত। এঁরা আবার একবার দেশের প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছেন।"
রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারপার্সন নীতা আম্বানি বলেন, "সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশ। আমরা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের তরফে যা কিছু সাহায্য করতে পারি..তা করব। আমাদের জামনগরের প্ল্যান্টে রাতারাতি মেডিক্যাল গ্রেড লিকুইড অক্সিজেন উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই অক্সিজেন গোটা দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশবাসীর জন্য আমাদের প্রার্থনা রইল। আমরা একসাথে এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠব।"
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড(RIL) সম্বন্ধে :
RIL দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা। ২০২০(৩১ মার্চ) অর্থবর্ষে সংস্থার কনসলিডেটেড টার্নওভার ছিল INR ৬৫৯,২০৫ কোটি($ ৮৭.১ বিলিয়ন), ক্যাশ প্রফিট INR ৭১,৪৪৬ কোটি($৯.৪ বিলিয়ন) এবং নেট প্রফিট INR ৩৯,৮৮০ কোটি($৫.৩ বিলিয়ন)।
RIL হাইড্রোকার্বন উৎপাদন, পেট্রোলিয়াম শোধন এবং তা বাজারজাত করা, পেট্রোকেমিক্যালস, রিটেল এবং ডিজিটাল পরিষেবার সঙ্গে জড়িত। ফরচুন গ্লোবাল ৫০০-র তালিকায় বিশ্বের বৃহত্তম সংস্থাগুলির মধ্যে ভারত থেকে শীর্ষে রয়েছে RIL। এই মুহূর্তে তালিকায় ৯৬তম স্থানে। ২০১৯-এ ফোর্বস গ্লোবাল ২০০০-এর তালিকায় ৭১তম স্থানে সংস্থা। যা ভারতীয় সংস্থাগুলির মধ্যে শীর্ষে। এছাড়া Linkedin-এর দ্য বেস্ট কম্পানিজ টু ওয়ার্ক ফর ইন ইন্ডিয়া ২০১৯-এর তালিকায় দশম স্থানে রয়েছে এই সংস্থা।
রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন সম্বন্ধে :
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মানব-হিতৈষী শাখা রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। দেশের উন্নয়নে অনুঘটকের কাজ করা যাদের লক্ষ্য। এর নেতৃত্বে রয়েছেন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবংচেয়ারপার্সন নীতা আম্বানি। এই সংস্থা সবসময় প্রত্যেকের জীবনের মানোন্নয়ন এবং সার্বিক ভালোর জন্য বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছে। দেশের গ্রামীণ এলাকা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া,, বিপর্যয় মোকাবিলা, শহরের পুনরুজ্জীবন, কলা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের জন্য কাজ করে চলেছে। গোটা দেশের ৪৫ মিলিয়নের বেশি মানুষের জীবনকে স্পর্শ করতে পেরেছে রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে রয়েছে ৪৪,৭০০-র বেশি গ্রাম এবং শহর।