রোগী মৃত্যু ঘিরে তুলকালাম মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, জুনিয়র ডাক্তারকে 'মারধর', পাল্টা হামলা ইন্টার্নদের, আক্রান্ত সাংবাদিকরাও
মুর্শিদাবাদ: চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগী মৃত্যুর অভিযোগকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রথমে জুনিয়র চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। পাল্টা ইন্টার্নরাও মারধর করেন বলে অভিযোগ। ছবি তুলতে গিয়ে হবু ডাক্তারদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন সাংবাদিকরাও। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ। হাসপাতালে ভর্তি হন বহরমপুরের কালীতলাদিয়ার গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ মণ্ডল। তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। মৃতের বাবা দুলাল মণ্ডলের অভিযোগ, চিকিৎসকরা দেখেনি। এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে মেল ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালায় মৃতের পরিবারের লোকজন। একজন জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মৃতের পরিবার হামলা চালায়। ৭ জন ইন্টার্ন আহত। তারা হাসপাতালে ভর্তি। গণ্ডগোলের খবর পাওয়ার পর, মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল থেকে হাসপাতালে চলে আসেন শতাধিক ইন্টার্ন। অভিযোগ, মৃতের পরিবারের সদস্যদের পাল্টা মারধর শুরু করেন তাঁরা। মৃতের বাবার দাবি, ডাক্তাররা দেখল না। উল্টে আমাদের উপর চড়াও হল। মারল। ছবি তুলতে গেলে আক্রান্ত হন একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি। মারের চোটে বুক এবং পায়ে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি আশিস বাগচী। শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি বহরমপুরে বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। ইন্টার্নদের মারধরের জেরে আহত হন আরও দুই সংবাদমাধ্যমের তিনজন সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এই প্রেক্ষিতে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, যে কোনও হিংসারই বিরোধিতা করি। এখানে চিকিৎসকদের আগে মারা হয়েছে। কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য মেরে থাকলে কী বলব। সাংবাদিকরা মাঝে পড়ে গিয়েছিলেন। সেটাও দুঃখজনক। হাসপাতালের মধ্যে এমন গণ্ডগোল দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অন্য রোগীর আত্মীয়রা। একজন বলেন, ভাবতেই পারছি না। ডাক্তাররা হামলা চালাল। বেরিয়ে গেল। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরাও। এখনও অভিযুক্ত কোনও ইন্টার্নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের গলায় দায় ঝাড়ার চেষ্টা। সম্প্রতি, কখনও সরকারি হাসপাতালে হবু চিকিৎসকদের দেখা গিয়েছে তাইকোন্ডো শিখতে। কখনও আবার বেসরকারি উদ্যোগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পাঠ নিয়েছেন ইজরায়েলি মার্শাল আর্ট, ক্রাভ মাগার। এ সবই আত্মরক্ষার স্বার্থে! কিন্তু মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হবু ডাক্তাররা যে ভাবে রোগীর আত্মীয় এবং সাংবাদিকদের পেটালেন, তাতে মার্শাল আর্টের আগে তাঁদের কি মাথা ঠান্ডা রাখার পাঠ নেওয়া বেশি জরুরি নয়? প্রশ্ন অনেকেরই। রোগীর আত্মীয় হোন বা ইন্টার্ন, একে অপরের বিরুদ্ধে তাঁদের যদি কোনও অভিযোগ থাকে, তা হলে তো সেই সব অভিযোগ জানানোর নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। তা না করে কেন এ ভাবে হাতাহাতি, গণ্ডগোল? প্রশ্ন নানা মহলে।