জলপাইগুড়িকাণ্ড: দিল্লিতে লিপিকা-অনির্বাণের সঙ্গে বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ছিলেন মেয়ে শ্বেতাও, দাবি তদন্তকারীদের
জলপাইগুড়ি: সম্পর্কের জটিলতা থেকেই রক্তের সম্পর্ককে খুন করার চক্রান্ত! জলপাইগুড়িতে বিমা অফিসার উত্তম মহন্ত হত্যাকাণ্ডে পরতে পরতে রহস্য! সময় যত গড়াচ্ছে ততই সামনে আসছে মৃতের মেয়ের চাঞ্চল্যকর ভূমিকা। বাবাকে খুনের চক্রান্তে জড়িত থাকার অভিযোগে যাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে মা লিপিকা-র সামনে বসিয়ে শ্বেতাকে জেরা করা হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় শ্বেতা দাবি করেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে প্রায়ই লিপিকার ওপর অত্যাচার চালাতেন উত্তম। যার জেরে বাবা-মায়ের সম্পর্কে অবনতি হয়। জলপাইগুড়ি শহরেই ৩ কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন উত্তম মহন্ত। পুলিশ সূত্রে খবর, ফ্ল্যাটের ৩টি ঘরের একটিতে থাকতেন লিপিকা ও তাঁর প্রেমিক অনির্বাণ। একটিতে মেয়ে শ্বেতা ও অন্য ঘরে উত্তম। তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন সন্ধেয় স্বামীকে আম দিয়ে মুড়ি মেখে দেন লিপিকা। তাতেই মিশিয়ে দেন বিষ! যা খেয়ে মৃত্যু হয় উত্তমের। সব জেনেশুনেও পাশের ঘরে চুপ ছিলেন শ্বেতা। সূত্রের খবর, তদন্তকারীদের সামনে মা-মেয়ে দাবি করেছেন, বিষক্রিয়ায় নয়, স্বাভাবিক কারণেই মৃত্যু হয়েছে উত্তম মহন্তর। ধৃতরা এই দাবি করলেও তদন্তকারীরা অবশ্য সবদিকই খতিয়ে দেখছে। তাঁরা অনেকটাই নিশ্চিত যে, বাবার মৃত্যু ও মায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে অনেক তথ্যই গোপন করেছেন শ্বেতা। এমনকী জেঠুদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু, কেন মায়ের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আগাগোড়া চুপ ছিলেন শ্বেতা? তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, স্বামীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে প্রেমিক অনির্বাণকে দেওয়ার পাশাপাশি, শখ পূরণ করতে মেয়েকেও টাকা দিতেন লিপিকা। সম্প্রতি উত্তম মহান্ত সিদ্ধান্ত নেন, সব সম্পত্তির নমিনি করে দেবেন মেয়েকে। পুলিশ জানতে পেরেছে, আগে যেমন মায়ের কাছ থেকে টাকা পেতেন শ্বেতা, তেমনি সব হাতে পাওয়ার পর মা-কে অর্থ সাহায্য করতেন মেয়ে। এরই মধ্যে ২০১৫-য় স্বামী-কে ছেড়ে অনির্বাণের সঙ্গে দিল্লি চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন লিপিকা। আর দিল্লিযাত্রায় মায়ের সঙ্গী হন মেয়ে শ্বেতা ও তাঁর প্রেমিকও। পুলিশ সূত্রে খবর, দিল্লিতে কয়েকদিন কাটিয়ে জলপাইগুড়ি ফেরেন লিপিকারা। তবে বাড়িতে না গিয়ে সবাই মিলে চলে যান অনির্বাণের গ্রামের বাড়ি বানিজেরহাটে। পুলিশ জানতে পেরেছে, খবর পেয়ে একদিন বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে অনির্বাণের বাড়িতে হাজির হন উত্তম। তাঁদের মধ্যে ব্যাপক গোলমাল হয়। আসে পুলিশ। জানা গিয়েছে, শ্বেতা ও তাঁর প্রেমিকও সেদিন অনির্বাণের গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, স্বামীর সঙ্গে অশান্তির মধ্যেই ২০১৬-র অগাস্টে অনির্বাণের সঙ্গে শিলিগুড়িতে চলে যান লিপিকা। কয়েকমাস সেখানে কাটিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ফেরেন জলপাইগুড়িতে। পুলিশ সূত্রে খবর, ততদিনে অবশ্য লিপিকার সঙ্গে সম্পর্কে দাঁড়ি টেনে ফের বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন উত্তম মহান্ত। পরিচিতরাও সেকথা জানতেন বলে দাবি পুলিশের। উত্তম চেয়েছিলেন নতুন করে জীবন শুরু করতে। লিপিকাও তাই চেয়েছিলেন। তাহলে কেন খুন? নেপথ্যে কি অর্থের লোভ? উত্তর খুঁজছে পুলিশ। পুলিশ জানতে পেরেছে, বাবার মৃত্যুর ঠিক ২ দিন আগে শ্বেতা, ফেসবুকে লিখেছেন, *** -এর লোকজন আজ থেকে আমার জীবন ও আমার চিন্তাধারা থেকে বাদ। আজ থেকে শুধু আমি ও আমার স্বপ্ন। এই পোস্টের মধ্যে কাদের কথা বলেছেন শ্বেতা? খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। শ্বেতার বিরুদ্ধে, ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এদিন শ্বেতাকে আদালতে তোলা হলে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে স্টার মার্কস পাওয়া মেয়ে! পড়াশোনা করতেন ইংরেজি অনার্স নিয়ে। নিচ্ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের প্রশিক্ষণও। তিনি কীভাবে বাবাকে খুনের চক্রান্তে জড়িত থাকতে পারেন, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছেন না কেউ।