ঘাটালে অব্যাহত জল যন্ত্রণা; জলের তলায় দোকানপাট, নৌকা নিয়ে চলছে বাজার
যেখানে চোখ যায়, সেখানেই শুধু জল আর জল। শিলাবতীর জল ভাসিয়েছে ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকাকে।
সোমনাথ দাস, পশ্চিম মেদিনীপুর: ঘাটালে গ্রামের দিকে জল কিছুটা কমলেও শহরের অবস্থা একই। এখনও শহরের বিভিন্ন রাস্তা জলের তলায়। ২ নম্বর ওয়ার্ডে দোকানপাট এখনও জলের তলায়। নৌকা নিয়ে চলছে বাজারহাট।
যেখানে চোখ যায়, সেখানেই শুধু জল আর জল। শিলাবতীর জল ভাসিয়েছে ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকাকে। জলের তলায় বহু বাড়ি, দোকানপাট। জলে ডুবেছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। ঘাটাল পুরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ড এখনও জলবন্দি। ২ নম্বর ওয়ার্ডের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।জল না নামায় বাজারহাট করতে ঘাটালবাসীর ভরসা নৌকা।
ঘাটালের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, পানীয়জল বিদুত নেই সমস্যায় আছি। প্রতিবছর দুর্ভোগের মধ্যে পড়ি। শুক্রবার দুপুরে নৌকায় এলাকা পরিদর্শন করেন জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
১৯৭৯ সালে জনতা সরকারের আমলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। ১৯৮২ সালে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। ২০০৯ সালে বাম আমলে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। ২০১৫-তে প্রকল্প রিপোর্টে সবুজ সঙ্কেত দেয় মোদি সরকার।
কিন্তু এখনও ঘাটাল সেই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত না হওয়ায় কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী। জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কথায়, কেন্দ্র সরকার সহযোগিতা মাস্টার প্ল্যান কার্যকর হচ্ছে না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। পাল্টা জবাব দিয়েছে গেরুয়া শিবিরও।
তবে বর্ষা আসে, বর্ষা যায়, কিন্তু জল যন্ত্রণার ছবির বদল হয় না। তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও কম হয় না। ঘাটালবাসীর প্রশ্ন, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে কবে?
অন্যদিকে জল কিছুটা নামলেও, বিধ্বস্ত চেহারা হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষিজমির। বিঘার পর বিঘা কৃষিজমি জলের তলায়। জলে খেলে বেড়াচ্ছে মাছ। কোথাও কোথাও জল নেমেছে ঠিকই, কিন্তু নষ্ট হয়ে গেছে খেতের সব সবজি। সদ্য আমন ধানের চারা রোয়া হয়েছিল। মনে হচ্ছে, তার ওপর দিয়ে কেউ রোলার চালিয়ে দিয়েছে। গত কয়েকদিনে হাওড়ার ১০টি গ্রামপঞ্চায়েতের ৮৫টি গ্রাম পুরোপুরি ছিল জলের তলায়।
শুক্রবার দেখা গেল অর্ধেক সংখ্যক গ্রামের জল নেমে গেছে। কিন্তু কৃষিকাজ ও মাছচাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গেছে মাছের ভেড়ি। প্রশাসনের তরফে আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, দামোদরের বাঁধ উপচে উদয়নারায়ণপুরে যে জল ঢুকছিল, এই মুহূর্তে তা বন্ধ হয়েছে। তবে গড়ভবানীপুর অঞ্চল এখনও জলমগ্ন। ধীরে ধীরে জল নামছে। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে হাওড়ার আমতা, উদয়নারায়ণপুরে। এরই মধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে দুর্গতরা। যদিও পঞ্চায়েতের দাবি, যথাসাধ্য চেষ্টা করছে তারা।