কাটোয়ার গৃহবধূর টুঁটি কামড়ে ধরে স্বামী, মুখে বালিশ চাপা দেয় সুপারি কিলার!
কাটোয়া: সুপারি কিলার ডেকেও নিজে খুনে হাত লাগিয়েছিলেন। কাটোয়ায় গৃহবধূ খুনে স্বামীর নৃশংসতা দেখে পেশাদার দুই খুনিও আঁতকে উঠেছিল। পুলিশ সূত্রে এমনটাই খবর। স্ত্রী খুনে যাতে তাঁর দিকে সন্দেহের তির না ঘোরে, সেজন্য অন্য গল্পও ফেঁদেছিলেন ধৃত স্কুলশিক্ষক।
টুঁটি কামড়ে ধরেন স্বামী, তারপর মুখে বালিশ চেপে ধরে সুপারি কিলার! ঘুমন্ত অবস্থায় ঠিক এরকমভাবেই খুন করা হয়েছিল মহুয়া ঘোষকে!
কাটোয়া হত্যাকাণ্ডে দুই সুপারি কিলারের কাছ থেকে, এমনই হাড় হিম করা তথ্য পেল পুলিশ! ধৃত আজাদ দাবি করেছে, স্ত্রীকে খুনের জন্য তাদের ৩ লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষক উজ্জ্বল ভাস্কর ঘোষ।
সেইমতো ১৮ জুলাই গভীর রাতে, শিক্ষকের বাড়িতে পৌঁছে যায় আজাদ ও জাকির শেখ। আজাদের দাবি, তাঁদের দেখে, শিক্ষক বলেন, তোমাদের কিছু করতে হবে না। আমি নিজের হাতে ওকে (স্ত্রী) খুন করতে চাই!
পুলিশ সূত্রে দাবি, সেই মতো, বিছানায় উঠে মহুয়ার হাত-পা চেপে ধরে সুপারি কিলার আজাদ ও জাকির। এরপরই সজোরে স্ত্রীর টুঁটি কামড়ে ধরেন শিক্ষক উজ্জল ভাস্কর ঘোষ! মহুয়া যখন বাঁচার চেষ্টা করছিলেন, তখনই মুখে বালিশ চেপে ধরে আজাদ।
গোটাটাই ঘটে ৭ বছরের এক শিশুর সামনে!
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, শিক্ষক নিজেই, নিজের বাইক বের করে সুপারি কিলারদের বলেন, নাও এবার তোমরা এটা (দেহ)র সদগতি করো।
পরিকল্পনা ছিল দেহ গঙ্গায় ফেলার। কিন্তু তা আর হয়নি। অ্যাসিডে মুখ পুড়িয়ে, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি ডোবায় মহুয়ার দেহ ফেলে পালায় সুপারি কিলাররা।
পুলিশ সূত্রে দাবি, দেহ উদ্ধারের খবর শুনে এলাকাবাসীরা পানুহাট দিঘির পাড় এলাকায় ভিড় করেছিল, তখন সেখানে ওই শিক্ষকও গিয়েছিলেন! স্ত্রী-র দেহ দেখতে!
এখানেই শেষ নয়, পুলিশ সূত্রে দাবি, সুপারি কিলাররা স্ত্রীর দেহ নিয়ে চলে যাওয়ার পর, ঠাণ্ডা মাথায়, বিছানার চাদর কেচে শুকোতেও দেন উজ্জ্বল ভাস্কর ঘোষ!
গোটা ঘটনায় উজ্জল কিশোর ঘোষের সঙ্গে, প্রেমিকা খুনে অভিযুক্ত উদয়ন দাসের মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেকে! পুলিশ সূত্রে খবর, উদয়নের মতো ধৃত শিক্ষকও স্বীকার করেছেন, থ্রিলার দেখেই স্ত্রী খুনের যাবতীয় পরিকল্পনা ও পদ্ধতি ঠিক করেন তিনি!
স্কুলে যখন ক্লাস থাকত না, কিম্বা যখন টিফিন চলত, তখন ফোন নিয়ে স্টাফ রুম থেকে বেরিয়ে যেতেন উজ্জ্বল কিশোর ঘোষ। পুলিশ সূত্রে দাবি, ওই সময় সুপারি কিলারদের সঙ্গে খুনের ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতেন তিনি! ফিরে এসে আবার ক্লাস নিতেন! ঘূণাক্ষরেও কেউ কিচ্ছুটি টের পায়নি!
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত শিক্ষকের অপরাধমূলক মানসিকতা দেখে, অবাক হয়ে যাচ্ছেন তদন্তকারীরা!
গত ৬ মাস ধরে, শ্বশুরবাড়ি ও পরিজনদের মধ্যে তিনি নাকি প্রচার করছিলেন, এক যুবকের সঙ্গে মহুয়ার বিবাহ বহির্ভৃত সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
যার উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট পুলিশের কাছে। যাতে খুনের পর তাঁকে কেউ সন্দেহ না করে! কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারলেন না ইতিহাসের এই শিক্ষক!