ভ্রাম্যমান মিনি রেস্তোরাঁয় খাবার বিক্রি থেকে সচেতনতার প্রচার, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই যুবকের
কাজ হারিয়ে হতাশা নয়, বরং নিজের নেশাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিলেন রায়গঞ্জের যুবক
সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ- এ যেন ঘুরে দাঁড়ানোর অনন্য নিদর্শন। গত বছর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কাজ হারিয়ে হতাশা নয়, বরং নিজের নেশাকেই বেছে নিলেন পেশা হিসেবে। স্ত্রীর সহযোগিতায় ভ্রাম্যমান মিনি রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন। আর তার সঙ্গেই এবার করোনা সচেতনতার প্রচারও চালিয়ে যাচ্ছেন রায়গঞ্জের মৃদুল রায়। এই অভিনব কাজ আর সুস্বাদু খাবারে খুশি খাদ্যপ্রেমীরাও।
রায়গঞ্জের কর্নজোড়ায় জেলা প্রশাসনিক ভবন লাগোয়া বিনোদন পার্কের সামনে প্রতিদিনই বিকেল হলেই সুসজ্জিত টোটোয় মিনি রেস্তোরাঁ নিয়ে হাজির হন মৃদুল। চিকেন পকোড়া, চিকেন কাবাব, ডায়নামাইট চিকেন, পিৎজা থেকে শুরু করে যাবতীয় খাবার মেলে সেখানে। করোনা পর্বে রাজ্যে এখনও একাধিক ক্ষেত্রে জারি বিধিনিষেধ। এই আবহে মন কেড়েছে মৃদুলের মিনি রেস্তোরাঁ। প্রতিদিনই বিকেলের পর অনেকেই খাবার কিনে থাকেন এই মিনি রেস্তোরাঁ থেকে। খোলা আকাশের নিচে তিন রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গায় রসনা তৃপ্তির সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো যেন একঢিলে দুই কাজ। সেইসঙ্গে দোকানের বোর্ডে লেখা থাকছে মাস্ক পরুন। সতর্ক থাকুন। এতে মানুষের রসনা নিবৃত্তির সঙ্গে চলছে তাঁর সচেতনতার প্রচারও।
হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে বেঙ্গালুরুর একটি পাঁচতারা হোটেলে কাজ করতেন মৃদুল। গত বছর লকডাউনে হোটেল বন্ধ হয়ে গেলে মালদার গাজোলে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন। কর্মহীন হয়ে প্রথমদিকে একটু হতাশ হলেও পরে নিজের বুদ্ধিমত্তায় কাজে লেগে পড়েন। রায়গঞ্জের কর্নজোড়ার বোগ্রামে দিদির বাড়ির পাশে ছোট টিনের ঘরে সংসার বাধেন মৃদুল ও তাঁর স্ত্রী। দুজনের আলোচনাতেই আবিস্কার হয় এই মিনি রেস্তোরাঁর। গত প্রায় পাঁচমাস ধরে এভাবেই সারাদিন ধরে সামগ্রী প্রস্তুত করে বিকেলে টোটোয় তৈরি রেস্তোরাঁ নিয়ে চলে যান কর্নজোড়া পার্কের পাশে।
মৃদুলের কথায়, "কাজ হারিয়ে প্রথমে হতাশ হয়েছিলাম ঠিকই, তবে স্ত্রীর সহযোগিতায় এভাবে টোটো সাজিয়ে আমার জানা কাজের ব্যবসা শুরু করি। বেঁচে থাকতে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। "এদিকে স্বামীর এই জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে সামিল তাঁর স্ত্রী রাখি দেবসিংহও। এক ক্রেতা বলেন, এখন তো রেস্তোরাঁ বন্ধ আছে, পরে সেগুলো খুললেও সংক্রমণের ভয় থাকছে যেটা আগেও ছিল। কিন্তু এখানে খাবার নিয়ে খোলামেলা জায়গায় দাঁড়িয়ে খাওয়া যায়, এতে কোনও ভয় থাকেনা। আমাদের তো বেশ ভালোই লাগে।
মৃদুলের বক্তব্য, এভাবেও ঘুরে দাঁড়ানো যায়। যাঁরা এই অতিমারীতে কর্মহীন হয়েছেন, তারা মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে নিজেদের ভালোলাগার কাজে মন দিয়ে সেটাকেই পেশা করে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন এই তরুণ। আর তাঁর এই বেঁচে থাকার লড়াই যেন সমাজের অনন্য নজির, যা বাকিদের পথ দেখাবে।