এক্সপ্লোর
Advertisement
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
WB Election 2021 Analysis: 'বহিরাগত' থেকে 'ঘরের ছেলে', একাধিক রাজনৈতিক প্রশ্ন; অঙ্ক, না রসায়ন! কার যাত্রাভঙ্গ করতে পারে ওয়েসির মিম ?
দাদা যে এই বাংলার, কোন দলের নয়, সেকথা তিনি সংবাদমাধ্যমে ভাসিয়ে দিলেন সচেতনভাবে। এর অল্প কদিন বাদেই দাদার অসুস্থতা সমাপতিত হল রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে। -লিখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ শুভময় মৈত্র
![WB Election 2021 Analysis: 'বহিরাগত' থেকে 'ঘরের ছেলে', একাধিক রাজনৈতিক প্রশ্ন; অঙ্ক, না রসায়ন! কার যাত্রাভঙ্গ করতে পারে ওয়েসির মিম ? WB Election Analysis Maths not chemistry How much influence external oasis on Bengali vote Political expert Shubhamoy Maitra WB Election 2021 Analysis: 'বহিরাগত' থেকে 'ঘরের ছেলে', একাধিক রাজনৈতিক প্রশ্ন; অঙ্ক, না রসায়ন! কার যাত্রাভঙ্গ করতে পারে ওয়েসির মিম ?](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2021/01/16201444/web-all-party-flag-still-160121.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
পশ্চিমবঙ্গের মানুষ রাজনীতিতে অত্যুৎসাহী। সেই কারণেই সকালের দাঁত মাজা থেকে রাত্তিরের কুলকুচি সবেরই রাজনৈতিক ব্যাখ্যা থাকে। আর সঙ্গে সামনের বিধানসভা নির্বাচন গোটা বিষয়টিকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। এখন রাজনীতি আসবে দুদিক থেকেই, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ। সেই ধরণের দুটি প্রসঙ্গের অবতারণা এই লেখায়। প্রথমটি প্রত্যক্ষ রাজনীতি, যেখানে সব রাজনৈতিক দলই এক বহিরাগতকে নিয়ে মেপেজুপে কথা বলছেন। বুঝতে অসুবিধে হওয়ার কথা নয় যে এখানে আসাউদ্দিন ওয়াইসির কথা হচ্ছে। অন্য বিষয়টি ঘরের ছেলের। একটুও ভণিতা না করে বলা যাক যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অসুস্থতার খবরে আমরা সকলেই বিচলিত। বাঙালির ঝাঁজ যে দিন দিন কমছে সে নিয়ে সন্দেহই নেই। সেই অবস্থায় আমাদের চোখের মণি ভাল না থাকলে দেখাটাই থমকে যায়। এই লেখা যখন লিখছি তখন সারা ভারতের দাদা, আর আমাদের সৌরভ সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরছেন। ওনার সুস্থতা আমাদের কাছে সবথেকে স্বস্তিদায়ক খবর। কিন্তু সেখানেও বারেবারে উঠে এসেছে পরোক্ষ রাজনীতির প্রশ্ন। মাথা চাড়া দিয়েছে চাপের কথা। এর সত্যি মিথ্যে নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণাপত্র লেখা হতে পারে, তবে বঙ্গভাবনায় রাজনীতির প্রতি সামান্য হলেও বিতৃষ্ণা ফুটে উঠেছে এই ঘটনায়। সকালে কাগজ আর সন্ধেয় টেলিভিশনে বাঙালি সবথেকে বেশি খোঁজে রাজনীতি। সেখানেও কি সামান্য অরুচির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে? তা যদি সত্যি হয়, তাহলে পাঠক-পাঠিকারা হয়ত আর পরের পরিচ্ছেদে দৃষ্টিপাত করবেন না। তবে নাক কুঁচকে যারা বাকিটুকু পড়বেন, তাদের জন্যে প্রত্যক্ষ বহিরাগত এবং পরোক্ষ ঘরের ছেলে এই দুটি বিষয়েই রাজনৈতিক দল এবং তাদের কার্যকর্তাদের ব্যাখ্যায় অস্বস্তির ছাপ স্পষ্ট।
প্রথমে ভোরের ফ্লাইট। বছর শুরুর শীতের রবিতে বাঙালি যখন চাদর গায়ে চা, কিংবা কাঁথা ছেড়ে কফিতে মনোনিবেশ করছে, ততক্ষণে উড়োজাহাজ মাটি ছুঁয়ে ফেলেছে। টেলিভিশনের পর্দায় কাকভোরেই হাজির হায়দারাবাদের সুলতান। দেশের পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘুদের নিয়ে তাঁর গভীর দুশ্চিন্তার কথা সকলেই জানেন। সেই দুঃখে তিনি দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ঘুরে বেড়ান প্রান্তিক মানুষের চোখের জল মোছাতে। আর স্বাভাবিকভাবেই অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁর গুণাগুণ বুঝতে অক্ষম। তাই তারা তাঁর দলের নাম দিয়েছে ভোট-কাটুয়া। অর্থাৎ যেখানে কিনা বিজেপির জেতার সম্ভাবনা কম, সেখানে বিরোধীদের প্রাপ্য সংখ্যালঘু ভোট কেটে কেন্দ্রের শাসক দলের সুবিধে করে দেয় মিম। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এমনটা ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকে। পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে সেকথা একেবারেই বেঠিক। অর্থাৎ পরিষ্কার বলে দেওয়া যাক যে বিহার নির্বাচনে মিমের উপস্থিতি বিজেপি জোটকে প্রত্যক্ষ সুবিধে দেয় নি। কারণ একেবারে সহজ। কুড়িটি আসনে লড়েছে মিম। এর মধ্যে পাঁচটিতে তারা নিজেরাই জিতেছে। নটিতে জিতেছে মহাগঠবন্ধন। বাকি যে ছটিতে এনডিএ জোট জিতেছে তার মধ্যে মাত্র একটিতে মিমের প্রাপ্ত ভোট জয়ের ব্যবধানের থেকে বেশি। অর্থাৎ আসনের হিসেবে কুড়িটির মধ্যে মাত্র একটিতে বিজেপিকে সুবিধে করে দিয়েছে তথাকথিত ভোট-কাটুয়ারা। তুলনায় আনুন চিরাগের এলজেপি-কে। জেডিইউ-এর তেত্রিশটি আসন তারা কমিয়ে দিয়েছে একইরকম ভোট কাটার হিসেবে। অঙ্ক হয়ত কঠিন, তবে সবথেকে বিপজ্জনক পরিসংখ্যান সম্পর্কে অজ্ঞতা। বিহার নির্বাচনে মিমের বিজেপিকে প্রত্যক্ষ সুবিধে করে দেওয়ার অঙ্ক তাই প্রচারমাত্র। পরোক্ষে কি হয়েছে সেকথা অবশ্য অঙ্কে ধরা পড়বে না।
তবে সমাজবিজ্ঞানে একটা পরিসংখ্যান ভুল হলেই সব অনুসিদ্ধান্ত বদলে যাবে এমনটা নয়। পশ্চিমবঙ্গে মিমের প্রভাব বিহারের তুলনায় অন্যরকমও হতে পারে। শুরুতেই জানানো যাক যে উর্দুভাষী মুসলিম, যাদের মধ্যে আসাউদ্দিন সাহেবের প্রভাব বেশি, সেই সংখ্যা মোট ভোটারের দু শতাংশও হবে না। আর সেই ভোট বড়জোর পশ্চিমবঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ভাগের দুএকটি জেলাতে সামান্য প্রভাব ফেলবে। আসনের হিসেবে যে পঞ্চাশ-একশোর গল্প শোনা যাচ্ছে তা অতিরঞ্জিত। তবে মিম এর মধ্যে যোগাযোগ করছে সংখ্যালঘু ধর্মগুরুদের, যারা কিনা একেবারে বাঙালি। তাদের সঙ্গে জোট হলে গোটা সংখ্যালঘু ভোটে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তৃণমূল কোন সংখ্যালঘু ভোট পাবে না এমন কথা তৃণমূলের চরম বিরোধীরাও দাবি করবে না। বরং এর মধ্যেই কয়েকটি সংখ্যালঘু সংগঠন তৃণমূলকে সমর্থন এবং মিমকে ধিক্কার জানিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে সিপিএম কংগ্রেসও হয়ত সেই ভোটের ভাগ পাবে। সব মিলিয়ে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। সোজা অঙ্কে এতে বিজেপির সুবিধে।
আরও কিছুটা বিজ্ঞান আছে। সেটা অঙ্ক নয়, রসায়ন। তা হল সংখ্যালঘু নেতাদের এতো হইচই খুব ভাল চোখে দেখবে না বাংলার সংখ্যাগুরুরা। তাদের একটা বড় অংশের যদি গা চিড়বিড় করতে শুরু করে, সেক্ষেত্রেও বিজেপির ঝুলি ভরবে। সাধারণভাবে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি লোকসভার তুলনায় কম ভোট পায়। এটাই সাম্প্রতিককালের দস্তুর। তবে সেইসব জায়গায় সাধারণভাবে বিজেপি বা তাদের এনডিএ জোট ক্ষমতায় থাকার পর এই অভিজ্ঞতা। বাংলায় তারা ক্ষমতায় নেই। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে লোকসভার হাওয়া পালে লাগলে তাদের পক্ষে সমর্থন যদি একইরকম থেকে যায়, তাহলে লড়াই জমবে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল মিমের বিরোধিতা করছে, সেটাই স্বাভাবিক। আবার খুব গলা চড়াতে পারছে না, যদি সংখ্যালঘুরা বিরক্ত হয়। সেই কারণেই ওয়াইসি স্যারকে খুব দাপটের সঙ্গে 'বহিরাগত' বলা যাচ্ছে না। একেই বলে উভয়সংকট। বিজেপি এই অবস্থায় তাদের দিকে তাক করা 'বহিরাগত' তীর নিয়ে সুর চড়াতে পারতো। সেটা এই মুহূর্তে না করার একটা কারণ হতেই পারে যে তারা চাইছে মেরুকরণের তুরুপ মিম-তাসটাকে তাড়াতাড়ি না খেলতে। আর মিমের সঙ্গে বিজেপির যদি গোপন আঁতাত থাকে, যে কথা বলেন বিরোধীরা, তাহলে তাদের পক্ষে 'বহিরাগত' আসাউদ্দিন মহাশয়কে নিয়ে আপাতত হইচই না করাটাই কৌশল। কংগ্রেসের সরকারি বক্তব্য জানা যায় নি। তবে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার প্রচুর বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা। তাতে সাড়া মেলা শক্ত। বরং যেটা হতে পারে তা হল গত লোকসভায় যে পাঁচ শতাংশ ভোট ছিল তার মধ্যে সংখ্যাগুরু ভাগটা এই সংখ্যালঘু প্রীতিতে আরও হ্রাস না পায়। বামেরা নিশ্চুপ। এমনিতেই সংবাদমাধ্যমে তাঁদের উপস্থিতি সাত শতাংশ ভোটের সমানুপাতিক। সামাজিক মাধ্যমে যৎসামান্য দু-একটি লম্বা মিছিলের ছবি ছাড়া বামেদের আপাতত দেখা যাচ্ছে না। বিধানসভায় তারা বিশেষ আসন না জিতলে সবটাকেই সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।
সামগ্রিক বঙ্গরাজনীতিতে বামেদের লাল রঙ-ওঠা গামছার মত আবছা হলেও, ঘরের ছেলে সৌরভের বিষয়ে কিন্তু যথেষ্ট পরিণতি দেখিয়েছেন তাদের নেতা অশোক ভট্টাচার্য মহাশয়। দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক যখন রাজভবনে যাচ্ছেন, কিংবা তারপরেই দিল্লি, তখন গুজব ছিলই যে তিনি হয়ত বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। সম্ভবত বিষয়টা আপাতত গুজবই, কিন্তু মোটের ওপর বিজেপির পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন। কোন সন্দেহই নেই যে এ বাংলায় একক নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য রাজনীতিকদের থেকে কয়েক যোজন এগিয়ে। সেখানে বাংলার অন্য যে মানুষটিকে জনগণ নেতা হিসেবে মানে, সেটা অবশ্যই দাদা। এখনও তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে নেই। তাই সৌরভকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ভাবার মধ্যেই সেই দলের কর্মীদের হৃদয়ে ইতিবাচক দখিনা বাতাসের গতি বাড়ে। তৃণমূলের এক্ষেত্রে মন্তব্য করার জায়গা কম, কারণ সৌরভ বিরোধী যে কোন কথা ব্যুমেরাং হয়ে যাবে এই বাংলায়। ফলে তাদের সতর্ক থাকতেই হচ্ছে। এইসময়েই কলকাতায় অশোকবাবুর আবির্ভাব এবং সৌরভের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকার। দাদা যে এই বাংলার, কোন দলের নয়, সেকথা তিনি সংবাদমাধ্যমে ভাসিয়ে দিলেন সচেতনভাবে। এর অল্প কদিন বাদেই দাদার অসুস্থতা সমাপতিত হল রাজনৈতিক চাপের সঙ্গে। রাজনীতির দড়ি টানাটানির জন্যে বাংলার ক্যাপ্টেনের শরীর খারাপ, এই ধরণের আলোচনা অবশ্যই বিজেপিকে সামান্য থমকে দিল। "ঠাকুরঘরে কে রে"-র উত্তর তাই দু-একজন বিজেপি মুখপাত্রের মুখে শোনা যাচ্ছে। তৃণমূল আপাতত হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এমনিতেই দলছুট লক্ষীছেলেদের লক্ষ্মীছাড়া বলতে বলতে মুখের ফেনা উঠে যাচ্ছে, তার মধ্যে সৌরভ বিজেপির দিকে হেলে পড়লে সামলানো একেবারেই মুশকিল হত। সেই জায়গা থেকে আপাতত নিষ্কৃতি মিলল কিছুটা। তবে বিজেপি নেতারা এখনও ঠারেঠোরে সৌরভ-লক্ষী জুটির কথা শোনাচ্ছেন।
উপসংহারে আবার সেই প্রশ্নে ফেরা যাক বাংলার রাজনীতি মোটের ওপর কতটা জয়যুক্ত হল এই দুই ঘটনা থেকে? একথা বলাই যায় যে আসাউদ্দিনের আসা, এবং সৌরভের অসুস্থতা - দুটি বিষয়ই অস্বস্তির ছাই ছড়িয়ে দিল বাংলার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। জীবনের সবটুকু যে রাজনীতি নয় সেকথা মনে পড়ল বাঙালির। রাজনীতির সঙ্গে যে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ থাকা জরুরি সেই বোধটুকু আর একবার ফিরে এলো। সংস্কৃতি এবং খেলাধুলোয় ক্রমাগত পেছোতে থাকলে একটা জাতি এমন জায়গায় নেমে যায়, যেখানে রাজনীতি আঁকড়ে ধরা ছাড়া গতি নেই। সেখানেই অনেকটা গভীরে নেমে গিয়ে চৈতন্য হয় পাতকুয়োর কোন জায়গাটায় এসে পৌঁছলাম। রাজনীতি বর্জন করা কাজের কথা নয়, কারণ তা সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কিন্তু নিম্নমানের এবং নিম্নরুচির রাজনীতির পিঠে চড়ে মাধ্যাকর্ষণের থেকেও অধিক ত্বরণে আছড়ে পড়া আত্মহত্যারই নামান্তর। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ - এই দুই রাজনীতিতেই সেক্ষেত্রে আর প্রশ্ন করার উৎসাহটুকুও থাকে না।
(লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক, মতামত ব্যক্তিগত।)
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
খবর
খবর
খবর
অটো
Advertisement
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)