সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে নজর ঘোরানোর কৌশল, মুখ্যমন্ত্রীকে ১৪ পাতার চিঠিতে বিস্ফোরক রাজ্যপাল
মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চিঠির পাল্টা চিঠি এবার রাজ্যপালের।
কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চিঠির পাল্টা চিঠি এবার রাজ্যপালের।
মুখ্যমন্ত্রী ও সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে ১৪ পাতার চিঠি পাঠালেন জগদীপ ধনকড়। করোনা মোকাবিলা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া চিঠিতে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল। জগদীপ ধনকড় লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাধে কাধ মিলিয়ে লড়াই করার জন্য আমি আপনাকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। সব রাজনৈতিক দলও সরকারকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে একযোগে সমর্থন জানিয়েছিল। এবার আপনারও রাজনীতি পরিহার করার সময়।
রাজ্যপাল তাঁর চিঠিতে আরও লিখেছেন, করোনা মোকাবিলায় আপনার ব্যর্থতার থেকে নজর ঘোরাতে ইচ্ছাকৃতভাবে আপনি পদক্ষেপ (রাজ্যপালকে চিঠি) করেছেন, সেটা আমি বুঝতে পারছি। ‘করোনা-পরিস্থিতি থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে নজর ঘোরাতে চাইছেন। সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে নজর ঘোরানোর কৌশল। আপনার কাজের দ্বারা সংবিধানকে আপনি অসম্মান করছেন।’
বৃহস্পতিবার রাজ্যপালকে লেখা চিঠিতে বাবাসাহেব অম্বেডকর ও সারকারিয়া কমিশনের উল্লেখ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রাজ্যপাল তাঁর পাল্টা চিঠিতে লিখেছেন, আপনি চিঠির একটা বড় অংশে বাবাসাহেব অম্বেডকর ও সারকারিয়া কমিশনের উল্লেখ করেছেন। মুখে অম্বেডকরের কথা বলে প্রতি মুহূর্তে সংবিধানের ওপর আঘাত আনছেন। আপনার প্রচেষ্টা বিভ্রান্তিকর।
করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল নিয়েও সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে তিনি লিখেছেন, একমাত্র এরাজ্যেই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সাহায্য করতে আসা কেন্দ্রীয় দলকে ক্ষতিকারক পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়েছে।
চিঠিতে রাজ্যপাল লেখেন, ‘যদি করোনা-আক্রান্তদের হাসপাতালে আসার তথ্য চেপে দেওয়া হয়, যদি নামেই কোয়ারেন্টিন পরিষেবা হয়, যদি সত্ ভাবে পরীক্ষা না করানো হয়, যদি স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা না দেওয়া হয়, যদি তাঁদের দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা না করা হয়, যদি তাঁদের ভালমানের পিপিই না দেওয়া হয়, এই চূড়ান্ত সঙ্কটে যদি চিকিৎসার উপকরণ কেনায় বেনিয়ম হয়, গণবন্টনের যদি রাজনীতিকরণ হয়, সামগ্রী যদি লুঠ হতে থাকে-- স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এভাবে অবহেলিত হলে বিপর্যয় আসন্ন।’
রাজ্যপাল লিখেছেন, আপনার তথ্য লোকানোর পদ্ধতি যন্ত্রণাদায়ক পরিণামের দিকে নিয়ে যাবে। আইসোলেশন ওয়ার্ডে মোবাইল নিষিদ্ধ, সেইরকমই একটা সিদ্ধান্ত। রাজ্যের পরিস্থিতির আসল চেহারাটা প্রকাশ করার এটাই আসল সময়। যাতে করোনার বিরুদ্ধে আরও জোরদার লড়াই করা যেতে পারে।
চিঠির আরেকটি জায়গায় রাজ্যপাল লিখেছেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থতা থেকেই আপনি ক্রমাগত কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যপালকে দোষারোপ করছেন। ত্রাণ নিয়ে বাদুড়িয়ায় সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে (পুলিশের ওপর আক্রমণ), তা হিমশৈলের চূড়া মাত্র!
মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপাল পদ নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের পথে হেঁটেছেন জগদীপ ধনকড়। তিনি লিখেছেন, সংবিধানে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের উল্লেখ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনার সংবিধান অনুযায়ী কাজ করা উচিত। আর রাজ্যপাল হিসেবে আমার কর্তব্য হল সংবিধানকে রক্ষা করা এবং রাজ্যের মানুষের সেবা করা। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালের মাধ্যমে নিজের শাসনকার্য পরিচালনা করা। কিন্তু বারবার আপনি সেটিকে উপেক্ষা করেছেন। আপনি বলেছেন, ‘রাজ্যপাল মনোনীত’। কিন্তু ‘আমি মনোনীত হয়ে আসিনি, আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্যের মানুষ যখন বিপর্যয়ে, তখন আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।’
পাশাপাশি রাজ্যপাল লিখেছেন, ম্যাডাম চিফ মিনিস্টার, মনে রাখবেন, আমি আমার শপথের প্রতি দায়বদ্ধ। রাজ্যের মানুষ যখন সমস্যায় রয়েছেন, তখন আমি রাজভবনে বসে থেকে বিষয়টিকে উপেক্ষা করতে পারি না। তিনি আরও বলেন, ‘হাতে ঝাড়ু বা মাইক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচার কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে প্রশ্ন উঠুক। এখন রাজনীতি-নাটুকেপনার বদলে দরকার প্রশাসনিক কার্যকারিতা।’