Justice Yashwant Varma: বাড়িতে টাকার পাহাড়? দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতিকে রাতারাতি বদলি, কিন্তু নিতে আপত্তি এলাহাবাদ হাইকোর্টের
Delhi High Court: দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করেছে সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম।

নয়াদিল্লি: নেতা-মন্ত্রীর বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধারের সাক্ষী থেকেছে দেশ। এই মুহূর্তে বিচারপতির বাড়ি থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধারের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল। অভিযোগ সামনে আসার পর যেভাবে বদলি করা হল তাঁকে, তার মধ্যে দায়সারা আচরণের অভিযোগ উঠছে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে। আর সেই আবহেই একের পর এক মামলায় অভিযুক্ত বিচারপতির রায় নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। (Justice Yashwant Varma)
দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি যশবন্ত বর্মাকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলি করেছে সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম। গত সপ্তাহেই তাঁর বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধার হয় বলে অভিযোগ সামনে আসে। ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন বিচারপতি যশবন্ত। এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছিলেন। পাশাপাশি, দিল্লি হাইকোর্টের কমপক্ষে ১১টি কমিটিরও সদস্য তিনি, যার মধ্যে রয়েছে Administrative and General Supervision Committee, Committee for Finance and Budgeting, Sanction of Contigent Expenditure Committee. সেখানে থাকাকালীন যশবন্ত ৫ লক্ষ টাকার লোকসান মাফ করে দিয়েছিলেন বলে খবর। (Delhi High Court)
এর পাশাপাশি, Delhi International Arbitration Centre-এর Arbitration Committee-র চেয়ারম্যানও বিচারপতি যশবন্ত। দিল্লি হাইকোর্টের আইনি পরিষেবা কমিটিতেও রয়েছেন। দিল্লি হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবীদের পদোন্নতি সংক্রান্ত যে স্থায়ী কমিটি রয়েছে, গত বছর বেশ কিছু আইনজীবীর পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেয় ওই কমিটি। সেই কমিটির মাথায় রয়েছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মনমোহন। আর তিন বিচারপতির ওই কমিটির সদস্য ছিলেন বিচারপতি যশবন্তও।
মধ্যপ্রদেশ থেকে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন বিচারপতি যশবন্ত। ১৯৯২ সালে আইনের পেশায় পা রাখেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টে সাংবিধানিক, শ্রম এবং শিল্প, কর্পোরেট এবং কর সংক্রান্ত মামলা নিয়ে মূলত প্র্যাকটিস ছিল। এলাহাবাদ হাইকোর্টে সাত বছর বিচারপতির ভূমিকায় থাকাকালীন সাংবিধানিক আইন, অপরাধ এবং মধ্যস্থতা সংক্রান্ত একাধিক মামলায় রায় দেন।
২০১৮ সালে চিকিৎসক কাফিল খানের জামিন মঞ্জুর করে প্রথম বার খবরের শিরোনামে উঠে আসেন বিচারপতি যশবন্ত। উত্তরপ্রদেশের হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হন কাফিল। মোট ৬৩ শিুশু মারা যায়, প্রাপ্তবয়স্ক রোগী মারা যান ১৮ জন। সাত মাস বন্দি থাকার পর কাফিল জামিন পান। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)-র দায়ের করা চিনিকল জালিয়াতি মামলায় নাম ওঠে বিচারপতি যশবন্তের। Simbhaoli Sugar Mills-এর ডিরেক্টরদের নামে মামলা করে CBI, যাতে নাম ছিল তাঁরও। সংস্থার নন এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ওই চিনিকলের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল Oriental Bank of Commerce.
গত সাড়ে তিন বছর দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা ওঠে বিচারপতি যশবন্তের হাতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য় হল, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কংগ্রেসের দায়ের করা আবেদন। লোকসভা নির্বাচনে একমাস বাকি থাকতে কংগ্রেসকে নোটিস ধরায় আয়কর দফতর। কয়েকশো কোটির বকেয়া কর না মেটানোয় দলের অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনের আগে আয়কর দফতরকে ব্যবহার করে তাদের বিপাকে ফেলা হচ্ছে, প্রচারে যাতে টাকা খরচ করা না যায়, তার জন্য অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে কংগ্রেস। আয়কর দফতরের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানায় কংগ্রেসে। কিন্তু তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি যশবন্ত।
২০২৩ সালে দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কাছে একটি শুল্ক মামলা এলে, বিচারপতি যশবন্ত জানান, শুল্ক আইনে সোনা আমদানি নিষিদ্ধ। ওই বছরই সত্যজিৎ রায়ের ছবি 'নায়ক' নিয়ে একটি মামলা ওঠে বিচারপতি যশবন্ত নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে। 'নায়ক' ছবির চিত্রনাট্যকে বইয়ের আকারে প্রকাশ করতে উদ্যোগী হয় Harper Collins. কিন্তু বিরোধিতায় মামলা দায়ের করেন RD Bansal, যিনি RDB and Co.-কর্তা। ওই সংস্থা ছবিটির প্রযোজনায় যুক্ত ছিল। মামলায় সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখেন বিচারপতি যশবন্ত। জানিয়ে দেন, সত্যজিৎই 'নায়ক' ছবির চিত্রনাট্যকার। ফলে ছবির স্বত্ত্বও তাঁর।
২০২২ সালে একটি মামলায় বিচারপতি যশবন্ত জানান, লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যক্তি দু'টির বেশি বন্দুক রাখতে পারবেন না। রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যতা থাকলেও, একই নিয়ম প্রযোজ্য। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের Unified Payments Interface (UPI)-এর প্রশংসাও করেন বিচারপতি যশবন্ত। তাঁর দাবি ছিল, UPI ভারতে বিপ্লবের সূচনা করেছে। নগদের পরিবর্তে ডিজিটাল লেনদেনে জোর দিতেই UPI-এর সূচনা, যার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন বিচারপতি যশবন্ত। কিন্তু এখন তাঁর বাড়ি থেকেই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উদ্ধারের অভিযোগ।
টাকা উদ্ধারের সময় যশবন্ত বাড়িতে ছিলেন না বলে জানা গিয়েছে। গোটা ঘটনায় আইন বিশেষজ্ঞ থেকে বিরোধী দলগুলি একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছে। এই প্রসঙ্গে উন্নাও মামলার কথা টেনে এনেছে কংগ্রেস। দলের নেতা পবন খেরা বলেন, "বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ধরে রাখতে হলে, ওই টাকা কার, তা বের করতে হবে। জানতে হবে, বিচারপতিকে টাকা দেওয়া হয়েছিল কেন। উন্নাও ধর্ষণ মামলা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি করছিলেন উনি। গডেস অফ জাস্টিসের চোখের উপর থেকে ফেট্টি খোলার সময় প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জানিয়েছিলেন, বিচার ব্যবস্থা অন্ধ নয়, সকলকে সমান চোখে দেখে। এবার তা প্রমাণ করতে হবে।" সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম বিচারপতি যশবন্তকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বদলির সিদ্ধান্ত নিলেও, এলাহাবাদ হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন আবার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া চিঠিতে তারা জানিয়েছে, এলাহাবাদ হাইকোর্ট কোনও 'ডাস্টবিন' নয়। শুধুমাত্র বদলি করা কেমন শাস্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, সূত্রের খবর, টাকা উদ্ধারের ঘটনায় অন্তর্তদন্তও শুরু হয়েছে।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
