পঠানকোট জঙ্গি হানার মূল চক্রী মাসুদ আজহারের পাশে গত কাল দাঁড়িয়েছিলেন পাক রাষ্ট্রদূত আব্দুল বসিত। আজ সেই মাসুদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করল ভারতের আদালত। ওই জঙ্গি নেতাকে নিয়ে পাকিস্তানকে চাপ দিতে এই পরোয়ানাকেই ব্যবহার করতে চাইছে দিল্লি। জইশ প্রধানকে নিষিদ্ধ করতে সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জে আর্জি জানিয়েছিল ভারত। কিন্তু মিত্র দেশ পাকিস্তানের অনুরোধে সেই আর্জি নিয়ে আপত্তি তোলে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চিন। ফলে ভেস্তে যায় ভারতের উদ্যোগ। গত কাল আব্দুল বসিত জানিয়েছেন, এই বিষয়ে চিনের পদক্ষেপকে পাকিস্তান সমর্থন করে।
তার পরেই আজ আজহারের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির জন্য মোহালির বিশেষ আদালতে যায় এনআইএ। মাসুদ ছাড়াও পরোয়ানা জারি হয়েছে তাঁর ভাই আব্দুল রউফ এবং অন্য দুই জইশ জঙ্গি কাসিফ জান ও শাহিদ লতিফের নামে। এনআইএ-র অভিযোগ, শেষ দু’জন পঠানকোট হামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই পরোয়ানাকে অস্ত্র করে দু’ভাবে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে চায় দিল্লি। প্রথমত মাসুদকে নিষিদ্ধ করতে ফের রাষ্ট্রপুঞ্জে আর্জি জানাবে তারা। সেখানে পঠানকোট হামলায় মাসুদের যুক্ত থাকা নিয়ে সওয়াল করার সময়ে ওই পরোয়ানা পেশ করা হবে। তাতে পাকিস্তান ও চিনের মুখোশ খুলে দেওয়া সহজ হবে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। আবার পঠানকোট হামলায় ব্যবহৃত বিদেশি অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে তদন্তে এফবিআই-সহ বিভিন্ন বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সাহায্য চেয়েছে এনআইএ। ওই ঘটনায় জঙ্গিদের হাতে থাকা কালাশনিকভ রাইফেল, গ্রেনেড-সহ বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র সহজেই আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে পাওয়া যায় বলে  মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। সেগুলি সম্পর্কে আরও তথ্য পেলে পাক-যোগ প্রমাণ করা সহজ হবে। সে কাজেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাহায্য চেয়েছে এনআইএ। কারণ, তালিবান-আল কায়দার মোকাবিলা করার সময়ে ওই এলাকায় অস্ত্রশস্ত্রের বাজার নিয়ে প্রচুর তথ্য হাতে এসেছে আমেরিকার। এনআইএ ইতিমধ্যেই ওই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক দফা তথ্য মার্কিন গোয়েন্দাদের কাছে পাঠিয়েছে। তদন্তের স্বার্থেই মাসুদের বিরুদ্ধে পরোয়ানার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারেরা। এ দিন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পঠানকোট পর্ব ছাড়াও দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। গত কালই কাশ্মীরের সোপিয়ানে নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে হিজবুল মুজাহিদিনের দুই শীর্ষ জঙ্গি। দিন কয়েক আগেই পঞ্জাব পুলিশ জানায়, দিল্লি, মুম্বই ও গোয়ায় আক্রমণ শানাতে কাশ্মীরে ঢুকেছে তিন আত্মঘাতী জঙ্গি। হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে ওড়িশাতেও। সূত্রের খবর, বৈঠকে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দ্রুত তথ্য আদানপ্রদানের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। পঞ্জাবের নির্বাচনের আগে সে রাজ্যে জঙ্গি হামলার সম্ভাবনা বাড়বে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কাশ্মীর উপত্যকায় গরম পড়তেই আগামী কয়েক মাসে জঙ্গি অনুপ্রবেশ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা।