শ্রীনিবাস হত্যা: ওর জন্যই আমি বেঁচে, নিহত বন্ধুর প্রার্থনাসভায় আবেগাপ্লুত আহত অলোক
হিউস্টন: মার্কিন নাগরিকের হাতে বিদ্বেষমূলক হামলার শিকার ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস কুচিভোটলার হত্যার প্রতিবাদে সোমবার কানসাস সিটিতে শান্তি মিছিল ও প্রার্থনায় অংশ নিলেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ। তাঁদের হাতে প্ল্যাকার্ড, যাতে ছিল শান্তির বার্তা। ছিলেন নিহতের বন্ধু তথা হামলায় আহত অলোক মাদসানি।
মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন পোস্টার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও ছবি। তাঁদের মুখে ছিল স্লোগান, ‘আমরা শান্তি চাই, শান্তি ভালবাসি। একতাই আমাদের শক্তি...’ আবার অনেকের হাতে ছিল মোমবাতি। সেখানে লেখা ছিল, ‘আমরা ঘৃণার রাজনীতি চাই না।’
এদিনের মিছিল করে বিশেষ প্রার্থনার জন্য কানসাসের হিন্দু মন্দির ও সংস্কৃতি সকলে সমবেত হন। সেখানে উপস্থিতদের সামনে বক্তব্য পেশ করেন শ্রীনিবাস, যিনি বুধবারে ঘটনার সময় নিহতের সঙ্গেই ছিলেন। ওই হামলায় শ্রীনিবাস মারা গেলেও, কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচে যান অলোক। তবে, গুরুতর জখন হন। এদিন ক্রাচ নিয়ে হাঁটতে দেখা যায় তাঁকে।
বন্ধুর কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অলোক। দীর্ঘ নয় বছরের বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, শ্রীনির মত দয়ালু ব্যক্তি খুব কমই দেখা যায়। ওর মধ্যে সকলের জন্য ভালবাসা, সমবেদনা, যত্ন ছিল। ওকে কখনই কোনও বিদ্বেষমূলক, জল্পনা বা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে শুনিনি। ও সবসময় চাইত যাতে সকলে ভাল থাকুক।
এখানেই থেমে থাকেননি অলোক। জানান, কীভাবে, নিজের প্রাণ দিয়েও তাঁর জীবন বাঁচিয়েছেন শ্রীনিবাস। বলেন, আজ তো এখানে ওর থাকার কথা ছিল, আমার নয়। আজ আমি এখানে (বেঁচে) শুধুমাত্র আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুর জন্যই। অলোক যোগ করেন, শ্রীনি নেই, এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না। অলোকের মতে, সেদিন রাতে যা ঘটেছে, তা কখনই কাঙ্খিত নয়, তবুও সেটাই ঘটল।
এদিনের প্রার্থনাসভায় উপস্থিত ছিলেন হামলায় জখম হওয়া আরেক জন—মার্কিন নাগরিক ইয়ান গ্রিলট ও তাঁর পরিবার। উপস্থিত ছিলেন কানসাসের লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেফ কলিয়ার, মার্কন কংগ্রেসের সদস্য কেভিন ইয়োডার, ওলাথেক মেয়র মাইক কোপল্যান্ড ও পুলিশ প্রধান স্টিভেন মেঙ্কে সহ বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকরা।
এদিনের প্রার্থনাসভায় উপস্থিত ছিলেন সব ধর্মের মানুষ। হিন্দু, মুসলিম, ক্রিশ্চান, ইহুদি ও শিখ প্রার্থনাসভা শুরু হয়। শেষ হয় জন লেননের বিখ্যাত গান – ইম্যাজিন দিয়ে।
গত বুধবার, কানসাস সিটির একটি পানশালায় বিদ্বষমূলক হামলায় মৃত্যু হয় শ্রীনিবাসের। তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে প্রাক্তন মার্কিন নৌসেনা কর্মী অ্যাজাম পুরিনটন। তার আগে, শ্রীনিবাস ও তাঁর সঙ্গীকে বর্ণবিদ্বেষমূলক গালাগালি করে আততায়ী। শুধু তাই নয়, শ্রীনিবাসদের উদ্দেশ্যে সে ‘বেরিয়ে যাও আমার দেশ থেকে’ ও ‘তোমরা জঙ্গি’ জাতীয় মন্তব্যও করে বলে জানা গিয়েছে।