আলিপুরদুয়ার: বন্ধুকে খুনের পর মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণের নাটক, গ্রেফতার ৩
নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে নিহতের বাবার সঙ্গে অভিযুক্ত থানায় যায় অভিযোগ দায়ের করতে...
আলিপুরদুয়ার: প্রতিবেশী বন্ধুকে খুনের পর মুক্তিপণ চেয়ে অপহরণের নাটক। এমনকী অপহরণের অভিযোগ দায়ের করতে মৃতের পরিবারের সঙ্গে থানায় হাজির। যদিও, তাতেও শেষরক্ষা হল না। শেষমেশ, পুলিশের প্রশ্নের ফাঁদে কবুল খুনের ঘটনা। গ্রেফতার ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত সেই বন্ধু সহ তিন যুবক।
আলিপুরদুয়ার জেলার বীরপাড়া থানার অন্তর্গত সিংহানিয়া চা বাগান এলাকার হাটখোলার এই ঘটনায় উত্তেজনা। জানা গিয়েছে, মৃত যুবক ইন্দ্র সুরি (২২) বীরপাড়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। প্রতিবেশী প্রধান অভিযুক্ত সাহাবাজ আলির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বই ছিল।
এমনকি পরিবারসূত্রে জানা যায়, শুধু তাদের গাড়ির চালক হিসেবে কাজ করাই নয়, অভিযুক্ত যুবক বেশিরভাগ সময় তাদের বাড়িতেই সময় কাটাত। কিন্তু এই বন্ধুত্বের পেছনে যে ষড়যন্ত্র রয়েছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি পরিবার।
পরিবারসূত্রে অভিযোগ, গতকাল সকাল দশটা নাগাদ অভিযুক্ত ইন্দ্রকে ফোন করে পাওনা টাকা দেওয়ার নাম করে বীরপাড়ায় ডেকে নেয় সাহাবাজ।
সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় অভিযুক্তের আরও এক সঙ্গী। এরপর তিনজন চলে যায় মাদারিহাটের খয়েড়বাড়ি জঙ্গল এলাকায়।
অভিযোগ, সেখানেই অভিযুক্তরা ইন্দ্রকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে কুপিয়ে মেরে জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যায়। এরপরেই শুরু হয় অভিযুক্তের নাটক।
পরিবারের অভিযোগ, প্রধান অভিযুক্ত সাহাবাজ খুনের পরেই মৃতের বাড়িতে যায় বন্ধুর মিথ্যে খবর নিয়ে। অভিযোগ, সেই সময় অভিযুক্ত কাউকে দিয়ে মৃতের পরিবারে ফোন করায় ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপন চেয়ে।
কিন্তু, চা বাগান এলাকার সামান্য ব্যাবসায়ী বাবার সেই ক্ষমতা না থাকায় পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। নিজের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে ইন্দ্রর বাবার সঙ্গে থানায় যায় সাহাবাজও।
কিন্তু বীরপাড়া থানায় পরিবারের বয়ানের পর পুলিশের জেরার মুখে পড়ে যায় অভিযুক্ত। লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন ধড়া পড়ে অভিযুক্তের বয়ানে।
এরপর, নিজের মুখেই খুনের ঘটনা স্বীকার করে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পুলিশ এই ঘটনায় সাহাবাজের পাশাপাশি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকা আরও ২ জন সহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করে।
এরপরই উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তের বাড়িতে হামলা চালায়। আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও হয় বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
অভিযুক্ত তিনজনকে আজ বিকেলে আলিপুরদুয়ার আদালতে হাজির করা হলে তাদের ৫ দিনের হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তির দাবি করে মৃত ইন্দ্র সুরির পরিবার।
আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি জানান, উদ্ধার হয়েছে খুনে ব্যাবহৃত ধারালো অস্ত্র। মূলত, টাকা সংক্রান্ত লেনদেনের জেরেই এই খুন বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা।