Whistling Village: শিস দিয়ে যায় চেনা ! নামে নয়, সুরে সুরেই চেনা যায় এই গ্রামের মানুষদের
Kongthong Village: মেঘালয়ের এই গ্রামে রয়েছে এক বিশেষ রীতি। এই গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কাউকে নাম ধরে ডাকে না। কথাও বলে না সাধারণ ভাষায়। ভাষা নেই, শব্দ নেই, আছে শুধু সুর। সুরে আর শিসেই যায় চেনা!
কলকাতা: ভারতের মাঝেই এ এক অদ্ভুত গ্রাম। কোনও মানুষের নাম নেই এই গ্রামে। কারও নাম কেউ জানে না। কাউকে নাম ধরে ডাকতে শোনা যায় না এই গ্রামে। শোনা যায় অদ্ভুত এক সুর। আলাদা আলাদা সুর। সুরেই পরিচয় মানুষের। সুরেই চেনা যায় বাসিন্দাদের। কাউকে ডাকতে গেলে একটা নির্দিষ্ট সুরে শিস দিতে হয় মুখ দিয়ে, ব্যাস সেই আকাঙ্ক্ষিত মানুষটি তাতেই সাড়া দেবেন। আর এই জন্যে গোটা গ্রামটার নামই হয়ে গিয়েছে শিস গ্রাম, ইংরেজিতে Whistling Village।
মেঘালয়ের কংথং (Kongthong)। খাসি পাহাড়ের পূর্বদিকের কোলে একটি ছোট্ট গ্রাম এই কংথং। এই গ্রামের মানুষ বহুদিন ধরেই এই বিশেষ পদ্ধতিতে ডাক দেন তাঁদের প্রতিবেশী, আত্মীয়দের। নামে নয়, গ্রামের অন্য মানুষদের কোনও কিছু বলার হলে তাঁরা এক বিশেষ সুরের সাহায্যে শিস দিয়ে সেই বার্তা পাঠান। সেই গ্রামের স্থানীয়দের ভাষায় একে বলা হয় 'জিঙ্গরওয়াই লোবাই' অর্থাৎ মায়ের ভালবাসার গান। গ্রামবাসীদের প্রত্যেকেরই এখানে দুটি করে নাম। একটি তাদের সাধারণ পিতৃপরিচয় বহনকারী নাম আর অন্যটি শিসের (Tune or Melody) নাম বা গানের নাম। আবার এই গানের নামেরও দুটি আলাদা ধরন রয়েছে। একটি হল দীর্ঘ গান আর অন্যটি হল সংক্ষিপ্ত গান। মূলত নিজের নিজের বাড়িতে সম্বোধনের সময় এই সংক্ষিপ্ত গানের ব্যবহার হয়ে থাকে আর বাইরে কর্মক্ষেত্রে বা সমাজে অন্যদের সঙ্গে বার্তালাপের সময় ব্যবহৃত হয় দীর্ঘ গানের সুর। জানা গিয়েছে গ্রামের ৭০০ মানুষ ৭০০টি পৃথক সুর ব্যবহার করে থাকেন।
গ্রামে (Whistling Village) শিশুর জন্ম হলে শিশুর মা প্রথম তার একটি নির্দিষ্ট গানের নাম দেন। পরে সব মানুষই শিশুটিকে সেই নামে ডাকতে থাকে। অদ্ভুত সংস্কৃতি! অদ্ভুত সুরের জাদু! স্থানীয়দের কাছ থেকেই জানা যায় যে যদি সেই গ্রামে কোনও মানুষ মারা যান, তাহলে তার নামের যে সুর, সেই মানুষটির সঙ্গে সঙ্গে সেটিও মারা যায়। সেই সুর আর খুঁজে পাওয়া যায় না গ্রামের আনাচে কানাচে। বংশ পরম্পরা ধরে এই সুর বাহিত হয়ে আসছে গ্রামের মানুষদের মধ্যে। রীতির মধ্যে ওই গ্রামের সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে পড়েছে এই সুরের জাদু, নামের সুর! সুরের নাম!
২০১৯ সালে বিহারের রাজ্যসভার সাংসদ রাকেশ সিনহা এই গ্রামের জন্য এই গ্রামের নামে একটি ইউনেস্কো ট্যাগের জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারপরে ২০২২ সালে এই গ্রামটি দ্য ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের সমীক্ষায় 'সেরা পর্যটন গ্রাম' (Best Tourism Village) হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। সময় বয়ে গিয়েছে, রয়ে গিয়েছে সুর। নাম নয়, মেঘালয়ের এই গ্রামে আজও সুরে সুরেই জানা হয় মনের কথা।
আরও পড়ুন: চাঁদের দেশ থেকে ফেরার সময় মহাকাশযানের ভিতর থেকে অনুভব ঠিক কেমন ? দেখুন ভিডিও