Andes Mountains Shrinking: জলবায়ু পরিবর্তনের জের, একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছে আন্দিজ পর্বতমালা
Climate Change: বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে তাকে ঢেকে রাখা হিমবাহ সরে যাচ্ছে একটু একটু করে।
নয়াদিল্লি: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা, আন্দিজ পর্বতমালাও। নিত্যদিন তাপমাত্রা যত বাড়ছে, ততই গুটিয়ে যাচ্ছে আন্দিজ পর্বতমালার এক একটি শৃঙ্গ। আন্দিজ পর্বতমালার অন্যতম শৃঙ্গ, এল প্লোমোর উচ্চতা ৫ হাজার ৪০০ মিটার। চিলের রাজধানী সান্টিয়াগো থেকে স্পষ্ট দেখা যায় তার তার বরফে ঢাকা শৃঙ্গ। যুগ যুগ ধরে ওই পর্বত শৃঙ্গ হয়েই পর্বতারোহীদের আনাগোনা। (Andes Mountains Shrinking) কিন্তু লাগাতার তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে গলে যাচ্ছে ওই পর্বতের হিমবাহ, তার দরুণ পাল্টে যাচ্ছে রূপ, আকৃতি ও গড়ন।
কিন্তু যত দিন যাচ্ছে উচ্চতা কমছে এল প্লোমোর। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে তাকে ঢেকে রাখা হিমবাহ সরে যাচ্ছে একটু একটু করে। এমনকি চিরকালীন যে বরফের যে চাদর ঢেকে রেখেছিল পর্বতটিকে, গলে যাচ্ছে একটু একটু করে। এমনকি বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে বরফ গলে ছোট ছোট হ্রদ তৈরি হয়েছে। একাধিক জায়গায় মাটির স্তর ফেটে গিয়েছে। লাগাতার ধসের জেরে বড় বড়র গর্ত তৈরি হয়েছে পর্বতের গায়ে। পর্বতে ওঠার যে পুরনো রাস্তাটি ছিল, সেটি ধসে গিয়েছে। (Climate Change)
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৬০ বছর বয়সি পর্বতারোহী ফ্রান্সিসকো গালার্দো বলেন, "প্রত্যেক বছরই অনেক কিছু পাল্টে যাচ্ছে। কষ্ট বাড়ছে প্রতি বছর।" ১৪ বছর বয়স থেকে পর্বত আরোহন করছেন ফ্রান্সিসকো। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই কাজই করেছ। কিন্তু আগামী এক দশকের মধ্যেই তাঁদের অন্য পেশা খুঁজতে হবে বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সিসকো।
A @Reuters team climbed with guides around the Andes to gather testimony through the eyes of mountaineers about how the world’s longest and most diverse mountain range is undergoing unprecedented changes linked to a warmer global climate https://t.co/TL3Hc8siea pic.twitter.com/w5eweh1vUT
— Reuters (@Reuters) July 18, 2024
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত চড়ায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে আস্ত হিমবাহ অতিক্রম করতে হতো পর্বতারোহীদের। এখন চূড়ায় পৌঁছনোর রাস্তা পাথুরে। আন্দিজ পর্বতমালা এবং মেরুপ্রদেশর হিমবাহ নিয়ে পড়াশোনা করা পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পাবলো ওয়েনস্তেইন বলেন, "মানব সভ্যতার সাম্প্রতিক ইতিহাসে যে পরিবর্তনগুলি দেখছি, তা অভূতপূর্ব।"
ফি বছর পর্বত অভিযানে বেরনো ওসভাল্দো সেগুন্দো ভিলেগাস জানিয়েছেন, ১৯৬৪ সালে উরুগুয়ের রাগবি টিমের উদ্ধারকার্যে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এখন ৮০ বছর বয়স তাঁর। ওসভাল্দো জানিয়েছেন, ছয়ের দশকে প্রথম এল প্লোমোয় ওঠেন তিনি। সেই সময় হিমবাহের পুরু চাদর ঢেকে ছিল পর্বতটিকে। ঝুলন্ত হিমবাহ ছিল এদিক ওদিক। বর্তমানে শুধু প্রস্তরখণ্ড চোখে পড়ে। আগে যেখানে হিমবাহ ছিল, এখন সেখানে জঙ্গল তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আন্দিজ পর্বতমালায় পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ ক্রান্তীয় হিমবাহের অবস্থান। ওই অঞ্চলের জলচক্রের জন্যও আন্দিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শীতকালে বরফের আকারে জল ধরে রাখে আন্দিজ, গরমে যা নদীতে গিয়ে জমা হয়। সেই জল কৃষিকাজে লাগে যেমন, পানীয় জল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং খনির কাজও চলে ওই জলেই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে সেই বরফেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে।
আমেরিকার National Oceanic And Atmospheric Administration (NOAA) জানিয়েছে, ১৮৫০ থেকে প্রতি দশকে ০.০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮২ সাল থেকে সেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি এসে দাঁড়িয়েছে ০.২০ সেলসিয়াসে। শুধু তাই নয়, International Journal of Applied Earth Observation and Geoinformation-এ প্রকাশিত গবেষণাপত্র বলছে, উচ্চতা অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার আরও বেশি। ২০০০ সাল থেকে শীতকালে দিনের বেলায় আন্দিজের নীচের অংশে, ১০০০-১৫০০ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা ০.৫০ সেলসিয়াস করে বাড়ছিল। ওই একই সময়ে ৫০০০ মিটার উচ্চতায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছিল ১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে।