Sourav Ganguly: অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপন কেন? পাশে দাঁড়িয়েও সৌরভকে তীব্র কটাক্ষ প্রাক্তন সিএবি কর্তার
Sourav Ganguly-Biswarup Dey: ২০১৪ সালে সৌরভ যখন সিএবি সচিব হন, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট তখন জগমোহন ডালমিয়া। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন বিশ্বরূপ। যুগ্মসচিব ছিলেন সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়।
কলকাতা: একটা সময় দুজনের সম্পর্ক বঙ্গ ক্রিকেট যাবতীয় চর্চার কেন্দ্রে ছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly) ও বিশ্বরূপ দে (Biswarup Dey)। একজন পোড়খাওয়া ক্রিকেট প্রশাসক। অন্যজন তখন সদ্য ক্রিকেট প্রশাসনে প্রবেশ করেছেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবে যেদিন সৌরভের অপসারণ কার্যত নিশ্চিত হয়ে গেল, সেদিন কিংবদন্তি ক্রিকেটারের পাশে দাঁড়ালেন অধুনা রাজনীতিতে যোগ দেওয়া বিশ্বরূপ। সেই সঙ্গে ছুড়ে দিলেন কটাক্ষও।
প্রাক্তন সিএবি কর্তা বিশ্বরূপ বলছেন, 'অনেকেই জানতে চাইছেন, সৌরভ আর বোর্ড প্রেসিডেন্ট না থাকায় আমি খুশি নাকি অখুশি? আমার উত্তর খুব সহজ। বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বিচারে আমি অখুশি। কারণ বাংলার কোনও প্রতিনিধি যখন প্রশাসন বা অন্য কোনও ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে আসেন, বা তাঁকে যখন সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা একজন প্রকৃত বাঙালির কাছে সুখকর হতে পারে না। একজন বাঙালি হিসেবে যে ভাবে চক্রান্ত করে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সৌরভকে সরিয়ে দেওয়া হল, তার নিন্দা করি আমি।'
পাশাপাশি তীব্র কটাক্ষও করেছেন বিশ্বরূপ। জানিয়েছেন, নিজের সুবিধার্থে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শরণাপন্ন হয়েছেন সৌরভ। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, অন্তর্বাসের বিজ্ঞাপন করা বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেমানান। এমনকী, আইসিসি চেয়ারম্যান পদে ভবিষ্যতে যদি সৌরভকে দেখা যায়, সেক্ষেত্রে এরকম বিজ্ঞাপনী প্রচার করে নিজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না করার আবেদনও করেছেন বিশ্বরূপ।
২০১৪ সালে সৌরভ যখন সিএবি সচিব হন, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট তখন কিংবদন্তি ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া। কোষাধ্যক্ষ ছিলেন বিশ্বরূপ। যুগ্মসচিব ছিলেন সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৫ সালে জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর নবান্নে দাঁড়িয়ে, রীতিমতো ছক ভেঙে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন যে, সিএবি প্রেসিডেন্ট হবেন সৌরভ। সচিব হবেন অভিষেক ডালমিয়া। প্রেসিডেন্ট পদের অন্যতম দাবিদার বিশ্বরূপ ও সুবীরকে নিজেদের পদেই বহাল রাখার কথা বলেন মমতা। যা নিয়ে তোলপাড় হয়। সৌরভ বিরোধী গোষ্ঠীর প্রধান মুখ হিসাবে পরিচিত বিশ্বরূপ ও সুবীর তার আগে পর্যন্ত দাবি করেছিলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে সিএবি-র মসনদ কার দখলে থাকবে তা নির্ধারিত হোক। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর তাঁরা নিজ নিজ পদে থেকে যেতে কার্যত বাধ্য হন।
পরে লোঢা কমিটির সুপারিশে বোর্ড তথা সিএবি-র গঠনতন্ত্র সংশোধনের পর দেখা যায়, বিশ্বরূপ ও সুবীর, দুজনই রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় ৯ বছর সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন। যে কারণে তাঁদের সরে যেতে হয়। কিন্তু সৌরভের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের বরফ গলেছিল বলে শোনা যায় না। বরং এখনও তাঁরা সৌরভ-বিরোধী হিসাবেই পরিচিত। এবং সিএবি-র আসন্ন নির্বাচনের ঘুটি সাজাতে ব্যস্ত দুজনই। সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলেও তাঁদের পছন্দের প্রার্থীকে পদাধিকারী করার অঙ্ক কষা শুরু হয়ে গিয়েছে।
পরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন বিশ্বরূপ। কাউন্সিলরও হন। সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদ থেকে যেদিন কার্যত ছেঁটে ফেলা হল, সেদিন বিশ্বরূপ সোশ্যাল মিডিয়ায় লম্বা পোস্ট করেন। লেখেন, 'বছর তিনেক আগে বিজেপির হাত ধরে (পড়তে হবে অমিত শাহ-র হাত ধরে) ব্রিজেশ পটেলকে হঠিয়ে, রাতারাতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। অথচ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ব্রিজেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রিজেশের বদলে সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করা হয় শুধুমাত্র ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। ঠিক একইরকমভাবে আমার গুরু শ্রদ্ধেয় জগমোহন ডালমিয়ার আকস্মিক প্রয়াণের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে গিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ।'
বিশ্বরূপ প্রশ্ন তুলেছেন, 'সিএবি নির্বাচন এড়িয়ে এ ভাবে ঘুরপথে তখন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বের পক্ষে খুব মাননসই ছিল কি?' যোগ করেছেন, 'অতীতে বাম আমলে সৌরভ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অশোক ভট্টাচার্যের কতটা কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন সেটা সকলেরই জানা। আসলে কোনও বাঙালি নতজানু হয়ে কোনও পদে আসীন হলে, সেটা সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই প্রবল লজ্জার হয়। সৌরভ যদি নিজের প্রশাসনিক যোগ্যতায় (ক্রিকেটার হিসেবে যাঁর যোগ্যতা তর্কাতীত ভাবে প্রণিধানযোগ্য) বিসিসিআই ও সিএবি প্রেসিডেন্ট হতেন, আজ এভাবে তাঁর অপসারণ ঘটত না বোর্ড থেকে। আসলে রাজনীতিবিদদের হাত ধরে ঘুরপথে ক্ষমতায় আসলে পরিণতি এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক।'
তবে সৌরভের আইসিসি চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করছেন না ক্রিকেট প্রশাসনে তাঁর একদা প্রতিপক্ষ বিশ্বরূপ। যিনি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। কিছুটা শ্লেষ মিশিয়ে বিশ্বরূপ বলেছেন, 'একজন বাঙালি হিসেবে আগামীদিনে তোমাকে আইসিসি-র চেয়ারম্যান পদে দেখতে চাই। শুধু একটাই অনুরোধ। আইসিসি চেয়ারম্যান হলে দয়া করে গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, মোজা এসবের বিজ্ঞাপন কোরো না। এতে ক্রিকেটের ও প্রসাশক পদের গরিমা নষ্ট হয়।'
সৌরভ এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি।
আরও পড়ুন: বোর্ডে সৌরভের ব্রাত্য হওয়ার মঞ্চেই আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলে ঢোকার পথে অভিষেক