East Bengal vs Chennaiyin FC: উদ্বেগের কারণ পরিবেশ ও শারীরিক ফুটবল, সমর্থকদের জন্যই চেন্নাইয়িনকে হারাতে চান ইস্টবেঙ্গল কোচ
East Bengal: আইএসএলে বর্তমানে প্রতিটি ম্যাচেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে, তাই অ্যাওয়ে ম্যাচে চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে মাঠে নামা নিয়ে বিন্দুমাত্র উদ্বিগ্ন নন লাল হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোন।
চেন্নাই: অষ্টম ম্যাচে চলতি লিগের প্রথম জয় পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাস ফিরে এলেও ইস্টবেঙ্গল শিবিরের চিন্তা এখন চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে (East Bengal vs Chennaiyin FC) শনিবারের অ্যাওয়ে ম্যাচ। প্রতিপক্ষ তো বটেই, লাল-হলুদ বাহিনীকে চিন্তায় রাখছে তাদের শহরের আবহাওয়াও।
আট ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের একেবারে নীচে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে ওপরে উঠতে হলে এখন পরপর ম্যাচ জিততে হবে। জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পথে শনিবার প্রধান বাধা চেন্নাইয়িন এফসি-র শারীরিক ফুটবল। তবে সঙ্গে চেন্নাই শহরের ভিন্ন আবহাওয়াও তাদের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন তাদের নয়া স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন (Oscar Bruzon)।
চেন্নাইয়ে উড়ে যাওয়ার আগে কলকাতায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'আইএসএলে প্রায় প্রতি ম্যাচেই যে রকম ওপেন রেজাল্ট হচ্ছে, তাতে হোম-অ্যাওয়ের মধ্যে তেমন কোনও তফাৎ থাকছে না। চেন্নাইয়ের মাঠে খেলার অপেক্ষায় ছিলাম আমি। কারণ, এখানকার আবহাওয়া, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা অন্যান্য শহরের চেয়ে আলাদা। তাই এখানে আমাদের একটু অসুবিধা হতে পারে। এখানে সেরা খেলা দেখানো সোজা নয়। সে জন্য আমাদের উপযুক্ত কৌশল অবলম্বন করতে হবে'।
দক্ষিণী শহরে এখন দিন ও রাতের উষ্ণ তাপমাত্রার মধ্যে খুব একটা তফাৎ নেই। সদ্য ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব সামলানো এই শহরের গড় আর্দ্রতাও এখন ৮০%-এর আশে পাশে থাকছে। যার ফলে ফুটবলারদের কম সময়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকছে। এই সমস্যার সমাধান হঠাৎ করে শারীরিক সক্ষমতা বাড়িয়ে করা সম্ভব নয়। এর জন্য বিশেষ কৌশলই প্রয়োজন এবং সেই কৌশলই অবলম্বন করতে চান অস্কার।
গত দু’টি ম্যাচে জয়হীন চেন্নাইয়িন এফসি-ও যে প্রতিপক্ষ হিসেবে কঠিন, তাও সাফ জানিয়ে দিলেন লাল-হলুদ কোচ। বলেন, 'চেন্নাইয়িন এফসি ভাল দল। ওরা একজন ভাল কোচ পেয়েছে। সম্ভবত আইএসএলের সেরা তিন কোচের একজন তিনি। তবে ওরা শারীরিক ফুটবল খেলে। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ওদের খেলা আমি দেখেছি। চেন্নাইয়িনের শক্তি-দুর্বলতা বিশ্লেষণ করেছি। আমরা যদি অধিকাংশ বলের দখল আমাদের কাছে না রাখতে পারি, গোলের সুযোগ যদি ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারি, ওদের সেটপিসের সুযোগ দিই, তা হলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে আমাদের। এগুলো এড়িয়ে অন্যরকম কিছু করতে হবে আমাদের'।
তা হলে কী করতে হবে তাদের? কোচের জবাব, 'সম্প্রতি ওরা ভাল ফল পায়নি বলে ঘরের মাঠে পুরো তিন পয়েন্ট তুলে সমর্থকদের সন্তুষ্ট করার সুযোগ ওরা অবশ্যই কাজে লাগাতে চাইবে। আমরাও ভাল পারফরম্যান্স বজায় রাখতে চাই। ম্যাচে লড়াই হবে। আমাদের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোতে আরও নিখুঁত হতে হবে, পুরোপুরি মনসংযোগ বজায় রাখতে হবে'।
কিন্তু তাঁর দলের চার বিদেশী হেক্টর ইউস্তে, হিজাজি মাহের, সল ক্রেসপো ও ক্লেটন সিলভা যেখানে তিনটি করে হলুদ কার্ড দেখে রয়েছেন, সেখানে দুশ্তিন্তায় পড়ার মতো আরও বিষয় রয়েছে অস্কারের কাছে। পরের ম্যাচ আরও কঠিন প্রতিপক্ষ ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে। তবে এই ব্যাপারে ইতিবাচক থাকতে চান অস্কার। বলেন, 'ফুটবলে কার্ড সমস্যা, চোট-আঘাত থাকেই। আমি ব্যাপারটা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখি। আমাদের আরও খেলোয়াড়রা আছে, যাদের মাঠে নামার সুযোগ হবে। যেমন নিশুর কথা বলছিলেন, বিষ্ণুর কথাও উঠেছিল গত ম্যাচের আগে। ওকে আমরা সুযোগ দেব বলেছিলাম, দিয়েছি। ও খুব ভাল পারফরম্যান্স দেখিয়েছে সেই ম্যাচে'।
বিদেশীদের কার্ড-আতঙ্ক নিয়ে কোচ বলেন, 'জানি আমাদের বিদেশী ফুটবলারদের তিনটি করে হলুদ কার্ড হয়ে রয়েছে। ম্যাচের মধ্যে খেলতে খেলতে এগুলো হতেই পারে। তবে অযথা কার্ড হওয়ার মতো কিছু না করারই পরামর্শ দেব আমার দলের খেলোয়াড়দের। কিন্তু ওদের (চেন্নাইয়িন) আক্রমণের ধরন যে রকম, ওদের ১০ নম্বর যে ভাবে কাউন্টার অ্যাটাকে ওঠার সময় শারীরিক আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টা করে, তাকে আটকাতে গেলে সব সময় কৌশল অবলম্বন করা যায় না। তবে আশা করি, কাল আমরা ট্যাকটিক্সের মাধ্যমেই ওদের আটকাতে পারব'।
সমস্যা আরও আছে। তাদের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে সম্ভবত ফের চোট পেয়েছেন। ফলে এই ম্যাচে অনিশ্চিত। কোচ যদিও তাঁকে বৃহস্পতিবার অনুশীলনে ছুটি দিয়েছিলেন বিশ্রাম দেওয়ার জন্য। কিন্তু শুক্রবার চেন্নাই রওনা হওয়ার আগে তাঁকে নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
দল যে এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল অবস্থায় চলে এসেছে, তেমনই দাবি করে অস্কার বলেন, 'খেলোয়াড়রা এখন বলছে, আমরা এখন ভাল অবস্থায় রয়েছি। আইএসএলের অন্য দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করার মতো ও তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার অবস্থায় চলে এসেছি। আমার সৌভাগ্য যে দলকে এই অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছি। সে জন্য নতুন নতুন আইডিয়া তৈরি করতে হচ্ছে। প্রতি অনুশীলনে দলের ছেলেদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়তে হচ্ছে'।
গত ম্যাচে নন্দকুমার শেকর, নাওরেম মহেশদের ছাড়াই দল প্রথম জয় পায় নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র মতো ভাল ফর্মে থাকা দলের বিরুদ্ধে। তাই কোচ মনে করেন, তাঁর দলে এখন ভাল বিকল্প খেলোয়াড়ের অভাব নেই। বলেন, 'যখন দলের মধ্যে নন্দ, মহেশের মতো ভাল খেলোয়াড়দের প্রতিদ্বন্দ্বী চলে আসে বা প্রতিটি পজিশনে খেলার জন্য ২-৩ জন করে সব সময় নিজেদের মধ্যে লড়াই করে, তখনই পারফরম্যান্সের প্রশ্ন আসে। পারফরম্যান্স শুধু ম্যাচে নয়, রোজকার অনুশীলনেও। এই পারফরম্যান্সেই খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসের স্তর ওঠা-নামা করে। আমাদের দলে যারা ভাল পারফরম্যান্স করে, তারাই দল বাছাইয়ে গুরুত্ব পায়। তার ফল তো গত ম্যাচেই পাওয়া গিয়েছে'।
দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার জিকসন সিংও মনে করেন তাঁদের দলের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভাল। তিনি নিজেও কোচের নির্দেশ মেনে যে কোনও পজিশনে খেলতে রাজি। বলেন, 'গত ম্যাচের পজিশনে আমি সাধারণত খেলি না। তবে কোচের নির্দেশ মেনেই খেলতে চাই। উনি আমাকে যে ভূমিকা পালন করতে বলবেন, সেই ভূমিকাই পালন করব। দলের জন্য সব সময় নিজের সেরাটা দিতে চাই। চেন্নাইয়িন সত্যিই খুব ফিজিক্যাল ফুটবল খেলে। ওদের আটকাতে গেলে আমাদের সেরাটা উজাড় করে দিতেই হবে। আশা করি, আমরা পারব। কারণ, আমাদের দলের অবস্থা এখন অনেক ভাল। আত্মবিশ্বাসের স্তরও বেড়েছে'।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: জিততে মরিয়া মহামেডান, তিন পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান, বেঙ্গালুরুর ওপর চাপ বাড়াতে আগ্রহী পাঞ্জাব