East Bengal: ব্যক্তিভিত্তিক নয়, দলগত ফুটবলেই মিলেছে লিগের প্রথম জয়, নর্থইস্টকে হারিয়ে দাবি ইস্টবেঙ্গল কোচের
ISL 2024-25: মরশুমের প্রথম জয় পেলেও, লিগ তালিকায় কিন্তু কোনও প্রভাব পড়েনি। নর্থইস্ট সেই তিনেই রয়েছে, ইস্টবেঙ্গল রয়েছে ১৩ নম্বরে।
কলকাতা: গত দুই ম্যাচে তাঁর দল যে ভাবে মাঠে এককাট্টা হয়ে খেলেছে, সে ভাবেই খেলে যেতে চান ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন (Oscar Bruzon)। তাঁর মতে, এই দলগত ফুটবলই তাদের সাফল্য এনে দিতে পারে। শুক্রবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নর্থইস্ট ইউনাইটেডকে (East Bengal vs NorthEast United) ১-০-য় হারানোর পর এই কথাই বলেন লাল-হলুদ বাহিনীর স্প্যানিশ কোচ।
গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে খেলতে পারেননি দলের দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ সিংহ। নন্দর জায়গায় পিভি বিষ্ণু ও মহেশের জায়গায় জিকসন সিংহকে প্রথম দলে রাখেন অস্কার। দুই নির্ভরযোগ্য সদস্যকে ছাড়াই যে উজ্জীবিত ফুটবল খেলে তাঁর দল, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই দলগত ফুটবলই আইএসএলে আট ম্যাচ পর জয় এনে দিল তাদের। ম্যাচের পর দলের রক্ষণভাগ ঠিক রাখাটা কতটা জরুরি, তা ম্যাচ উইনার দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস কথাতেও ধরা পড়ে।
দলের এক নম্বর ফরোয়ার্ডের কথায় মুগ্ধ কোচ বলেন, 'দলের স্ট্রাইকার যদি সাংবাদিক বৈঠকে ক্লিন শিট নিয়ে কথা বলে, তা হলে বুঝতেই হবে, আমাদের খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে কতটা তীব্রতা রয়েছে। দিমি যখন বলছে গোল না খাওয়ার কথা, একসঙ্গে ডিফেন্স করার কথা, তখন বুঝতেই হবে দলের মানসিকতায় একটা বড়সড় বদল আসতে শুরু করেছে। আজকের ম্যাচে তারই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে। দু-তিনটে গোলের সুযোগ পেয়ে তা থেকে একটি গোল পেয়েছি আমরা। দিমি যেমন গোল করেছে, তেমনই নীচে নেমে এসে ডিফেন্সও করেছে। এটাই বোঝায় দলের খেলোয়াড়দের আন্তরিকতা কোন পর্যায়ে রয়েছে। এখানে আমার প্রথম দিন থেকে আমি এটাই বলে এসেছি। আমাদের দল হিসেবে নিখুঁত খেলতে হবে। তা হলেই আমরা সাফল্যের মুখে দেখতে পাব'।
গোল অক্ষত রাখাটা যে খুবই জরুরি তা একবাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছেন কোচও। তাঁর মতে, 'এই নিয়ে আমরা পরপর দুটি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখলাম। পয়েন্ট পেতে গেলে আমাদের সবার আগে গোল না খাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে, তার পরে গোল দেওয়ার দিকে। যথাসম্ভব বেশি সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং তা কাজেও লাগাতে হবে'।
দলের ওপর যে শুরু থেকেই তাঁর যথেষ্ট আস্থা ছিল, তা জানিয়ে অস্কার বলেন, 'দলের মধ্যে যে সম্ভাবনা রয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে তাকে সাফল্যে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব আমাকে দেয় ক্লাব। প্রথম দিন থেকেই দলের ওপর আমার আস্থা ছিল। কারণ, প্রথম দিন থেকেই আমি বিশ্বাস করি যে দলের মধ্যে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। লিগ টেবলের একেবারে নীচে থাকার মতো দল ক্লাব বানায়নি। আমি দলের ভাল জন্য উপায় বাতলে দিতে পারি। কিন্তু তা তো হাতে কলমে করে দেখাত হবে খেলোয়াড়দেরই। আমার ধারণা দলের ছেলেরা বুঝতে পারছে, এটাই ভাল ব্যাপার। ওরা গোলের সুযোগ তৈরি করছে, আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক ক্রস দিচ্ছে, এটা দলের পক্ষে ভাল'।
এই ধারাবাহিকতাই বজায় রাখতে চান মশাল-বাহিনীর কোচ। বলেন, 'নর্থইস্ট অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছে আজ। একবার বল ক্রসবারে লেগে ফিরেও আসে। আমাদের আইএসএলে এখন কী করতে হবে, তা এখন দলের সকলেরই জানা। সেই জন্যই প্রায় প্রত্যেকে ভাল খেলতে পারছে। ধারাবাহিকতা এসেছে খেলার মধ্যে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে, যা মোটেই সহজ হবে না। আজ থেকে আমাদের পরের ম্যাচগুলি নিয়ে শুধু ইতিবাচক ভাবনাই ভাবতে হবে'।
পিভি বিষ্ণুর পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে কোচ বলেন, 'বিষ্ণু আজ প্রথম মিনিটেই গোলের সুযোগ পেয়েছিল। যথেষ্ট ভাল খেলেছে ও। ওকে ৫৫-৬০ মিনিট খেলাব ভেবেছিলাম। কিন্তু ও যে ভাবে খেলছিল, তার পরে ওকে আরও বেশিক্ষণ না খেলিয়ে পারিনি। ও মাঠে থাকলে ম্যাচের শুরু থেকে দলের যে কাঠামোটা ছিল তা ধরে রাখতে সুবিধা হয়। ওর খেলায় আমি সন্তুষ্ট। নন্দ ও মহেশ খেললে যে প্রভাব পড়ত, ও সেই প্রভাবই ফেলেছে দলে'।
গত ম্যাচে দু’টি লাল কার্ড দেখার পর শুক্রবারও লালচুঙনুঙ্গা লাল কার্ড দেখেন। এত ঘন ঘন কার্ড দেখার প্রবণতায় আপত্তি রয়েছে কোচের। এই বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের ছেলেদের মানসিক নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে হবে। রেফারির সামনে কোনও কটূ কথা বলা যাবে না। কারণ, একটা ছোট ভুলের ফলে রেফারির সিদ্ধান্তে আমরা শেষ হয়ে যেতে পারি। কারণ, আমাদের আমাদের যা করতে হবে, তা সবাই মিলে এককাট্টা হয়ে করতে হবে। কোনও ভুল করে কাউকে আমরা হারাতে পারি না'।
লাল-হলুদ বাহিনীর সামনে এবার চ্যালেঞ্জ এই ইতিবাচক ফলাফলের ধারাটা অব্যাহত রাখা। তাতে অস্কার ব্রুজোনরা কতটা সফল হন, এখন সেটাই দেখার।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: পেনাল্টি মিস এমবাপের, ৮ ম্যাচ পরে মাদ্রিদকে হারাল লিভারপুল, জয় ডর্টমুন্ডের, গোলশূন্য ড্র জুভের