ভারতীয় দল যে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই নামবে, তা রবিবার দুপুরে জানিয়ে দিলেন কোচ মার্কেজ। ঘরের মাঠে নিজেদের সমর্থকদের সামনে মনস্তাত্বিক ভাবে সামান্য হলেও এগিয়ে থাকার কথা ভারতের। ঘরের মাঠের এই সুবিধা তারা আদায় করতে পারে কি না, এটাই দেখার।
সেপ্টেম্বরে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ শুরুর আগে ঘরের মাঠে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে সিরিয়ার কাছে তিন গোলে হেরে চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড় থেকে ছিটকে যায় মার্কেজের ভারত। তার আগে মরিশাসের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। গত মাসে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করে তারা। গত বছর নভেম্বরের পর থেকে এখনও জয়ের মুখ দেখেনি ভারতীয় ফুটবল দল। সোমবার তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে।
রবিবার ভারতীয় কোচ মার্কেজ জানান, 'প্রীতি ম্যাচে হলেও আমাদের সমমানের একটা দলের বিরুদ্ধে নিজেদের পরখ করে নেওয়ার ভাল সুযোগ এটা। অনেকদিন জয়ের মুখে দেখিনি আমরা। তাই আমরা এ বার জিততে চাই। প্রতিটি অনুশীলনে আমরা কত উন্নতি করেছি, তা প্রমাণ করতে চাই'।
মার্চে যে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের চূড়ান্ত রাউন্ড হবে, তার গ্রুপবিন্যাস ও ক্রীড়াসূচি তৈরি হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর। সেই ড্রয়ে প্রথম পটে থাকার সুবিধা পাবে ভারত। গত মাসে মালয়েশিয়া নিউজিল্যান্ডের কাছে চার গোলে হেরে যাওয়ার ফলে এই ম্যাচে জিতলেও ক্রমতালিকায় ভারতকে পিছনে ফেলে প্রথম পটে থাকার সুবিধা অর্জন করতে পারবে না। তারা দ্বিতীয় পটেই থাকবে। তবে এই ম্যাচে জিতে মার্চের লড়াইয়ের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রাখতে হবে গুরপ্রীতদের। সোমবার এটাই তাদের লক্ষ্য।
এই মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচে খুব একটা ভাল অভিজ্ঞতা হয়নি নীল-বাহিনীর। গত বছর অক্টোবরে কুয়ালা লামপুরে মারডেকা কাপের সেমিফাইনালে এই মালয়েশিয়ার কাছেই হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। ৪-২-এ জিতে ফাইনালে তাজিকিস্তানের মুখোমুখি হয় আয়োজক মালয়েশিয়া। সে দিন তাইল্যান্ডের রেফারির একাধিক ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হতে হয় ভারতীয় দলকে। এমনকী, একশো শতাংশ ন্যায্য গোলও দেওয়া হয়নি তাদের।
ম্যাচের ৫৭ মিনিটের মাথায় বক্সের ডানদিক থেকে ছাঙতের গোলমুখী শট গোলকিপারের গায়ে লেগে গোললাইন পার করে যাওয়ার পর তা ক্লিয়ার করেন মালয়েশিয়ার এক ডিফেন্ডার। রেফারি কিন্তু গোলের বাঁশি বাজাননি! বারবার টিভি রিপ্লে দেখার অনুরোধ করেন ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি রেফারি। গোলটি দিলে ভারত ৩-৩ করে ম্যাচের ছবিটাই পাল্টে দিতে পারত। কিন্তু সে সুযোগ পায়নি তারা। ভারতের হয়ে সে দিন গোল করেন নাওরেম মহেশ সিং ও সুনীল ছেত্রী।
এই দলে দু’জনের কেউই নেই। সুনীল ছেত্রী আম্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিয়েছেন এবং মহেশ সম্ভবত সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও চোটের জন্য এই দলে ডাক পাননি। তবে সেই ম্যাচের দলের ন’জন ভারতীয় ফুটবলার এই দলে রয়েছেন। এই দলে গোল করার লোক মূলত লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, জিথিন এমএস, ভিবিন মোহনন, ফারুখ চৌধুরি। সম্প্রতি আইএসএলে এঁরা প্রত্যেকেই ভাল খেলেছেন। সোমবারও যদি নিজেদের খেলা খেলতে পারেন, তা হলে মালয়েশিয়াকে টেক্কা দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন ভারতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কেজ।
তবে শুধু গোল করলেই তো চলবে না, গোল আটকাতেও হবে, যার দায়িত্ব যেমন থাকবেন গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু, তেমনই ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি, সন্দেশ ঝিঙ্গন, মেহতাব সিং, রাহুল ভেকে, জয় গুপ্তা, রোশন সিং নাওরেমদের লড়াইও কঠিন।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা মাঝমাঠে ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ, জিকসন সিং, জিথিন এমএস, লালেংমাউইয়া রালতে (আপুইয়া), সুরেশ সিং-রা কতটা আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন, তার ওপরই নির্ভর করবে অনেক কিছু। এই ম্যাচের জন্য অনিরুদ্ধ থাপাকে প্রথমে দলে রাখা হলেও পরে চোটের জন্য তিনি দল থেকে বাদ পড়েন। তাঁর জায়গায় দলে এসেছেন ওডিশা এফসি-র থৈবা সিং। চোট রয়েছে আশিস রাইয়েরও। তাঁর জায়গায় সদ্য দলে যোগ দিয়েছেন জয় গুপ্তা। এঁরাই এই যুদ্ধে মার্কেজের সৈন্য।
লড়াইটা যেহেতু বিশ্বের ১৩৩ নম্বরের সঙ্গে ১২৫ নম্বর ভারতের, তাই একটা আকর্ষণীয় লড়াই হবে, এমনটাই ধরে নেওয়া যায়। ইতিহাসও তা-ই বলছে। ফুটবল মাঠে মোট ৩২বার দেখা হয়েছে দুই দলের। দুই দলই ১২বার করে জিতেছে এবং আটবার ড্র হয়েছে। মালয়েশিয়ার এই দলটা হায়দরাবাদে পা রাখার আগে গত বৃহস্পতিবার লাওসের বিরুদ্ধে ৩-১-এ জেতে। সেই জয়ের ফলে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী তারা।
ভারতীয় দলের ফুটবলাররা অবশ্য একসঙ্গে শেষ ম্যাচ খেলেছে ১২ অক্টোবর ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে তাদের মাঠে। তবে আইএসএলের জন্য ভারতীয় দলের ফুটবলাররা সবাই ম্যাচের মধ্যেই রয়েছেন। পাঁচ দিনের প্রস্তুতি শিবিরে তাঁরা দল হিসেবে প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করেছেন।
মারডেকা সেমিফাইনালে মালয়েশিয়ার দলের ১৪জন ফুটবলার এই দলে রয়েছেন। সেই ম্যাচের দুই গোলদাতা তরুণ উইঙ্গার আরিফ আইমান ও ডিফেন্ডার ডিয়ন কুলসও এই দলের সদস্য। মূলত সেখানকার তিনটি ক্লাবের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া এই দল। ফলে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ভাল। ভারতের মতো তাদেরও কোচ পরিবর্তন হয়েছে। তাদের কোচ পল মার্তিও স্প্যানিশ। দুই কোচ একই শহর থেকে উঠে এসেছেন এবং একে অপরকে চেনেনও। মার্তিও জুলাইয়ে মালয়েশিয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন।
তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই এ বছর সেপ্টেম্বরে ফিলিপিন্স ও লেবাননকে হারিয়ে মারডেকা কাপ জেতে মালয়েশিয়া। তবে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার তাদের কাছে ছিল বড় ধাক্কা। লাওসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক ম্যাচের আগে ১০ নভেম্বর থেকে প্রস্তুতি শিবির করে তারা।
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ নিয়ে মার্তি বলেন, 'মানোলোর দলের বিরুদ্ধে খেলাটা আমার কাছে বেশ রোমাঞ্চকর। ও ভাল ও অভিজ্ঞ কোচ। চতুর্থ টায়ার থেকে লা লিগা—সব স্তরেই কোচিং করিয়েছে ও। মানোলো ভারতে অনেক বছর হল কাজ করছে। আমার মনে হয় ওর তত্ত্বাবধানে ভারতীয় দল কাল ভালই প্রস্তুতি নিয়ে নামবে। আমাদের কাছে ম্যাচটা কঠিন হবে। বিদেশে আমাদের পারফরম্যান্সে আরও উন্নতি করা প্রয়োজন। এই ম্যাচে সেই সুযোগ রয়েছে আমাদের'।