Mohun Bagan SG: মাঠে দল নামালে আমি কখনও হাল ছেড়ে দিই না, লিগ শীর্ষে উঠে বলছেন মোহনবাগান কোচ
Jose Molina: শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচ ৮৫ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকলেও মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনার একবারও মনে হয়নি, ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
কলকাতা: শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচ ৮৫ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য থাকলেও মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনার (Jose Molina) একবারও মনে হয়নি, ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। বরং তিনি আশায় ছিলেন ম্যাচের শেষ দিকে ভাল কিছু হবে এবং সেই আশাতেই রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলারদের নামান তিনি। সেই আশা পূর্ণ হওয়ায় খুশি তিনি।
শনিবার লিগের ষষ্ঠ জয়ের পর সাংবাদিকদের মোলিনা বলেন, "আমি কখনও ভাবিনি যে ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে গেছে। কারণ, দলের ওপর আমার আস্থা আছে। জানতাম যে কোনও সময় গোল হবে। সেই আশাতেই পরিবর্তনগুলো করি, যাতে ওরা আমাদের জেতাতে পারে। মাঠে দল নামালে আমি কখনও হাল ছেড়ে দিই না। এক গোলে পিছিয়ে থাকলেও মনে হত, আমরা ড্র করতে পারি। ইতিবাচক থাকলে ভাগ্য সঙ্গ দেয়।"
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে পেত্রাতসের জায়গায় নামা গ্রেগ স্টুয়ার্ট এ দিন সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটান। তাঁর শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বল মনবীর, আশিসের পা ঘুরে যখন ফের বক্সের বাইরে তাঁর পায়ে আসে, তখনই তিনি গোলের পাসটি বাড়ান কামিংসকে। বক্সের মাথা থেকে সোজা গোলে শট নেন তিনি (১-০)। ঠিক এক মাস পরে মাঠে নামা এই স্কটিশ মিডফিল্ডারই সারা মাঠ মাতিয়ে দেন এ দিন।
ম্যাচের পর স্টুয়ার্ট বলেন, "পোস্টে লেগে যখন বলটা আমার কাছে ফিরে আসে, তখন দেখি যে জেসন ভাল জায়গায় আছে। তাই ওকেই বলটা দিই। জেসন অসাধারণ ফিনিশ করেছে। দলের এই জয়ে আমি খুব খুশি। ওয়েন কোইলকে আমি খুব ভাল করে চিনি। জানতাম ম্যাচটা আমাদের পক্ষে কঠিন হতে চলেছে। আজ আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়াটা খুবই জরুরি ছিল।"
মাত্র দশ মিনিট মাঠে থেকে ম্যাচের সেরার খেতাব পাওয়া নিয়ে স্টুয়ার্টের প্রতিক্রিয়া, "মাত্র পাঁচ-দশ মিনিট খেলে ম্যাচের সেরার খেতাব পাওয়াটা আমার কাছে বড় চমক। কোচ যখন বললেন, আমি পুরস্কারটা পেয়েছি, তখন হেসে ফেলি। তবে ম্যাচের সেরা হওয়ার চেয়ে দলের জয়টা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"
কামিংস ও স্টুয়ার্টকে রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামানোর সিদ্ধান্ত যিনি নেন, সেই কোচ মোলিনা বলেন, "জেমি ও দিমি ভালই খেলেছে। ওদের দুর্ভাগ্য যে ওরা গোল পায়নি। জেমিকে যখন ক্লান্ত লাগছিল, তখন আমি কামিংসকে নামানোর কথা ভাবি। দিমি তখনও ভাল খেলছিল। শেষ দিকে ভাল কিছু হওয়ার আশায় গ্রেগকে নামাই এবং ভাল কিছুই হয়। দলের জন্য খুশি, গ্রেগের জন্যও খুশি। কামিংসের গোলটা খুবই ভাল ছিল। আবার আমরা টেবলের শীর্ষস্থানে উঠেছি। এ বার আমাদের পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হবে। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচটা কঠিন হবে।"
স্টুয়ার্টও জানান মাঠে নামার সময় আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। বলেন, "গত দুটো ম্যাচে চোটের জন্য খেলতে পারিনি। আজ যখন মাঠে নামছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল দলকে সাহায্য করতে পারি। চেন্নাইয়িন ভাল দল। তবে গোলশূন্য অবস্থায় আমার মনে হচ্ছিল, দলকে আমি সাহায্য করতে পারি। আমি যে তা করতে পেরেছি, সে জন্য ভাল লাগছে। দলকে তিন পয়েন্ট এনে দিতে পেরে ভাল লাগছে। আরও ভাল লাগছে জেসনের জন্য। ও বেশিক্ষণ মাঠে থাকতে পারেনি। তবে দুর্দান্ত গোলটা করেছে।"
তবে এখনও যে পুরো সুস্থ নন তিনি, তা স্বীকার করে স্কটিশ তারকা বলেন, "আজও যে আমি পুরো সুস্থ হয়ে মাঠে নেমেছি, তা নয়। এখনও ব্যথা অনুভব করছি। তবে জানতাম যে ১০-১৫ মিনিট খেলতে পারলে দলকে সাহায্য করতে পারব। সেটা করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। তবে হয়তো আরও গোল পেতে পারতাম। আমারই শট দুবার বারে ও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। চেন্নাইয়িন ভাল দল। তাই ম্যাচটা আমাদের কাছে কঠিন হয়ে ওঠে। হয়তো আরও ভাল খেলতে পারতাম আমরা। কিন্তু প্রতিপক্ষ কঠিন হলে কাজটা সোজা হয়না।"
তবে সামগ্রিক ভাবে দলের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি বাগান কোচ। বলেন, "আমার মনে হয়, আজ দুই দলই ভাল খেলেছে। চেন্নাইয়িন ভাল খেলবে, এমন প্রত্যাশা আমাদের ছিলই। ওরা ব্যক্তিগত মার্কিং ভাল করেছে। দিমিকে সমানে পাহাড়ায় রেখেছিল ওদের পাঁচ নম্বর (এলসিনহো)। ও দিমিকে খুব একটা বেশি সুযোগ দেয়নি। আপুইয়া আজ ভাল বল সামলাতে পারেনি। সে জন্যই সহালকে নামাই। ও আমাদের আক্রমণে অনেক সাহায্য করেছে। চেন্নাইয়িন মাঝে মাঝে আমাদের চাপে ফেলেছে। ওরা অনেক লঙ বল, ক্রস দিয়েছে। কিন্তু আমাদের ডিফেন্ডাররা ভাল খেলেছে। ওরা গোলের কাছ থেকে কোনও হেড করেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। এই জায়গায় আমরা ভাল নিয়ন্ত্রণ করেছি। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে যারা ভাল খেলে, তারাই জেতে। আমরা আজ এই ব্যাপারে এগিয়ে ছিলাম।"
পেট্রাটস ও ম্যাকলারেনের কাছে যে সমর্থকদের প্রত্যাশা আরও বেশি, তা স্বীকার করে মোলিনা বলেন, "আসলে ফরোয়ার্ডদের লোকে তাদের গোল সংখ্যা দিয়ে বিচার করে। অনেক গোল করলে ওরা ভাল, গোল না করলে ওরা ভাল নয়, এ রকমই মনে করা হয়। এটা ঠিকই যে ফরোয়ার্ডদের কাছ থেকে আমি গোল চাই। কিন্তু সব সময় সহজে গোল আসে না। আজ তো গোল করা মোটেই সোজা ছিল না। কারণ, চেন্নাইয়িনের রক্ষণ খুবই ভাল ছিল। জানি ওদের প্রতি প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু আমি ওদের খেলায় খুশি। ওরা গোল পেলে আরও খুশি হতাম। আশা করি, ওরা পরের ম্যাচগুলোতে গোল পাবে।"
এই ম্যাচে আলবার্তো রড্রিগেজ ও শুভাশিস বোস হলুদ কার্ড দেখায় তাঁরা পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না। এই মোলিনা কিছুটা হলেও চিন্তিত। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে এটা কঠিন পরিস্থিতি। কারণ, আমাদের হাতে বেশি ডিফেন্ডার নেই। তবে এই সমস্যার একটা উপযুক্ত সমাধান যে পাওয়া যাবে, এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। এটা নিয়ে আমাকে আরও ভাবতে হবে। আমাদের দলের একাধিক খেলোয়াড় বিভিন্ন পজিশনে খেলতে পারে। আগামী সপ্তাহে অনুশীলনে অনেককে দেখতে হবে। দেখা যাক, কী উপায় বেরয়।"
ধারাবাহিক ভাবে গোল অক্ষত রাখতে পারা নিয়েও খুশি কোচ বলেন, "জয়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তা যদি গোল অক্ষত রেখে আসে, তা হলে তা আরও ভাল। এ জন্য গোটা দলকে ধন্যবাদ দেব আমি। সবাই ভাল ডিফেন্স করেছে। রক্ষণে খুবই ভাল খেলেছে দলের সবাই। গোল করাটা সবার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে কে কী ভাবে দলের কাজে আসছে, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ওডিশা ছাড়া আমরা জামশেদপুর, চেন্নাইয়িন, মহমেডান, ইস্টবেঙ্গল কোনও প্রতিপক্ষকেই বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করতে দিইনি। আশা করি, আমাদের রক্ষণ এ রকমই ভাল খেলে যাবে। আরও ক্লিন শিট রাখতে পারব আমরা।"
স্টুয়ার্টও এ জন্য খুশি। তিনি বলেন, "ক্লিন শিট রাখাটা খুব দরকার। আমাদের সব পজিশনের খেলোয়াড়ই গোল করতে পারে। এমনকী ডিফেন্ডাররাও অনেক গোল করেছে। এটাই দরকার। ক্লিন শিট ও গোল একসঙ্গে হলে, তা তো বোনাস। আমরা গত কয়েকটি ম্যাচে এই বোনাসই পেয়েছি। আশা করি, পরের ম্যাচগুলোতেও এমন বজায় রাখতে পারব।"
সমর্থকদের ব্যবহারেও মুগ্ধ তারকা মিডফিল্ডার বলেন, "গত ম্যাচে যে বিশাল টিফোটা ওরা এনেছিল, তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। এমন টিফো আগে কোথাও দেখিনি। কলকাতায় আসা থেকেই আমি প্রচুর মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। বিমানবন্দরে নামার সময়েও এমন জয়ধ্বনী শুনেছিলাম। যে কোনও বিদেশি খেলোয়াড়ের কাছে ব্যাপারটা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। এখানে সবাই খুব ভাল মানুষ। সমর্থকেরা সব ম্যাচে আমাদের সঙ্গে থাকে। আশা করি, মরশুমের শেষে আমরা সবাই মিলে সাফল্য উদযাপন করতে পারব। কাজটা যদিও সোজা নয়। তবে সমর্থকদের ভালবাসা সঙ্গে থাকলে এটাও সম্ভব।" (সৌ: আইএসএল)
আরও পড়ুন: বন্ধুর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি, স্নেহাশিস-কন্যার নতুন ইনিংস, খুশির হাওয়া সৌরভের পরিবারে