East Bengal FC: ত্রাতা সেই ক্লেটন, হায়দরাবাদকে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের খরা কাটাল ইস্টবেঙ্গল
ISL: টানা ছয় ম্যাচ জয়হীন থাকার পরে জয়ের সরণিতে ফিরল ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। শনিবার রাতে হায়দরাবাদ এফসি-কে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চলতি লিগের তৃতীয় জয়টি পেল তারা।
কলকাতা: টানা ছয় ম্যাচ জয়হীন থাকার পরে জয়ের সরণিতে ফিরল ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal FC)। শনিবার রাতে হায়দরাবাদ এফসি-কে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে চলতি লিগের (ISL) তৃতীয় জয়টি পেল তারা। ম্যাচের এগারো মিনিটের মাথায় ক্লেটন সিলভার গোলে এ দিন জয়ে ফেরে তারা। এই জয়ের ফলে লিগ টেবলে আট নম্বরে উঠে এল তারা। ছ’নম্বরে থাকা জামশেদপুর এফসি-র সঙ্গে তাদের পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়াল মাত্র দুই। বৃহস্পতিবার পরবর্তী ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ এই জামশেদপুর-ই। সেই ম্যাচে তাদের হারাতে পারলে সেরা ছয়ে ঢুকে পড়বে লাল-হলুদ বাহিনী।
এক গোলে জিতলেও এ দিন গোলের সংখ্যা আরও বাড়াতে পারত ইস্টবেঙ্গল। একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। সারা ম্যাচে তাদের তিনটি শট ছিল লক্ষ্যে, সেখানে তাদের আরও আটটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে তাদের সঙ্গে এ দিন সমানে সমানে লড়াই করে যায় হায়দরাবাদের তরুণ ফুটবলাররাও। তারাও মোট দশটি শট নেয়, যার মধ্যে তিনটি ছিল লক্ষ্যে। কিন্তু কোনওটিই গোলে পরিণত করতে পারেনি তারা। এ দিন দুই দলের বল পজেশন ছিল ৫০-৫০।
ম্যাচের শেষ দিকে যে রকম চাপ বাড়ায় হায়দরাবাদ, তাতে মনে হয়, যে কোনও সময় সমতা এনে ফেলবে তারা। শেষ দিকে একটি গোলমুখী হেড পোস্টে লেগে ফিরেও আসে। কিন্তু ম্যাচের শেষ দিকে পরপর দুই নির্ভরযোগ্য সদস্য অ্যালেক্স সাজি ও জোয়াও ভিক্টর লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ায় তারা হতোদ্যম হয়ে পড়ে।
প্রথম এগারোয় পাঁচটি পরিবর্তন করে এ দিন দল নামান লাল-হলুদ কোচ কার্লস কুয়াদ্রাত। ভিক্টর ভাজকেজ, ক্লেটন সিলভা, নন্দকুমার শেখর, মহম্মদ রকিপ, ও সায়ন ব্যানার্জিকে দলে ফিরিয়ে ৪-২-৩-১-এ দল সাজান তিনি। অন্যদিকে, হায়দরাবাদ এফসি-র প্রথম এগারোয় ফিরে আসেন তাদের একমাত্র বিদেশী জোয়াও ভিক্টর।
হায়দরাবাদকে এ দিন তাড়া করে বেড়ায় তাদের পুরনো রোগ। গোলের সামনে গিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা, সঠিক সিদ্ধান্তের অভাব এই ম্যাচেও দেখা যায় তাদের পারফরম্যান্সে। ইস্টবেঙ্গলও একাধিক গোল করার সুযোগ পায়। কিন্তু তাদেরও একই রকম সমস্যা তো রয়েছেই। তার ওপর বল বেশিক্ষণ পায়ে রাখার অক্ষমতা ও বারবার নিয়ন্ত্রণ হারানো, এগুলিও দেখা যায় তাদের খেলায়।
কার্ড সমস্যার জন্য নাওরেম মহেশ সিং এ দিন না খেলতে পারায় লাল-হলুদ বাহিনীর আক্রমণ খুব একটা ধারালো ও ধারাবাহিক হয়ে উঠতে পারেনি। তবে কার্ড-শাস্তি কাটিয়ে দলে ফেরা ক্লেটন সিলভা ১১ মিনিটের মাথায় কাজের কাজটি করে ফেলায় শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট খোয়াতে হয়নি তাদের। বক্সের বাঁ দিক থেকে নিশু কুমারের দেওয়া ক্রসে হেড করে বল জালে জড়িয়ে দেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড (১-০)। গোলকিপার গুরমিতের মাথার ওপর দিয়ে বল গোলে ঢুকে পড়ে।
গোল খাওয়ার পর আক্রমণের ধার বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে হায়দরাবাদ। কাউন্টার অ্যাটাকই ছিল তাদের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু বারবার প্রতিপক্ষের বক্সে গিয়ে রক্ষণের জালে আটক হয়ে যান জোসেফ সানি, আব্দুল রাবি, মাকান চোথেরা। অভিজ্ঞতার অভাবে প্রতি ম্যাচেই এ ভাবে ভুগতে হচ্ছে হায়দরাবাদকে।
প্রথমার্ধেও বল পজেশনে দুই দলই যেমন কাছাকাছি ছিল, তেমনই গোলে শটের ক্ষেত্রেও খুব বেশি এগিয়ে ছিল না (২-১) ইস্টবেঙ্গল। তবে ম্যাচের একমাত্র গোলের পরে কোনও দলই কোনও সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। প্রথমার্ধে ক্লেটন আরও দু’টি গোলের সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করেন।
বিরতির পর সায়ন ব্যানার্জির জায়গায় পিভি বিষ্ণুকে নামায় ইস্টবেঙ্গল। জার্মান ফরোয়ার্ড ফেলিসিও ব্রাউনকেও এ দিন খুব একটা চনমনে লাগেনি। সদ্য ভারতে এসেই মাঠে নেমে পড়তে হয়েছে তাঁকে, দলের সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নিতেও সময় লাগছে হয়তো। মোদ্দা কথা হল এখনও তাঁর জড়তা কাটেনি। তার ওপর এ দিন তাঁকে একাধিকবার আঘাত করেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা। ফলে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেননি তিনি। ৭০ মিনিট পর্যন্ত তাঁকে মাঠে রাখেন কুয়াদ্রাত। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হয়নি।
ব্রাউনের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকলেও ভিক্টর ভাজকেজকে নিয়েও প্রায় একই কথা বলা যায়। এই দুই বিদেশী যতদিন না ধাতস্থ হচ্ছেন, তত দিন ইস্টবেঙ্গলকে চেনা ছন্দে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এর পরে তাদের জামশেদপুর এফসি, চেন্নাইন এফসি ও ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে মাঠে নামতে হবে তাদের। তার মধ্যে নিজেদের তৈরি করে নিতে না পারলে ইস্টবেঙ্গলের সমস্যা যে বাড়তে পারে, সেই ইঙ্গিতই পাওয়া গেল এ দিনের পারফরম্যান্সে।
ম্যাচের বয়স এক ঘণ্টা পেরনোর পরেই হায়দরাবাদের অ্যাটাকাররা যে সুযোগগুলি পান, তা কাজে লাগাতে পারলে তারা হয়তো ম্যাচে এগিয়েও যেতে পারত। ৬১ মিনিটের মাথায় মাকান চোথের পাস পেয়ে ছ’গজের বক্সের মধ্যে থেকেও গোলে বল ঠেলতে পারেননি জোসেফ সানি। পরের মিনিটেই বক্সের বাইরে থেকে ফের বাঁ পায়ে শট নেন চোথে, যা প্রভসুখন গিল ডানদিকে ডাইভ দিয়ে না আটকালে হয়তো বিপদে পড়ত লাল-হলুদ শিবির। ৭৯ মিনিটের মাথায় চোথের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে হায়দরাবাদকেই বেশি মরিয়া মনে হয়।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে সমতা আনার যে সুযোগ পায় হায়দরাবাদ, তা হাতছাড়া হওয়াটা তাদের দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই না। বক্সের বাইরে থেকে চোথের ভাসানো ক্রস অনুসরণ করে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে গিয়ে তাতে হেড করেন জেরেমি জোমিঙলুয়া। তা গিলকে পরাস্ত করে সোজা পোস্টে গিয়ে ধাক্কা খায়। ক্ষিপ্র জেরেমিকে বাধা দিতে পারেননি কোনও ডিফেন্ডার।
আক্রমণে যেমন চোথে, সানিরা ধারালো ছিলেন, তেমনই এ দিন হায়দরাবাদের রক্ষণে অ্যালেক্স সাজি হয়ে ওঠেন ইস্টবেঙ্গল অ্যাটাকারদের সবচেয়ে বড় বাধা। প্রায় একা কুম্ভ রক্ষা করতে দেখা যায় তাঁকে। বারবার তিনি আটকান নন্দকুমার, ক্লেটন, ফেলিসিও, বিষ্ণুদের। শেষে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের আটকাতে এতটাই মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি যে, স্টপেজ টাইমে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। স্টপেজ টাইমের শেষ মিনিটে লাল কার্ড দেখানো হয় জোয়াও ভিক্টরকেও। শেষ পর্যন্ত ন’জনে খেলতে হয় তাদের।
আরও পড়ুন: Mukesh Kumar: কলকাতায় ট্যাক্সি চালাতেন বাবা, রোহিতদের সংসারে ঢুকেও পা মাটিতে রেখে চলার শপথ মুকেশের
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।