এক্সপ্লোর

জ্যোতিষীর কাছে না গিয়ে নিজের হাতের রেখা নিজে লিখি

তেতাল্লিশতম জন্মদিনের দু’সপ্তাহ আগে গ্র্যান্ড স্ল্যাম? ধুর, রূপকথাতেও হয় না। তিনি মধ্যবিত্ত বেকবাগান পাড়া থেকে উঠে আসা লিয়েন্ডার আদ্রিয়ান পেজ সেটা করে দেখিয়েও কিনা গভীর সঙ্কটে! মাঝরাত পেরিয়ে গৌতম ভট্টাচার্য-কে দেওয়া ইন্টারভিউতে তবু অকুতোভয়

রাত দেড়টার সময় বহু ঝামেলা ঝঞ্ঝাট করে তাঁকে একা ছাড়িয়ে আনতে পেরেছি পাঁচতারা হোটেলের কফিশপে। এটা একেবারে আইডিয়াল জায়গা। শুনশান, দু’চারটে কর্মী বাদ দিয়ে কেউ নেই। আর শুরুতেই কি না বিপর্যয়। পরপর দু’টো লম্বা হাই তুললেন লিয়েন্ডার। কে না জানে যে ইন্টারভিউয়ের শুরুতেই হাই ওঠে, সেটা পাঠক দ্রুত স্প্যামে পাঠিয়ে দেবে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তৃতীয়বার হাই। এ বার ক্ষমা চাইছেন লিয়েন্ডার। ‘‘আমার আসলে এটা ঘুমের মাঝরাত্তির।’’ মনে মনে ভাবছি সাড়ে বেয়াল্লিশেও লেট নাইট অভ্যেস করতে পারলে না বাবা। চোখের  সামনে দেখছি, ইন্টারভিউটার ভবিতব্য। আনন্দplus ভেতরের পাতার নীচের দিকে। বললাম, একটু কফি খাবেন? লিয়েন্ডার বললেন, ‘‘এই সময় কফি খাওয়ার অভ্যেস নেই।’’ শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ। ঠিক এই সময় অভাবিত বাঁচিয়ে দিল, আমার হাতে থাকা একটা বই। লিয়েন্ডারের হঠাৎ চোখ পড়ল বইটার দিকে। এর পর যা ঘটল... image1 এ কি? মার্টিনার বই না? হ্যাঁ, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার আত্মজীবনী। পড়েছেন?   না। বলছেন কি! ‘বিয়িং মাইসেল্ফ’ পড়েননি?   আপনার খুব প্রিয় বই মনে হচ্ছে? প্রিয় মানে! এটা তো আমার জীবন দর্শন বলতে পারেন। বইটা থেকে কত শিখেছি। শিখেছি যে, নিজের কাছে নিজেকে কখনও হারাতে নেই। কাম হোয়াট মে, ইউ হ্যাভ টু কিপ ইট রিয়েল।   ব্যাখ্যা করবেন? ব্যাখ্যাটা খুব সিম্পল। সমাজ অনেক কিছু বলবে। বন্ধুরা অনেক কিছু বলবে। আশেপাশের লোক অনেক কিছু কানে তুলবে। সব শুনবেন। হাসবেন। তারপর নিজে যা ঠিক করেছেন সেটা করবেন। নিজেকে কখনও ঠকাবেন না। আর বাকি পৃথিবী আপনার সম্পর্কে কী ভাবছে, সেটা নিয়ে কখনও পীড়িত হবেন না।   লিয়েন্ডার, সে দিন টিভিতে দেখছিলাম, আপনার ব্যাকহ্যান্ডটা এখন অনেক ভাল। আগে বিপক্ষ আপনাকে বাঁ দিকের কোর্টে সমস্যায় ফেলার চেষ্টা করত। এখন সেটাও কত মজবুত। থ্যাঙ্ক ইউ। ওয়ারিঙ্কার সঙ্গে প্র্যাকটিস করে করে ওটা স্ট্রং হয়েছে। মাসের পর মাস ওর সঙ্গে প্র্যাকটিস করে গেছি। ও যে ভাবে আমাকে শিখিয়েছে সেটা সেনসেশনাল। এক এক সময় মনে হয়, ইস ওকে যদি আমি আগে পেতাম। এই যা শিখলাম সেটা যদি চোদ্দো বছরে শিখতে পারতাম।   কী শিখলেন? সেটা বলব না। এখনও সার্কিটে আছি। কিছু কিছু সিক্রেট থাক।   সবাই তো লিয়েন্ডার পেজ হবে না। কিন্তু অনেকে ক্লাব পর্যায়ে খেলে, সেখানেই সন্তুষ্ট থাকে। কারণ তার চাকরিবাকরি আছে। সংসার আছে। এরা যদি একটু বেটার প্লেয়ার হতে চায়, তাদের জন্য কী টিপস দেবেন? বলব, নিরন্তর প্র্যাকটিস করে যেতে। যদি কাউকে না পায় যেন দেওয়ালে মেরে মেরে প্র্যাকটিস করে। আমাদের মাসল মেমরিটাই একটা প্লেয়ারের সঙ্গে আরেকটা প্লেয়ারের তফাত করে। টপ প্লেয়ারদের দেখবেন প্র্যাকটিস করেই যাচ্ছে। করেই যাচ্ছে। এগেইন। এগেইন। এগেইন। এগেইন। এগেইন। ব্যাপারটা চূড়ান্ত বিরক্তিকর হতে পারে। কিন্তু এই বল মারতে মারতে অজান্তে একটা ফ্লো তৈরি হয়ে যায়। মাসল তার নিজস্ব স্মৃতিশক্তি থেকে তখন কাজ করতে থাকে। অবচেতনেই তখন জিনিসগুলো ঘটতে শুরু হয়। বড় প্লেয়াররা মাসল মেমরির সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ করে দেয়। এক্সট্রা স্পিড। এক্সট্রা স্পিন। এক্সট্রা এজিলিটি। দু’টোর কম্বিনেশন এত মারাত্মক হয়ে দাঁড়ায় যে, অপোনেন্ট খেই পায় না। এর সঙ্গে চ্যাম্পিয়নরা যোগ করে অকুতোভয় মনোভাব। রিয়েল বড় প্লেয়ারদের দেখবেন ফিয়ারলেস।   কিন্তু এই মাসের পর মাস। বছরের পর বছর। র‌্যাকেট হাতে টেনিস বল মেরে যাওয়াটা চূড়ান্ত বিরক্তিকর নয়? এই লাখ লাখ বল মারতে মারতে লোকে তো ডিপ্রেশনে চলে যাবে। দু’বছর আগে মুম্বইতে আমার ইন্টারভিউ নিতে এসে আপনি বলেছিলেন, লি, তোমায় চল্লিশেও খুব ফিট লাগছে।   দু’বছর আগেকার কথা! আপনার মনে আছে? আমি কিছু ভুলি না। আমার হাতির মতো স্মৃতিশক্তি। শুধু স্থান-কাল-পাত্র নয়। ডিটেলসও মনে থাকে। আমার স্থির বিশ্বাস দু’বছর বাদে আমার ইন্টারভিউ নিতে এসে বলবেন, তুমি তো ড্রপ ভলিটা এখন দারুণ মারছ।  তার দু’বছর বাদে আরও একজন সাংবাদিক এসে বলবে, লি তোমার সার্ভিসটা কিন্তু দারুণ হয়েছে। এগুলোই আমার দৌড়নোর প্রেরণা। ওই যে বললেন লাখ লাখ টেনিস বল কেন মারি? এ জন্য মারি যে, ওটা আমাকে ক্রিয়েটিভিটি দেয়। আমি প্রতিপদে নিজেকে দেখাতে পারি। আমি এখনও দিব্যি আছি। আঠাশ বছর ইন্ডিয়া খেলার পরেও দৌড়চ্ছি। আর ছাত্রের মন নিয়ে রোজ উন্নতি করছি।   এত ঘাত-প্রতিঘাত। এত উত্থান-পতন। অথচ আপনার হাতে কখনও আংটি দেখিনি। জ্যোতিষীর কাছে যান না? না, দাদা।   কেন? আমি একটা জ্যোতিষেই বিশ্বাস করি যে, কোর্টের ও পারে যে শত্রু তার জন্য সব সময় তৈরি থাকবে। যুদ্ধের দামামা বাজছে, আর তুমি আংটি পরে নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে আছ, সেই জীবনে যদি বিশ্বাস করতাম তা হলে তো বারো বছর বয়সে বাড়ি ছাড়ার দরকার ছিল না। তা হলে তো আমার এই জার্নিটাই বৃথা।   কিন্তু এ ভাবে ভাবতে তো অসম্ভব মনের জোর লাগে। কলকাতায় মার্টিনার খেলাটা দেখেছিলেন? ঊনষাট বছরের এক মহিলা একটা ক্রস কোর্ট ড্রপ ভলি মেরেছিল যেটা ফেরাতে গিয়ে মহেশ উল্টে পড়ে যায়। আমার কাছে ওটাই প্রাইড। ওটাই হল জার্নি। যে একজন মহিলা তার অ্যাথলিট জীবনের প্রান্তে এসে, শরীর বিশ্বাসঘাতকতা করার সময়েও নিজের সাধনা থেকে সরে যাচ্ছে না। সে তবু দৌড়চ্ছে। টেকনিক ঠিক রাখছে। শত্রুকে বেসামাল করে দিচ্ছে। এর মধ্যে জ্যোতিষী কোথায় পাচ্ছেন বন্ধু?   লিয়েন্ডার, আপনাকে ইন্টারভিউ করাটা সব সময় অসম্ভব প্রেরণা দেয়। আপনাকে দেখছি সেই ষোলো বছর বয়স থেকে। এই প্রতিটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম আপনি জেতেন, আর নতুন করে অবাক লাগতে শুরু করে। কলকাতার মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে যার বিরাট কোনও সুযোগসুবিধা নেই সে কী করে প্রথম বিশ্বের সঙ্গে লড়ল? আর আঠাশ বছর ধরে নিজের জায়গাটা রেখে দিল? বলতে পারেন দৈত্যাকার প্রচেষ্টা। আমার আগে কেউ ছিল না। কোনও মডেল ছিল না। এই দেশ থেকেই কেউ টেনিসে এক নম্বর হয়নি। কোনও ট্রেনিংয়ের মেথড কেউ জানত না। কী ডায়াট করতে হবে, কেমন ট্রেনিং করতে হবে — কেউ জানত না। ১৯৮৬-র ১২ মে মাত্র বারো বছর বয়সে আমি যখন টেনিসের রাস্তায় নামলাম, তখন আমার একমাত্র গ্যারান্টি ছিলাম আমি। আর যা যা গ্যারান্টি সবই ব্যর্থতার। আমার গ্যারান্টি কী কী? না, আমার ওয়ার্ক এথিক। আমার স্পঞ্জের মতো সব কিছু শিখে নেওয়ার ক্ষমতা। আমার শারীরিক সক্ষমতা। আমার মনের জোর। এই নিয়ে লড়তে হয়েছে। কখনও মনে হয়েছে মূর্ছিত হয়ে যাব। পড়ে যাব। এত রক্ত বেরোচ্ছে, আর বোধ হয় বাঁচব না। আধুনিক সময়ে এখান থেকে টেনিস প্লেয়ার হওয়ার পরিকাঠামোই নেই। কেন চেষ্টা করতে গেলাম? যেখানে কোনও রোড ম্যাপ নেই। ন্যূনতম নকশা নেই। সেখানে ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের কাছে হার তো অবধারিত। টাকার জন্য ভাল কোচ রাখতে পারিনি। ভাল ট্রেনার নিতে পারিনি। সবই মাইনাস। তা বলে হাল ছেড়ে দিইনি। নেতাজি ইন্ডোরে ১৯৮১-তে ইভান লেন্ডলের বলবয় ছিলাম আমি। আর সেখানেই যখন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে উঠে এ বার খেললাম মনে মনে নিজের সঙ্গে একটা কথা হয়েছিল।   কী কথা? নিজেকে বললাম, লি ভালই তো ঘুরলে। তোমার পুরো জার্নিটাই তো একটা ওয়ার্ল্ড ট্যুর হয়ে গেল। দাদা, একটা কথা বলি। বিয়াল্লিশে চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছি। আর ষোলো বছরে ছিলাম জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন। ছাব্বিশ বছর ধরে ওয়ার্ল্ড সার্কিটে দাপিয়ে বেড়ানোর মধ্যে যে কত ঘাম-রক্ত আর বুলেট মিশে আছে, তা লোকে ভাবতেও পারবে না। আমি একটা বই লিখতে চাই, যেখানে সব কিছু উজাড় করে বলব। আর তাতে বলবেন, কোনও জ্যোতিষী, তাবিজ-টাবিজের দরকার নেই? আমার জন্য অনেকে জ্যোতিষীর কাছে গেছে। বন্ধু-বান্ধব-শুভানুধ্যায়ী অনেকেই। বিভিন্ন সময়ে আমার জন্য গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। আমি যদিও তাদের বার বার বলার চেষ্টা করে গিয়েছি। আমি নিজের হাতের রেখার ইতিহাস নিজে লিখি। আমি বিশ্বাস করি অনন্ত পরিশ্রমে হাতের রেখা বদলানো যায়।   সচিন আর আপনার দু’জনের জীবন কাহিনিই রূপকথা। দু’জনের শুরুই ষোলো বছর বয়সে। দু’জনেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। অ্যাকচুয়ালি, সচিন, আমি আর ভিশি আনন্দ একই বছরে শুরু করি। ভিশিরটা যদিও ইন্টেলেকচুয়াল স্পোর্ট। তবু বিশ্ব পর্যায়ের দাবায় ওর স্থায়িত্বটা অকল্পনীয়। আমি ওর জন্য ভীষণ গর্বিত। সচিনের কথা তো বলে লাভ নেই। সর্বকালের সেরাদের একজন।   খেলোয়াড় হিসেবে কিছু শিখেছেন সচিন বা আনন্দের কাছে? ভিশি আমার ভীষণ প্রিয়। ওর স্ত্রী অরুণাও। যে ভাবে অরুণা সম্পূর্ণ স্বার্থহীনভাবে ভিশির টেক কেয়ার করে। পুরো প্রেশারটা নিজে নিয়ে নেয়।  নিয়ে ভিশিকে পুরো ফোকাসটা খেলার উপর রাখতে দেয়, সেটা অনবদ্য।   অঞ্জলিও তো তাই। আমি জানি অঞ্জলিও তাই। পুরো সাংসারিক লোডটা ও নিজে নিত।   লিয়েন্ডার, এখানে একটা প্রশ্ন না করে পারছি না। আপনার সাংসারিক জীবন তো কাঁটায় ভরা। দু’টো বিয়েই যন্ত্রণা দিয়েছে প্রচুর। এই এত সব কাঁটাতারের ঘা খেতে খেতে কী করে বাঁচিয়ে রেখেছেন নিজেকে? আমি এ ভাবে দেখেছি যে, জীবন আপনার দিকে চ্যালে়ঞ্জ ছুড়ে দেয়। বাধা ছুড়ে দেয়। নিয়মিত বিপত্তি ঘটায়। এ বার আপনি যদি মরদ হন, তো চোখে চোখ রেখে এই সমস্যার মুখোমুখি হতেই হবে। ধরে নিতে হবে এটাও টেনিস কোর্টের আরও একটা লড়াই।   কিন্তু এটা তো মনে হতেই পারে যে, একটা লড়াই এত কষ্ট করে জিতি। অন্যটাতে কেন আমার জন্য গোলাপ অপেক্ষা করে থাকবে না? কই আমার বন্ধুদের বেলায় তো হচ্ছে না? কিচ্ছু করার নেই। দাঁতে দাঁত চেপে আপনাকে নিজেকে বলতে হবে যে জিনিসের সমাধান তোমার হাতে নেই। সেটা নিয়ে মাথা খারাপ কোরো না। তার চেয়ে তুমি অপেক্ষায় থাকো। বিনীত থাকো। সিম্পল থাকো। মাটির কাছাকাছি থাকো। ধৈর্য ধরে থাকো। সত্যি কী ছিল, তা একদিন না একদিন বেরোবেই। সে দিন সবাই জানবে।   এত কিছু করেও রিও অলিম্পিকে আপনার যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা। নিজের জন্য সময় সময় খারাপ লাগে না যে, আমি এমনই দুর্ভাগা এত কিছু জিতেও নিজের জন্য বন্ধ দরজাগুলো কিছুতেই খোলে না? দাদা, আমি আবার সেই কথাটাই বলতে চাই। দেশের হয়ে কিছু করার জন্য আমার রক্ত ফোটে। তেরঙ্গা ঝান্ডা পেছনে রেখে যখন খেলি আর জিতি, তখন নিজেকে নিজে পিঠ চাপড়াই আর বলি, সাবাস লি!  এর জন্যই তো বেঁচে থাকা। তা বলে যে জিনিসটা আমি কনট্রোল করতে পারছি না। যেখানে নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য কেউ সেটা তো আমার ভেবেও কোনও লাভ নেই।   রিওতে আপনি নির্বাচিত হলে আপনার সাত নম্বর অলিম্পিক হবে। অনেকের মনে হতে পারে ছ’টাতে তো গেছি। আর কী লাভ এত ঝামেলার মধ্যে গিয়ে? আমি সব সময় মনে করি বারটাকে আরও ওপরে ওপরে টাঙিয়ে দিতে। সাতটা অলিম্পিক মানে আঠাশ বছর ধরে আপনি ফর্মের চুড়োয় রয়েছেন। আপনি আপনার দেশকে, আপনার পতাকাকে, আপনার দেশবাসীকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছেন। এর চেয়ে বড় মোটিভেশন আর কী হতে পারে?   তেতাল্লিশে যতই গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতুন। খেলা ছেড়ে দেওয়ার প্রান্তে এসে গেছেন আপনি। জীবনের একত্রিশ বছর ধরে একটা জিনিস নিয়ে ঘাঁটছেন। সেটা ছেড়ে দিলে গভীর শূন্যতা হবে না? কর্পোরেট স্পিকার হব। অলরেডি অনেক জায়গায় যাওয়া শুরু করেছি। বিভিন্ন কোচিং ক্যাম্পে নতুনদের অনুপ্রেরণা দেব। আত্মজীবনী লিখব। কত কত কিছু নিয়ে জীবন পড়ে আছে।   দু’বছর আগে আপনি আমায় বলেছিলেন, অনুপম খেরের কাছে অভিনয় শিখছেন। ফিল্মে শুধু কাজই করছেন না, অস্কার জিততে চান। সেই লক্ষ্যের কী হল? ফিল্মে কাজ করলাম। কিছু প্রশংসাও পেয়েছি। কিন্তু একটা জিনিস কাজ করে রিয়েলাইজ করলাম। ফিল্ম একটা হিউজ টিম ওয়ার্ক। ৩০০-৪০০ লোক মিলে অসাধারণ কোঅর্ডিনেশনে একটা জিনিস তৈরি করছে। কিন্তু সেখানে অভিনেতা আসল অথরিটি নয়। আসল অথরিটি হল ডিরেক্টর। ইট ইজ আ ডিরেক্টর্স মিডিয়াম। সে-ই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। টেনিস কোর্টে যেমন আমি। কোচ যা-ই বলুক। হিটিং পার্টনার যা-ই শট দেখাক। ট্রেনার যা-ই পরামর্শ দিক। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিচ্ছি আমি। আমিই সেখানে সব কিছু ডিকটেট করি। সেলুলয়েডে যা পারি না। সেখানে আমি লাস্ট লাইন নই। আপনি এত ভাল কথা বলেন। স্টার টিভি তো আপনাকে লুফে নেবে। গ্র্যান্ড স্ল্যামে কমেন্ট্রি করতে চান না? কমেন্ট্রি হয়তো কিছুটা ওয়ান ডায়মেনশনাল। তার মধ্যে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই। কোনও হার-জিত নেই সেখানে। নিস্তরঙ্গ জীবন।   মহেশ ভূপতির সঙ্গে আপনার সম্পর্ক এখন কেমন? কেন বলুন তো?   এমনিই মনে হল যে কেরিয়ারের প্রান্তে এসে অনেক লড়ালড়ি নিরর্থক হয়ে যায়। পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে আবার ভাব হয়ে যায়। কিন্তু আপনার কী হয়েছে? আমাদের মধ্যে সম্পর্ক এখন বেটার। প্রকৃতিগত ভাবে দু’জনে সম্পূর্ণ দু’রকমের। তবে এখনকার সহাবস্থান রিল্যাক্সড। আর দু’জনেই যে দু’ধরনের তার সঙ্গে আমরা মানিয়ে নিয়েছি। আমরা দু’জনে যে সব কীর্তি ঘটিয়েছি, তার জন্য যৌথভাবে গর্বও অনুভব করি।   মাঝে বহু বছর যখন আপনাদের কথা বন্ধ ছিল, তখন একসঙ্গে ডাবলসে জিততেন কী করে? হা হা জিততাম এটা মাথায় রেখে যে, এটা আমাদের চাকরি। ব্যক্তিগত ভাল লাগা নয়। আপনাকে ঘিরে আপনার সহ-খেলোয়াড়   দের মধ্যে যে ঈর্ষা জারি থাকে সেটা সামলান কী করে? কত নেগেটিভ কথা আপনার সম্পর্কে শোনা যায়। আমি শুনেছি বেশ কিছু নেগেটিভ কথা। আমি অ্যারোগেন্ট। আমি স্বার্থপরের মতো নির্বিকার। আমি নিজের পৃথিবীতে নিজের পেস-এ থাকি। আমি কাউকে পাত্তা দিই না। খালি নিজেরটা বুঝি। এই তো?   এই এবং আরও কিছু। আমি এগুলো শুনে কী করব? এ সব শুনে কেন স্ট্রেস নিতে যাব? আমার কিচ্ছু এসে যায় না। লোকে কী ভাবল, তা নিয়ে আমি জীবন কাটাতে রাজি না। ফ্র্যাঙ্কলি, আই ডোন্ট কেয়ার।   তবু পাশ থেকে ক্রমাগত হিংসে উড়ে এলে সমস্যা হয় না? ঈর্ষা তো ভাল জিনিস। তার মানে সারাক্ষণ কেউ আপনাকে নিয়ে ভাবছে। আর মনে মনে প্রশংসা করছে। আই এনজয় জেলাসি। লোককে যদি জেলাস-ই না করতে পারেন, তা হলে উল্টে ভাবুন আপনার কাজগুলো ঠিকঠাক হচ্ছে কি না।   কিন্তু যারা করছে, তারা তো আপনারই সো কল্ড কাছের মানুষজন। অবাক লাগে কলকাতার যে কোনও ক্লাবে লিয়েন্ডার পেজ নামটা উঠলে অবিরাম ভালবাসা দেখা যায়। অথচ ভারতীয় টেনিস সার্কিটে উল্টো। আপনাকে বুঝতে হবে, এই লোকগুলো কেন আপনাকে এটা করছে। কী মোটিভ নিয়ে করছে? একটা কথা তো মানবেন যে, পৃথিবীটা অনেক বদলে গেছে। সেই তিরিশ বছর আগে আমি যখন কলকাতায় ছিলাম, সেই সমাজটা আর নেই। এখনকার দিনে ভাল লোক খুঁজে পাওয়াটাই দুষ্কর।   আপনি জানেন এই শত্রুতার ধরনটা? নিশ্চয়ই জানি।   জেনে বিচলিত নন? এতটুকু না। আমি শুধু মাথায় রাখি সাপদের কাছে টেনো না, তা হলে কামড়াবে।   মানে? মানে এগুলোকে ভেতরে ঢুকিয়ো না। সমালোচনাগুলো যেন আউটবক্সে থাকে। ইনবক্সে ঢুকে তোমার শরীরের ক্ষতি না করে।   আর? বললাম তো তাদের বেশি কাছে আসতে দিই না। লক্ষ্মণরেখা টেনে রাখি। কথা আছে, বন্ধুকে কাছে রাখতে হয়। শত্রুকে রাখতে হয় আরও কাছে যাতে সে ক্ষতি করতে না পারে। আমি এটায় বিশ্বাস করি না। আমি শত্রুকে দূরেই রাখি।   লিয়েন্ডার পেজের কাহিনি তা হলে দিনের শেষে কী? টেনিস র‌্যাকেটও তার মানে অমিত শক্তিশালী নয়? ঠিক উল্টো। আমার কাহিনি সবার কাছে বরং দৃষ্টান্ত। যে বুকের মধ্যে আগুন নিয়ে স্বপ্ন দেখো। আর ক্রমাগত দৌড়ও। দেখবে স্বপ্নগুলো কেমন সত্যি হতে শুরু করেছে।   লাস্ট একটা প্রশ্ন না করে পারছি না। প্লিজ ফ্র্যাঙ্ক উত্তর দেবেন। বলুন।   কোথাও গিয়ে নিজের শহরের ওপর অভিমান হয় না যে, হে কলকাতাবাসী তোমরা সৌরভকে এত ভালবাসলে। আমি এত গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেও আমাকে প্রাপ্য সম্মান দিলে না? এতটুকু না। আমাকে এই শহর প্রচুর দিয়েছে। উজাড় করে দিয়েছে। আর সৌরভ প্লেয়ার ও ক্যাপ্টেন হিসেবে যা গৌরব এনেছে, তাতে এই সম্মান ওর প্রাপ্য।
আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

RG Kar Protest: রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
Roopa Ganguly: জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
RG Kar Protest : এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়, বললেন ডা. কুণাল সরকার
'এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়'
Bashdroni Student Death: ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

UP News: রোগীমৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বেধড়ক মারধর, প্রতিবাদে গণ ইস্তফা ২৫০ চিকিৎসকেরRG Kar News: আন্দোলন চলুক, তবে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হোক, পরামর্শ সিনিয়র ডাক্তারদের | ABP Ananda LIVEHoy Ma Noy Bouma: নতুন সিরিয়ালের সফরের মাঝেই একান্ত আড্ডায় মুখোমুখি হলেন অ্যানমেরি আর সিদ্ধার্থ।Jeet Ganguly: জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সুরে মুক্তি পেল নতুন মিউজিক ভিডিও

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
RG Kar Protest: রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
রাজ্য সরকারের পুজো অনুদান অস্বীকার আরও এক পুজো কমিটির
Roopa Ganguly: জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
জামিন পেলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রাতভর ধর্নার পর গ্রেফতার হয়েছিলেন সকালেই
RG Kar Protest : এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়, বললেন ডা. কুণাল সরকার
'এই আন্দোলন যেন ৭০ দশকের ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন না হয়ে যায়'
Bashdroni Student Death: ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
ঘরে ছড়ানো বই-খাতা, বাঁশদ্রোণীতে পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল পরিবার
Fake SBI Branch: প্রতারণার নয়া নজির, SBI-এর ভুয়ো শাখা খুলল প্রতারকরা
প্রতারণার নয়া নজির, SBI-এর ভুয়ো শাখা খুলল প্রতারকরা
Fruits: খালি পেটে এই ফলগুলি মোটেই খাওয়া চলবে না, সময় থাকতে সতর্ক হোন
খালি পেটে এই ফলগুলি মোটেই খাওয়া চলবে না, সময় থাকতে সতর্ক হোন
Asteroids Collision: আজ পৃথিবীর গা ঘেঁষে ছুটে যাবে দুই গ্রহাণু, প্রথমে বিকেলে, তার পর রাতে, সতর্কবার্তা দিল NASA
আজ পৃথিবীর গা ঘেঁষে ছুটে যাবে দুই গ্রহাণু, প্রথমে বিকেলে, তার পর রাতে, সতর্কবার্তা দিল NASA
Kangana Ranaut: গাঁধী জয়ন্তীতে বিতর্কিত পোস্ট, ফের বিপাকে কঙ্গনা, 'রাজনীতি ওঁর জন্য নয়', বলছে BJP-ই
গাঁধী জয়ন্তীতে বিতর্কিত পোস্ট, ফের বিপাকে কঙ্গনা, 'রাজনীতি ওঁর জন্য নয়', বলছে BJP-ই
Embed widget