IPL Exclusive: কেকেআরে চাকর মনে হতো! ছেড়ে দিতে স্বস্তি, এবিপি লাইভে বিস্ফোরক কুলদীপের কোচ
Kuldeep Yadav: ছাত্রের সাফল্যের পরের দিনই বড়সড় বোমা ফাটালেন কুলদীপের ব্যক্তিগত কোচ কপিল পাণ্ডে। জানালেন, কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা তাঁর শেষ মরসুমে কী দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল চায়নাম্যান স্পিনারের।
কলকাতা: আইপিএলের IPL) শুরুতেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav)। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের (MI vs DC) বিরুদ্ধে ৪ ওভারে ১৮ রানে তিন উইকেট। শিকারের তালিকায়? রোহিত শর্মা, আনমোলপ্রীত সিংহ ও কায়রন পোলার্ড। যে পারফরম্যান্স দেখে মুগ্ধ সুনীল গাওস্করের মতো কিংবদন্তিও। ম্যাচের সেরাও হয়েছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স ছেড়ে দেওয়ার পর দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগ দেওয়া চায়নাম্যান স্পিনার।
আর ছাত্রের সাফল্যের পরের দিনই বড়সড় বোমা ফাটালেন কুলদীপের ব্যক্তিগত কোচ কপিল পাণ্ডে (Kapil Pandey)। জানালেন, কলকাতা নাইট রাইডার্সে (KKR) খেলা তাঁর শেষ মরসুমে কী দুঃসহ অভিজ্ঞতা হয়েছিল চায়নাম্যান স্পিনারের।
পায়ের চোটের জন্য গত আইপিএলে খেলতে পারেননি কুলদীপ। তার আগের মরসুমে গোটা আইপিএলে তাঁকে ৫টি ম্যাচ খেলিয়েছিল কেকেআর (Kolkata Knight Riders)। মাত্র ১২ ওভার বল করানো হয়েছিল তাঁকে দিয়ে। অথচ এই কুলদীপই একটা সময় সুনীল নারাইনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিপক্ষ শিবিরকে কোণঠাসা রাখতেন। কপিল বলছেন, 'কুলদীপ ভালই করছিল। কিন্তু উপেক্ষিত হয়েছে। ঠিক আছে। দলের কম্বিনেশন ঠিক করতে গেলেও অনেক সময় বাদ দিতে হয়।'
কিন্তু ভেতরের যন্ত্রণা গোপন করতে পারেননি কুলদীপের কোচ। বলছেন, 'কেকেআর যেদিন রিটেন না করে ওকে ছেড়ে দিয়েছিল, আমরা ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। কুলদীপও খুশি হয়েছিল। কারণ আমাদের মনে হয়েছিল, কুলদীপ যেন কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরে চাকর। ওকে খেলানো না হলে ছেড়ে দেওয়াটাই শ্রেয়। তাতে ও অন্য দলে খেলার সুযোগ পাবে। না খেলে খেলে ওর ন্যূনতম মূল্য ২ কোটিতে দাঁড়িয়েছিল। যে ছেলের দাম ছিল ৬ কোটি টাকা, যার ৯-১০ কোটি টাকা পাওয়া উচিত, সে কি না ২ কোটি দাম পেয়েছে। কেকেআরে থেকে আর্থিক দিক থেকেও ক্ষতি হয়েছে কুলদীপের। ওকে সুযোগই দেয়নি। আমি ওকে বলেছিলাম, নিলামে কম দাম পেলেও ক্ষতি নেই। খেলতে হবে। ক্রিকেট খেলার জন্য এত পরিশ্রম। শুধু রোজগারের জন্য নয়। অর্থ পরে। আগে দেশের হয়ে খেলতে হবে। ও ছটফট করছিল নিজেকে নতুন করে চেনানোর জন্য।'
কপিল জানালেন, কেকেআরে সুযোগ না পেয়ে পেয়ে কার্যত মানসিক অবসাদে চলে গিয়েছিলেন তাঁর প্রতিশ্রুতিমান ছাত্র। এখনও যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দিনগুলি। 'কেকেআর যখন ওকে ম্যাচ খেলাচ্ছিল না বা খেলালেও এক ওভারের বেশি বল দেওয়া হচ্ছিল না, আমাদের মনে হয়েছিল ওর দক্ষতায় টিম ম্যানেজমেন্ট বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। যেন ওকে বাধ্য হয়ে খেলাচ্ছে। ওকে ব্যবহারই করা হচ্ছিল না। যে ছেলের সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জোড়া হ্যাটট্রিক আছে, সে বলই পাচ্ছিল না,' বলছিলেন কপিল। যোগ করলেন, 'ওর সঙ্গে কথা বলি। ওকে বোঝাই যে, ঘাবড়ে যেও না। নিজের পরিশ্রম করে যাও। সুযোপ পেলেই যাতে প্রমাণ করতে পারো।'
কেকেআরে ব্রাত্য হয়ে পড়ে মানসিকভাবেও বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন কুলদীপ, জানালেন কপিল। বললেন, 'সেসময় ও নিজে বলেছিল, জানি না স্যার কী সমস্যা হচ্ছে, পর্যাপ্ত সুযোপ পাচ্ছি না। জানি না কেন বল দিচ্ছে না। কী চাইছে বুঝতেই পারছি না। অধিনায়ক বা টিম ম্যানেজমেন্ট ওর ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। অবসাদ গ্রাস করছিল। ওকে বলেছিলাম, মেঘ করলে সূর্য কিছুক্ষণের জন্য ঢাকা পড়ে। কিন্তু তারপর ফের হাজির হয়। আলো ছড়ায়।'
কুলদীপকে মানসিক সমর্থন জানানোর সেই অধ্যায় ভুলতে পারেন না কপিল। বলছেন, 'ওকে বলি, এমন কোনও বোলার নেই যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মার খায়নি। যশপ্রীত বুমরা হোক বা মহম্মদ শামি কিংবা হার্দিক পাণ্ড্য, প্রত্যেকেই কোনও না কোনও দিন রান খরচ করেছে।' যোগ করলেন, '২০২০ সালের আইপিএলে কুলদীপ যে ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসের মঈন আলির হাতে মার খেয়েছিল, সেই ম্যাচে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ওর বলে ক্যাচ ফেলেছিল। ওই একটা ম্যাচ ছাড়া বাকিগুলোতে দারুণ কিছু রান দেয়নি। তারপরেও সুযোগ দেওয়া হয়নি। ভারতের হয়ে খেলা বোলার আইপিএলে সুযোগ না পেলে অদ্ভুত লাগে।'
ছাত্রের কেরিয়ারের তিনটি অন্ধকার অধ্যায় মনে রেখেছেন কপিল। বলছেন, 'উত্তরপ্রদেশে অনূর্ধ্ব ১৫ ট্রায়ালে ও বোলিং করার সময় এক জুনিয়র নির্বাচক বলেছিলেন, বাঁহাতি স্পিন বোলিং করো। ও বাচ্চা ছিল। সেটাই করতে শুরু করে। চায়নাম্যান বন্ধ করে দেয়। আমি ওকে বলি, এভাবে সুযোগ পাবে না। চায়নাম্যানটাই তোমার অস্ত্র। সেটা দেখিয়েই সুযোগ ছিনিয়ে নিতে হবে। আমি ওকে বলি, যে কোনও ট্রায়ালে চায়নাম্যানই করবে। পরে অনূর্ধ্ব ১৭-র ট্রায়ালে সুযোগ পায়। মাঝের সময়টা খুব হতাশ থাকত। আমি এবং ওর বাড়ির লোকেরা মিলে সেই সময় পাশে দাঁড়াই।' তিনি আরও বললেন, 'তারপর ইংল্যান্ডে গিয়ে বৃষ্টি ও ঠান্ডায় বল গ্রিপ করতে সমস্যা হচ্ছিল। বল নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যা হচ্ছিল। ওকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। দেশে ফেরার পর আমার অ্যাকাডেমিতে রোজ ২০ ওভার করে বোলিং করত। চারপাশ থেকে ক্যামেরা লাগিয়ে ওর বোলিংয়ের ভিডিও করে তা বিশ্লেষণ করি। ওর হাতের চেটো খুলছিল না। সেটা শুধরে দিই। তার তিন-চার দিন পরেই বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়া এ দলের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নেয়। তারপর এশিয়া কাপে পাকিস্তান ম্যাচে ভাল বল করে। আইপিএলেও খারাপ করেনি। দিল্লির বিরুদ্ধে ম্যাচে ঋষভ পন্থের উইকেট নিয়ে ম্যাচ টাই করিয়েছিল। তারপরও বাদ পড়েছে। ফের দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাল।'
কুলদীপের কোন দিকটা সবচেয়ে ভাল লাগে? কপিল বলছেন, 'ও মার খেলে উইকেট নেয়। লড়াকু ছেলে। আত্মবিশ্বাসী। কোনও ক্রিকেটারের সাফল্যের নেপথ্যে থাকে সিনিয়র ক্রিকেটারদের অবদান। রোহিত শর্মা অধিনায়ক হওয়ার পর ওকে খুব সমর্থন করেছে। ওকে খেলিয়েছে। ওর বোলিংয়ে তার প্রতিফলন ধরা পড়ছে।'
বোলিংয়ে কী পরিবর্তন করেছেন কুলদীপ? 'পরিবর্তন বলতে, বেশি কিছু করেনি। অনেকদিন সুযোগ পাচ্ছিল না। কলকাতা নাইট রাইডার্স কোনও ম্যাচে খেলিয়েছে, তো পরের ম্যাচে বাদ দিয়েছে। যে ম্যাচে খেলিয়েছে, তাতে দু-এক ওভার বল করিয়েছে। তার মাঝে করোনা আবহে প্র্যাক্টিস করতে পারেনি। চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়। তারপরও ও পরিশ্রম করে গিয়েছে। কিন্তু সুযোগ পাচ্ছিল না। এবার লাইন-লেংথ ঠিক করেছে। আমরা ঠিক করেছিলাম উইকেট তুলতে গিয়ে রান দেব না। পাশাপাশি ও ফ্লাইট বেশি করাচ্ছিল। সেটা কমিয়ে বলের গতি একটু বাড়িয়েছে। ব্যাটার ব্যাকফুটে গিয়ে খেলার স্বাধীনতা পাচ্ছে না। অত সময়ই পাচ্ছে না। তারই ফল এই সাফল্য,' বলছিলেন কপিল। যোগ করলেন, 'আমার অ্যাকাডেমির মাঠে ওর প্র্যাক্টিসের জন্য ম্যাচ আয়োজন করতাম। আইপিএলের আগে কানপুরের স্থানীয় ক্রিকেটের চারটি ৪০ ওভারের ম্যাচ খেলেছে রোভার্স ক্লাবের হয়ে। ৮ ওভার করে বল করেছে। ভাল বল করেছে।'
রবিবার ম্যাচের পর কথা হয়েছে? কপিল বলছেন, 'হয়েছে। ওকে বলেছি, একদিন আনন্দ করে নাও। পরের ম্যাচ নতুন পরীক্ষা। ফের শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।'
আইপিএলে দ্বীপ জ্বেলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি কুলদীপের বোলিংয়ে।