কলকাতা: শনিবারের আগে পর্যন্ত মোটে ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর ঝুলিতে। সেই হর্ষিত রানার (Harshit Rana) হাতেই কি না সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাচের শেষ ওভার তুলে দিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার (Shreyas Iyer)!
হাতে মাত্র ১৩ রানের পুঁজি। ক্রিজে বিধ্বংসী মেজাজে হেনরিখ ক্লাসেন। প্রথম বলেই ছক্কা মারলেন তিনি। সানরাইজার্সের পরিবর্তিত লক্ষ্য দাঁড়াল, ৫ বলে ৭ রান। কর্পোরেট বক্সে বসা শাহরুখ খানও কি তখনও কেকেআরের জয় নিয়ে খুব একটা আশাবাদী ছিলেন? মনে হয় না।
কিন্তু খেলা ঘুরিয়ে দিলেন হর্ষিত। পরের পাঁচ বলে মাত্র ২ রান খরচ করে তুলে নিলেন ২ উইকেট। হাসি ফুটল শাহরুখের মুখে। উৎসবের রাত দেখল ইডেন গার্ডেন্স। আর ম্যাচের পর নাচানাচি চলল দিল্লির ডানহাতি জোরে বোলারকে নিয়ে।
শেষ ওভারে হর্ষিতকে বল দিয়েছিলেন কেন? কেকেআর অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়ার বলছেন, 'সত্যি কথা বলতে কী, শেষ ওভারে যা হোক কিছু ঘটতে পারত। ওদের ১৩ রান দরকার ছিল আর আমাদের হয়ে বল করার জন্য সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছিল না। কিন্তু হর্ষিতের ওপর আমার বিশ্বাস ছিল। জানতাম ভাল কিছুই ঘটবে।'
শেষ ওভারে বল করতে যাওয়ার সময় হর্ষিতও কি উত্তেজনা, স্নায়ুর চাপ টের পাচ্ছিলেন না? কিন্তু তাঁকে শান্ত করেন শ্রেয়সই। দলের তরুণ পেসারকে বলেন, 'এটাই সেই সময় যখন তুমি নায়ক হয়ে উঠতে পারো। এটাই বলেছিলাম হর্ষিতকে। বলেছিলাম, নিজের দক্ষতায় আস্থা রাখো। এই পরিস্থিতিতে যাই হোক না কেন, দল তোমার পাশেই থাকবে।' শ্রেয়স যোগ করেছেন, 'সত্যি কথা বলতে, ২০তম ওভারে বল করতে আসার সময় হর্ষিত স্নায়ুর চাপে ভুগছিল। ওর চোখের দিকে তাকাই। বলি, এটাই তোমার সময় বন্ধু। কাজে লাগাও আর বেশি ভেবো না। ওকে বলেছিলাম, আমরা হারলেও কোনও ব্যাপার নয়। শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস দেখাও। আর দেখো আমি যা বলেছি বা ড্রেসিংরুম থেকে যে নির্দেশ এসেছে সেটা কাজে লাগাতে পারো কি না। তার আগে ক্রিকেটারদের একটা বড়সড় জমায়েত হয়েছিল। আমি শুধু ওকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম আর তাতেই ঐতিহাসিক রাত হয়ে রইল।'
ব্যাটে ২৫ বলে অপরাজিত ৬৪ রান, বল হাতে জোড়া উইকেট। কেকেআরের জয়ের অন্যতম নায়ক আন্দ্রে রাসেলও হর্ষিতের মানসিকতায় মুগ্ধ। বলেছেন, 'শেষ ওভারে ওর শরীরী ভাষা দারুণ ছিল। ও বল করতে চাইছিল। পেশাদার হিসাবে আমরা সকলেই এই শরীরী ভাষাটাই চাই। ও ভয় পেলে খেলাটা আমরা হেরে যেতাম। ও আমাকে বলে শেষ ওভার করতে চায়। তাতেই ওর হাতে বল দেওয়া হয়েছিল এবং ও আমাদের হয়ে আসল কাজটা করে দেয়। প্রথম বলে ছয় খাওয়ার পরেও প্রশ্ন ছিল। তবে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে কাজ শেষ করে আসে হর্ষিত।'
৩৩ রানে তিন উইকেট নেন হর্ষিত। এটাই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর সেরা বোলিং ফিগার।