এক্সপ্লোর
Advertisement
Kuldeep Yadav Interview: মাহি ভাইয়ের সঙ্গে ১৫ মিনিট কথা বললে সব সমস্যা মিটে যেত, আইপিএলের জন্য তৈরি নতুন অস্ত্র, এবিপি আনন্দকে বললেন কুলদীপ
আইপিএল শুরুর আগে এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে দীর্ঘ, একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম সেরা বোলিং-অস্ত্র, জাতীয় দলের ক্রিকেটার কুলদীপ যাদব।
কলকাতা: তাঁর স্পিনের ভেল্কি কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবিরের অন্যতম ভরসার জায়গা। একা হাতে বহু ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ঈর্ষণীয় রেকর্ড। দুবছর আগে এশিয়া কাপে যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছিলেন। আইপিএল শুরুর আগে এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে দীর্ঘ, একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন নাইটদের অন্যতম সেরা বোলিং-অস্ত্র, জাতীয় দলের ক্রিকেটার কুলদীপ যাদব। করোনা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অবসর, নিজের প্রস্তুতি, সব ব্যাপারেই অকপট চায়নাম্যান স্পিনার।
প্রশ্ন: প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটে আপনার শেষ ম্যাচ ছিল ৫ ফেব্রুয়ারি। হ্যামিল্টনে নিউজিল্য়ান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে। তারপর এতদিন মাঠের বাইরে থাকা কতটা কঠিন?
কুলদীপ যাদব: উফফ। সত্যি দীর্ঘদিন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে। ৬-৭ মাস হয়ে গেল। আর তিন সপ্তাহের মধ্যে আইপিএল শুরু হবে। মাঠে ফিরে পারফর্ম করাটা কঠিন। ম্যাচ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সকলেরই কিছুটা সময় লাগে। তবে আমি প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখিনি। কানপুরে যে অ্যাকাডেমিতে খেলে বড় হয়েছি, সেখানে প্র্যাক্টিস করেছি। ৮-১০টা ৪৫ ওভারের ম্যাচও খেলেছি। আমার খুব একটা সমস্যা হবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন: আইপিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। তার আগে ৪৫ ওভারের ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি নেওয়া বেশ অভিনব শোনাচ্ছে...
কুলদীপ: আমরা যে অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছি, তার মধ্যে এতদিন পর ক্রিকেট মাঠে ফেরা এবং সফল হওয়ার জন্য সবার আগে দরকার বাইশ গজে যতটা সম্ভব সময় কাটানো। ৪৫ ওভারের ম্যাচ আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। চুটিয়ে ব্যাটিং-বোলিং করেছি। আর আমি বরাবর বিশ্বাস করি যে, লম্বা ফর্ম্যাটে খেলে প্রস্তুতি নিলে টি-টোয়েন্টিতে অনায়াসে মানিয়ে নেওয়া যায়।
প্রশ্ন: মহম্মদ শামির মতো কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকায় ছন্দ নষ্ট হতে পারে। আপনার সেরকম আশঙ্কা হয়েছে কখনও?
কুলদীপ: (হাসি) আমার অন্তত তা মনে হয়নি। কানপুরে অ্যাকাডেমির মাঠে প্রথম যে প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলি, তাতে ৭ উইকেট নিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত কোনও ছন্দের অভাব টের পাইনি। হ্যাঁ, মাঠে নেমে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে। তবে সেটা এক সপ্তাহ বড়জোর। কানপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাতে গোনা সামান্য কয়েকজন। তাই মাঠ থেকে বেশিদিন দূরে সরে থাকতে হয়নি।
প্রশ্ন: আবু ধাবি পৌঁছনোর আগে কানপুরে আপনার শৈশবের কোচ কপিল পাণ্ডের তত্ত্বাবধানে প্র্যাক্টিস করেছেন। সেই অনুশীলন কতটা কার্যকরী হয়েছে?
কুলদীপ: কপিল স্যার ছোট থেকেই আমার খেলা দারুণ বোঝেন। সবসময়ই আমাকে সাহায্য করে এসেছেন। এই করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে গৃহবন্দি অবস্থায় থাকার সময় নিজের ক্রিকেট নিয়ে, নিজের বোলিং নিয়ে অতিরিক্ত ভাবছিলাম। কপিল স্যার কোনও নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসতে দেননি। আমার ফিটনেস হোক বা বোলিং, স্যারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল সব দিকে। যখনই কোনও কোচের অধীনে প্রশিক্ষণ নেবেন, আপনার কাজ হবে তাঁর ওপর ভরসা রাখা। আমি কপিল স্যারের পরামর্শ অনুসরণ করে গিয়েছি। তাতে বরাবর ভীষণ উপকৃতই হয়েছি।
প্রশ্ন: সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আগেও খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা কতটা কাজে লাগবে বলে মনে হয়?
কুলদীপ: ইউএই-তে খেলার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে আমাকে সাহায্য করবে। এশিয়া কাপে দু বছর আগে ১০ উইকেট নিয়ে রশিদ খানের সঙ্গে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছিলাম। ওখানকার পিচ শুকনো হবে। সেই সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। দাবদাহের কারণে বাইশ গজ ভাঙবে। তাছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বড় রান নিশ্চিত করতে পিচে প্রচুর রোল করা হবে। তাতে উইকেট আরও ঝুরঝুরে হবে। বল ঘুরবে। স্পিনারদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। স্পিনারদের হাতেই থাকবে টুর্নামেন্টের চাবিকাঠি। ইডেনে আমরা একেবারেই এরকম উইকেট পাই না।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে মনে করা হয় ব্যাটসম্যানদের দাপট দেখানোর জায়গা। আস্তিনে কোনও নতুন অস্ত্র নিয়ে নামবেন এবারের আইপিএলে?
কুলদীপ: বোলিং অ্যাকশনে সামান্য পরিবর্তন এনেছি। বেশ কয়েকটা বৈচিত্র নিয়ে ঘষামাজা করছি। তবে শুধু আইপিএল নয়, আমার ক্রিকেট ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কয়েকটা অস্ত্র আয়ত্ত করার চেষ্টা করছি। আশা করছি আইপিএলেই আমার নতুন অস্ত্র দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন: আপনি সবসময় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে মুগ্ধতার কথা বলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ধোনির অবসর কত বড় শূন্যতা তৈরি করল?
কুলদীপ: আমি মাহি ভাইয়ের বড় ভক্ত। তরুণ ক্রিকেটারদের তুলে আনার ব্যাপারে দারুণ ভূমিকা ছিল ওর। সবসময় আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। মাহি ভাই এত ইতিবাচক একটা চরিত্র যে, শুধু ক্রিকেট কেন, জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়লে ১০-১৫ মিনিট কথা বলুন। সব হতাশা দূর হয়ে যাবে। সব সমস্যা কেটে যাবে। আমার কেরিয়ারে ওর অবদান ভোলার নয়। সবসময় আমাকে উত্যক্ত করত, যাতে আমি নিজের সেরাটা দিতে পারি। বকাও খেয়েছি নিজের দক্ষতা অনুযায়ী বল করতে না পারলে। আমার আর যুজির (যুজবেন্দ্র চাহাল) প্রতি মাহি ভাই বিশেষ স্নেহ দেখিয়েছে বরাবর। খুব মিস করব। ওর অবসর শুধু ভারতীয় ক্রিকেটে নয়, বিশ্বক্রিকেটেই অপূরণীয় শূন্যতা তৈরি করল। তবে ওর অবসরের সিদ্ধান্ত জেনে একটা কথা বলতে চাই। থ্যাঙ্ক ইউ মাহি ভাই। আমাদের এত স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।
প্রশ্ন: কলকাতা নাইট রাইডার্সের এবারের দলটা কেমন হয়েছে বলে আপনার ধারণা?
কুলদীপ: আইপিএল এমন একটা টুর্নামেন্ট যে, এখানে এক দলের সঙ্গে আর একটার তফাত নেই বললেই চলে। সব দলই সমান শক্তিশালী। তাই কাগজে-কলমে কেউ এগিয়ে নেই। কলকাতা নাইট রাইডার্স দলটা ভালই হয়েছে। প্যাট কামিন্সের মতো পেসার, অইন মর্গ্যানের মতো ব্যাটসম্যান, টম ব্যান্টনের মতো অলরাউন্ডারের অন্তর্ভুক্তি আমাদের দলকে অনেক সমৃদ্ধ করেছে। পাশাপাশি আমাদের ভারতীয় ক্রিকেটারেরাও দুর্দান্ত। শুভমান গিল, শিবম মাভি, কমলেশ নাগরকোটিরা রয়েছে। দলের ভারসাম্য চমৎকার।
প্রশ্ন: করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনধারায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বাদ যায়নি ক্রিকেটও। নানা বিধিনিষেধ এসেছে। বোলাররা এখন আর বল পালিশ করার জন্য থুতুর ব্যবহার করতে পারবেন না। কতটা কঠিন হবে এই পরিস্থিতিতে বল করা?
কুলদীপ: (হাসি) আমি আপাতত মনে রাখার চেষ্টা করছি যে, বলে থুতু লাগানো যাবে না। নিয়ম ভাঙলেই শাস্তির মুখে পড়তে হবে। তবে এটা মনে রাখাটা কঠিন। ছোট থেকে ক্রিকেট খেলে পুরোটাই এমন অভ্যাসের মতো হয়ে গিয়েছে। তবু সতর্ক থাকতেই হবে। পাশাপাশি দর্শকহীন মাঠে খেলা খুব কঠিন। ইডেনে আমাদের ম্যাচ থাকলে প্রায় ৭০ হাজার দর্শক গলা ফাটায়। সেখানে ফাঁকা মাঠে পারফর্ম করাটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে বৈকি। তবে আমরা পেশাদার। সবরকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।
প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে একাধিকবার করোনা পরীক্ষা করাতে হচ্ছে আপনাদের। এতে মানসিক কোনও ভীতি তৈরি হয় কি?
কুলদীপ: আমার পাঁচবার পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এরপর প্রত্যেক সপ্তাহে দুবার করে করোনা পরীক্ষা হবে। প্রথম বারদুয়েক ভয় লেগেছিল। আশঙ্কা হচ্ছিল, কী জানি কী রিপোর্ট হবে! তবে প্রথম দুবার নেগেটিভ আসার পর থেকে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। যদিও এতবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে যে, মাঝে-মধ্যে বিরক্তিকর লাগছে।
প্রশ্ন: নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কী করছেন?
কুলদীপ: মাস্ক পরছি সবসময়। স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি। অক্সিমিটারে নিয়মিত সময় অন্তর শরীরের অক্সিজেন লেভেল মাপা হচ্ছে। পালস দেখা হচ্ছে। সব ব্যবস্থাই কেকেআর দল থেকে করেছে। পাশাপাশি পারস্পরিক দূরত্ববিধি মেনে চলছি।
প্রশ্ন: আইপিএলে নানারকম বিধিনিষেধ এসেছে। সন্ধ্যায় সতীর্থদের ঘরে গিয়ে আড্ডা বন্ধ। জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকে পড়লে একসঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়া, শপিং সব বন্ধ। নিজেকে মানসিকভাবে তরতাজা রাখার জন্য কী করবেন?
কুলদীপ: (হাসি) সত্যিই বিচিত্র অভিজ্ঞতা হতে চলেছে। তবে আমি প্রচুর ঘুমোব বলে ঠিক করেছি। সময় কাটানোর জন্য পাবজি খেলব। আত্মবিশ্লেষণেরও দারুণ সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে এই ফুরসতে। নিজেকে নিয়ে ভাবব। নিজের ইচ্ছেগুলোকে বোঝাটা কখনও কখনও খুব জরুরি হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সময় পেলে সিনেমা দেখছি। ল্য়াপটপে খুদা হাফিজ সিনেমাটা দেখলাম। আরও কিছু সিনেমা দেখব।
প্রশ্ন: শেষ যেবার মরুশহরে আইপিএলের একটা অংশ খেলা হয়েছিল, কলকাতা নাইট রাইডার্স চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার আপনারা ফের আবু ধাবিতে বেসক্যাম্প করেছেন। পয়া হোটেলে থাকছেন...
কুলদীপ: এগুলো ভাবতে ভাল লাগে। তবে আমাদের ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। আশা করছি সেটা পারবও। আমরা আত্মবিশ্বাসী। কেকেআর উইল রক দিজ ইয়ার।
" কানপুরে অ্যাকাডেমির মাঠে প্রথম যে প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলি, তাতে ৭ উইকেট নিয়েছিলাম। সৌভাগ্যবশত কোনও ছন্দের অভাব টের পাইনি। হ্যাঁ, মাঠে নেমে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে। তবে সেটা এক সপ্তাহ বড়জোর। "
-কুলদীপ যাদব
" আইপিএল এমন একটা টুর্নামেন্ট যে, এখানে এক দলের সঙ্গে আর একটার তফাত নেই বললেই চলে। সব দলই সমান শক্তিশালী। তাই কাগজে-কলমে কেউ এগিয়ে নেই। "
-কুলদীপ যাদব
" দর্শকহীন মাঠে খেলা খুব কঠিন। ইডেনে আমাদের ম্যাচ থাকলে প্রায় ৭০ হাজার দর্শক গলা ফাটায়। সেখানে ফাঁকা মাঠে পারফর্ম করাটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে বৈকি। "
-কুলদীপ যাদব
খেলার (Sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
খবর
খবর
আন্তর্জাতিক
Advertisement