CAB Local Cricket: অভিযোগ জমা পড়েছিল আগেই, কালি ছেটানোর চেষ্টা! গড়াপেটা কাণ্ডে পাল্টা বিস্ফোরণে তোলপাড়
ABP Live Exclusive: মহমেডান শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ম্যাচে একটা সময় পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও পয়েন্ট পাওয়া যাবে না জেনে ক্রিকেটারদের মনোবল ভেঙে যায়।
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: স্থানীয় ক্রিকেটে ম্যাচ গড়াপেটার (Match Fixing) অভিযোগে তোলপাড় কলকাতা ময়দান। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের ক্রিকেটার শ্রীবৎস গোস্বামীর (Shreevats Goswami) সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট যে বিতর্কে ঘৃতাহুতির কাজ করে। সংশ্লিষ্ট ম্যাচের একটি ভিডিও পোস্ট করে এক সময়কার বিরাট কোহলির (Virat Kohli) সতীর্থ দাবি করেন, এটি গড়াপেটা ছাড়া আর কী! গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে সিএবি। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন, ২ মার্চ, শনিবার টুর্নামেন্ট কমিটির বৈঠকে গোটা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেমে অবশ্য উঠে আসছে পরস্পরবিরোধী কিছু তথ্যও। সল্ট লেকে ভিডিওকন মাঠে টাউন ক্লাব বনাম মহমেডানের ম্যাচে গড়াপেটার অভিযোগ উঠেছিল। বলা হচ্ছিল, টাউন ক্লাবকে ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছে মহমেডান। বদলে তাদের নিয়ম ভেঙে ভিন রাজ্যের ক্রিকেটার খেলানো নিয়ে কোনও অভিযোগ করবে না বলে নাকি আশ্বাস দিয়েছিলেন টাউন ক্লাবের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত দাস। যিনি সিএবি-র যুগ্মসচিবও।
কিন্তু পাল্টা প্রশ্নও তোলা হচ্ছে সিএবি-র একাংশ থেকে। বলা হচ্ছে, সুপার ডিভিশন লিগে শীর্ষস্থানে রয়েছে মহমেডান। টাউন ক্লাব বিতর্কিত ম্যাচের আগেই ৪২ পয়েন্ট পেয়ে ভাল জায়গায় ছিল। দুই দলেরই পরের পর্বে যাওয়া নিশ্চিত। যেখানে দুই ক্লাবের কারওই অবনমন বাঁচানো বা যোগ্যতা অর্জন করার মতো মরণ-বাঁচন পরিস্থিতি নেই, সেখানে গড়াপেটার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে! ম্যাচ ছেড়ে লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে না টাউন বা মহমেডান, কোনও ক্লাবেরই। গড়াপেটার প্রসঙ্গ তোলার নেপথ্যে অন্য অভিসন্ধি থাকতে পারে বলেও পাল্টা অভিযোগ করা হচ্ছে।
গোটা ঘটনায় যাঁকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছিল, টাউন ক্লাবের কর্তা তথা সিএবি-র যুগ্মসচিব দেবব্রত দাস এবিপি আনন্দকে বললেন, '২৬-২৮ ফেব্রুয়ারি টাউন বনাম মহমেডান ম্যাচটি ছিল। আমি প্রথম দিন মাঠে গিয়ে জানলাম যে, ওরা হর্ষিত সাইনি নামে একজন ভিন রাজ্যের ক্রিকেটার খেলাচ্ছে। হর্ষিত গত মরশুমে হরিয়ানার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেছেন। কিন্তু নিয়ম মেনে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট জমা না দিয়ে এবার সিএবি লিগে খেলছেন। টাউন ম্যাচের আগেও গোটা তিনেক ম্যাচ খেলেছেন। আমি ম্যাচের প্রথম দিন, ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরেই এ নিয়ে অভিযোগপত্র ক্লাবের প্যাডে লিখে সিএবি-র নিয়ম মেনে ৩০ টাকা-সহ জমা করি। সেদিন বিকেলে আমাদের দলের অধিনায়ক ও ম্যাচের পর্যবেক্ষককে ঘটনাটি জানিয়ে রেখেছিলাম। ফলে অভিযোগ করব না বলে ম্যাচ ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়ার তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।'
পাল্টা অভিযোগে ম্যাচের পর্যবেক্ষককেও রেয়াত করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, নিয়ম ভেঙে পর্যবেক্ষক ওই অভিযোগ জমা দেওয়ার কথা মহমেডান শিবিরে জানিয়ে দেন। দেবব্রত বলছেন, 'অভিযোগ জমা দেওয়ার কথা জানাজানি হতেই মহমেডানের কয়েকজন কর্মকর্তা দৌড়ে আসেন। আমাকে অভিযোগ প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। আমি জানাই, সেটা সম্ভব নয়। অভিযোগ জানিয়েছি। এবার আপনাদের ক্রিকেটার অবৈধ কি না, সেটা সিএবি দেখবে। তখনই মহমেডান কর্তারা জানান, তাহলে আর ম্যাচ খেলে কী লাভ। আমি বলি, আমরা খেলব। এর বেশি ওদের সঙ্গে কোনও কথা হয়নি।' সিএবি-র অন্যতম শীর্ষ কর্তা যোগ করেন, 'মহমেডানের ক্রিকেট কর্তা দীপক সিংহ জানতে চেয়েছিলেন, কোনও বিকল্প রাস্তা আছে কি না। জানাই, আর কিছু সম্ভব নয়। ব্যাপারটা সিএবি দেখবে। তারপরই ওরা ম্যাচ খেলার ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেয়।'
সিএবি-র নিয়ম হচ্ছে, এনওসি ছাড়া ভিন রাজ্যের ক্রিকেটার খেলানোর অভিযোগ প্রমাণিত হল সংশ্লিষ্ট ম্যাচে সেই ক্লাবের পুরো পয়েন্ট কাটা যাবে। পুরো ১০ পয়েন্ট দেওয়া হবে অভিযোগকারী ক্লাবকে। এক্ষেত্রে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ পয়েন্টেই পেয়ে যাবে মহমেডান ক্লাবের প্রতিপক্ষ টাউন ক্লাব। কোনও পয়েন্ট পাবে না মহমেডান। ম্যাচটাই কার্যত বাতিল বলে গণ্য হবে। যা ওয়াকওভার দেওয়ার সামিল। তবে সেক্ষেত্রেও দুই দলেরই পরের পর্বে যাওয়া আটকাবে না কোনওভাবেই। সুপার ডিভিশন লিগে দুই দলেরই আর একটা করে ম্যাচ বাকি আছে।
বলা হচ্ছে, কোনও পয়েন্ট পাবেন না জানাজানি হতেই মহমেডান ক্রিকেটারেরা আর মাঠে নামতেই চাইছিলেন না। মহমেডান শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ম্যাচে একটা সময় পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চললেও পয়েন্ট পাওয়া যাবে না জেনে ক্রিকেটারদের মনোবল ভেঙে যায়। সেই কারণেই দায়সারা গোছের ব্যাটিং শুরু হয়। উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তবে এর নেপথ্যে ম্যাচ গড়াপেটার মতো অন্য কোনও অভিসন্ধি ছিল না বলেই দাবি করা হল মহমেডান ক্লাব থেকেও।
সিএবি যুগ্মসচিবকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে বলে পাল্টা তোপ দাগা হচ্ছে সিএবি-র কোনও কোনও অংশ থেকে। বল এখন সিএবি-র কোর্টে। এ ব্যাপারে বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা কী পদক্ষেপ করে, দেখার অপেক্ষায় ময়দান।
আরও পড়ুন: স্থানীয় ম্যাচে গড়াপেটার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ কোহলির সতীর্থের, রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল সিএবি
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে