আইপিএল কেলেঙ্কারি নিয়ে মুখ খুললেন ধোনি, জানালেন নিজের হতাশার কথাও
নয়াদিল্লি: ‘রোয়ার অব দ্য লায়ন’। সিংহগর্জন। অতি সরলীকরণে পশুরাজের হুঙ্কার। যাকে বলে অস্তিত্ব জানান দেওয়া। সেটাই করলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। মৌনব্রত ভেঙে আইপিএলের কলঙ্কিত অধ্যায় নিয়ে কথা বললেন মাহি। সোজাসাপটা এবং বলিষ্ঠ বক্তব্য তাঁর। সাফ জানিয়ে দিলেন, স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে তাঁদের কোনও হাত ছিল না। ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফে ভুল হয়েছে, তবে ক্রিকেটাররা ছিল একেবারেই নির্দোষ। কোনও রকম রাখঢাক না করেই তিনি জানালেন, আইপিএল থেকে বছর দুয়েকের জন্য চেন্নাইয়ের উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তার খেসারত দিতে হয়েছে ক্রিকেটারদেরই। এবং ওই সময়ে চেন্নাইয়ের নির্বাসন প্রভাব ফেলেছিল তাঁর জীবনেও, স্পষ্ট জানিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
সম্প্রতি ‘রোয়ার অব দ্য লায়ন’ নামের একটি তথ্যচিত্রে আইপিএলের কলঙ্কিত অধ্যায় নিয়ে মুখ খুলেছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সেখানে প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ঘটনা তাঁকে সবথেকে বেশি ব্যথিত করেছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারত গ্রুপ স্টেজ থেকে বিদায় নেওয়ার পর যতটা হতাশ হয়েছিলেন, তাঁর থেকেও করুণ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ২০১৩ সালে। ধোনি ওই তথ্যচিত্রে বলেন, “২০১৩ সাল ছিল আমার জীবনের সবথেকে কঠিনতম অধ্যায়। তার আগে আমি কখনও এতটা বিষন্ন হয়নি। ২০০৭ সালে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ফিরে আসাও দুঃখজনক ছিল। আমরা ভাল ক্রিকেট খেলিনি সেকারণেই হেরেছিলাম। ব্যস গোটা বিষয়টা ওখানেই থেমে গিয়েছিল। কিন্তু, ২০১৩ সালের পরিস্থিতিটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। গোটা দেশ গড়াপেটা আর স্পট ফিক্সিং নিয়ে আলোচনা করেছে। ” ধোনি প্রশ্ন তুলেছেন, এখানে ক্রিকেটারদের কী দোষ ছিল?
তথ্যচিত্রের প্রথম এপিসোডে ধোনিকে বলতে শোনা যায়, “সিএসকে-কে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হল। একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হল চারিদিকে। অধিনায়ক হিসেবে তো বটেই ব্যক্তি হিসেবেও ভাবছিলাম, এখানে দলের ভুল কোথায়?” তিনি এও বলেন, “হ্যাঁ, ফ্র্যাঞ্জাইজির তরফে কিছু ভুল হয়েছিল। কিন্তু ক্রিকেট কেলেঙ্কারিতে আমার নাম জড়িয়ে দেওয়া হল। মিডিয়ায় এমনও বলা হল, দল স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত, আমি জড়িত। এটা কি আদৌ সম্ভব? স্পট ফিক্সিং যে কেউ করতে পারে। একজন আম্পায়ার, একজন ব্যাটসম্যান, একজন বোলার, যে কেউই পারে। কিন্তু, ম্যাচ গড়াপেটা? সেখানে সিংহভাগ ক্রিকেটার জড়িত থাকে। আমি কাউকে কিছু বলিনি। কারণ, আমি চাইনি আমার ক্রিকেটে এর প্রভাব পড়ুক। আমি আজ যেখানে দাঁড়িয়ে, যা কিছু অর্জন করেছি সবই ক্রিকেটের দৌলতে। আমি মনে করি ম্যাচ গড়াপেটা খুনের থেকেও বড় অপরাধ। এমন অব্স্থায় এমন একটি ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে দেওয়ার ফলে আমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।”
ম্যাচের ফলে বিস্মিত হয়ে যদি কেউ মনে করে গড়াপেটা হয়েছে, তাহলে ক্রিকেটের উপর থেকেই মানুষের বিশ্বাস উবে যাবে। এমন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলা ধোনির পক্ষে ছিল অসহনীয়। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ঘটনার তদন্তের পর ২০১৫ সালে চেন্নাই সুপার কিংস সহ রাজস্থান রয়্যালসকেও ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। শীর্ষ ন্যায়ালয় নিযুক্ত তিন সদস্যের একটি কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যার প্রধান ছিলেন, সিজিআই আর এম লোধা। গত বছর নির্বাসন কাটিয়ে আইপিএলে ফিরেছে চেন্নাই। এবং চ্যাম্পিয়নও হয়েছে তাঁরা।