(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Somdev Dev Burman Exclusive: সানিয়ারা কেউ ফেভারিট নয়, তবে সেরা ছন্দে থাকলে অঘটন সম্ভব, বলছেন সোমদেব
অলিম্পিক্সে ভারতীয় টেনিসের স্বপ্ন নির্ভর করছে মহিলা ডাবলসে সানিয়া মির্জা-অঙ্কিতা রায়না জুটি ও পুরুষ সিঙ্গলসে সুমিত নাগালের ওপর। পদক জয়ের সম্ভাবনা কতটা, এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন সোমদেব দেববর্মন।
কলকাতা: আর দুদিন পরেই শুরু 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ'। অলিম্পিক্সে ভারতীয় টেনিসের স্বপ্ন নির্ভর করছে মহিলা ডাবলসে সানিয়া মির্জা-অঙ্কিতা রায়না জুটি ও পুরুষ সিঙ্গলসে সুমিত নাগালের ওপর। পদক জয়ের সম্ভাবনা কতটা, এবিপি লাইভ-কে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে জানালেন সোমদেব দেববর্মন।
সানিয়া-অঙ্কিতা ও সুমিতের পদক সম্ভাবনা
খুব কঠিন লড়াই অপেক্ষা করে রয়েছে ওদের জন্য। সত্যি বলতে কী ওরা কেউই ফেভারিট নয়। সুমিত তো একেবারে শেষ মুহূর্তে যোগ্যতা অর্জন করেছে। বড়জোর এক সপ্তাহ সময় পেয়েছে। এখনও টোকিও পৌঁছতে পারেনি। খুব শীঘ্রই পৌঁছে যাবে। ওর কাছে এই সুযোগ বিস্ময়করই। হার্ডকোর্টে ওর মরসুমটা ভাল যায়নি। তবে ক্লে কোর্টে ভাল খেলে সুমিত। পুরুষদের টেনিসে যা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তাতে ওর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রথম দুই রাউন্ড জিততে পারলেই সেটা ওর কাছে কৃতিত্বের হবে। সানিয়া-অঙ্কিতার প্রসঙ্গে বলব, সানিয়া অনেক সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু তার বেশিরভাগই মার্টিনা হিঙ্গিসের পাশে খেলে। এবার তাই অন্যরকম পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে ওকে। অঙ্কিতা ফেড কাপে ভাল খেলেছে। গত বছরই প্রথমবারের জন্য দেশকে ওয়ার্ল্ড গ্রুপের প্লে অফে তুলেছিল। ওরা অনেক ম্যাচ খেলেছে একসঙ্গে। বড় ম্যাচও খেলেছে। তবে অলিম্পিক্স সম্পূর্ণ আলাদা। ওদের পদক সম্ভাবনা নিয়ে পূর্বাভাস করতে গেলে ড্রয়ের জন্য় অপেক্ষা করতে হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা ড্র প্রকাশিত হবে। কাদের বিরুদ্ধে ওদের খেলতে হবে দেখে বলতে পারব ওরা কতদূর পৌঁছবে। তবে সানিয়া-অঙ্কিতা বা সুমিত, কেউই ফেভারিট নয়।
অনেকদিন পর কোর্টে, চাপে থাকবেন সানিয়া?
মনে হয় না। সানিয়া বরং খুশিই হবে এতদিন পর কোর্টে নামতে পেরে। মা হওয়ার পর কোর্টে ফেরাটা সহজ নয়। সানিয়া সেটা করে দেখিয়েছে। ও অনেক চাপ সামলে এসেছে। তবে দেখতে হবে কতটা ছন্দে রয়েছে। শুরুতেই যদি বাছাই কোনও জুটির সামনে পড়ে যায়, তাহলে ওদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যেতে পারে। অন্ততপক্ষে দু-একটা ম্যাচ জিততে হলে ওদের নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে হবে। চাপ নয়, বরং সানিয়া ম্যাচ ফিট এবং ছন্দে রয়েছে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।
চোট সারিয়ে সফল হওয়ার চ্যালেঞ্জ
যে কোনও খেলোয়াড়ের কাছেই চোট সারিয়ে ফেরাটা চ্যালেঞ্জিং। কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর কোর্টে ফিরতে আমাকে কী কসরত করতে হয়েছিল জানি। আমি কল্পনাও করতে পারছি না সানিয়াকে কী কঠিন অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। চোট সারিয়ে ফেরাটা সকলের কাছেই কঠিন। রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদালের মতো মহাতারকাদেরও এই কঠিন অভিজ্ঞতা হয়েছে। দুবারের অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়ন অ্যান্ডি মারেও দীর্ঘদিন পর চোট সারিয়ে ফিরছে। সবচেয়ে বড় লড়াইটা হয় নিজের মধ্যে। কারণ, চোট সারিয়ে যে ফিরছে সে জানে নিজের সেরা ছন্দে থাকলে কী করতে পারে। আবার এও বুঝতে পারে, কোর্টে প্রত্যাবর্তনের সময় কী কী প্রতিবন্ধকতা তাকে সামলাতে হচ্ছে। অস্ত্রোপচারের পর নিজের সেরাটা বার করে আনা ভীষণ কঠিন কাজ।
অভিজ্ঞ-অনভিজ্ঞ জুটি
সানিয়া নিজের কেরিয়ারের চতুর্থ অলিম্পিক্সে নামছে। অন্য দিকে অঙ্কিতার এটা প্রথম অলিম্পিক্স। তবে অঙ্কিতা পার্টনার সানিয়ার বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা জিতে নিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ও ভারতের সেরা মহিলা টেনিস তারকা। সানিয়া জয় ছাড়া কিছু ভাবছে না। আর সেই কারণেই অঙ্কিতাকে বেছে নিয়েছে নিজের ডাবলস পার্টনার হিসাবে। ওরা ফেড কাপে একে অন্যের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলেছে। সানিয়া জানে পদক জেতার সেরা সম্ভাবনা রয়েছে অঙ্কিতার সঙ্গেই। তবে সানিয়ার তুলনায় ওর ডাবলস পার্টনার যে অনেকটাই অনভিজ্ঞ, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও নির্দিষ্ট দিনে নিজেদের সেরা ছন্দে থাকলে কে বলতে পারে ওরা সকলকে চমকে দেবে না! ড্র না বেরনো পর্যন্ত তাই অপেক্ষা করতে হবে।
শেষ মুহূর্তে সুযোগ কি চ্যালেঞ্জ সুমিতের?
সুমিত বা ওর কোচিং টিমের কেউই ভাবতে পারেনি যে, অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জন করবে। গত তিন-চার মাস ধরে ও জার্মানিতে ক্লে কোর্ট টুর্নামেন্ট খেলে বেড়াচ্ছিল। ক্লে কোর্টে খেলবে বলে উইম্বলডনেও যায়নি। ক্লে কোর্টেই ও স্বচ্ছন্দ। অলিম্পিক্স টেনিস হবে হার্ডকোর্টে যেটা সুমিতের প্রিয় সারফেস নয়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে জানতে পেরেছে যে, ও অলিম্পিক্সে খেলবে। এতে ওর প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়বেই। ও আগে থেকে অলিম্পিক্সের যোগ্যতা অর্জনের ব্যাপারে জানতে পারলে আরও ভাল প্রস্তুতি নিতে পারত। তবে অনেক সময় আচমকা সুযোগ পেয়ে গেলে নিজের সেরাটা বেরিয়ে আসে। ও নিশ্চয়ই এই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া থাকবে। কোর্টে নেমে নিজের সেরা খেলাটা খেলতে পারলে দেশের সকলকে গর্বিত হওয়ার মতো মুহূর্ত উপহার দিতেই পারে।
রোহন-সানিয়া বনাম এআইটিএ
দুর্ভাগ্যজনক। অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক। যাই ঘটে থাকুক না কেন, ঘটনা হচ্ছে, আমরা পুরুষ ডাবলস দল পাঠাতে পারিনি। সবচেয়ে বড় ভুলটা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে বলা যে, আমাদের পুরুষ ডাবলস দল পাঠানোর সুযোগ রয়েছে এবং রোহন বোপন্না ও সুমিত খেলতে পারে। আর সেটা সম্ভব হলে মিক্সড ডাবলসে রোহন-সানিয়াকেও দেখা যেতে পারে। এই ধরনের বিতর্ক অনায়াসে এড়ানো যেত। ভারতের প্রাক্তন একজন টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে আমি খুব হতাশ। আবারও বলছি, খুব সহজে এই বিতর্ক এড়ানো যেত। যা হয়েছে, হয়েছে। এখন ভাল খেলার দিকেই সকলকে মনোনিবেশ করতে হবে।
অলিম্পিক্স বিরাট সম্মান
জীবনের সবচেয়ে বড় সম্মান হয়তো অলিম্পিক্সের মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা। মনে আছে মাত্র ৭ বছর বয়সে বার্সোলেনা অলিম্পিক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখেছিলাম। তখন থেকে অলিম্পিক্সে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। বিশ্বের সেরা অ্যাথলিটদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো কিছু আর হয় না। একজন প্লেয়ার, তার পরিবার, কোচিং স্টাফ, সকলে মিলে যে আত্মত্যাগ করে তা সঠিক স্বীকৃতি পায় সেই খেলোয়াড় অলিম্পিক্সে নামার সুযোগ পেলে। অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছিলাম বলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। দারুণ লাগছে যে, ১২০ জনেরও বেশি অ্যাথলিট অলিম্পিক্সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে।
ভারতীয় টেনিস দলকে পরামর্শ
লড়াই করো। নিজের সেরাটা দাও। প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না। দর্শক হিসাবে যাদের হয়ে গলা ফাটাচ্ছি, তারা কোর্টে নেমে নিজেদের সেরাটা দিলেই হবে। এতদিন খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে জানি, ফলাফল সব সময় আমাদের হাতে থাকে না। ট্রেনিং শেষ। প্রস্তুতি সারা। এবার কোর্টে নেমে দেশকে গর্ব করার মতো মুহূর্ত এনে দাও।