এক্সপ্লোর
বিরাটকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন, বাঙালি ক্রিকেটার এখন রেলকে সিগন্যাল দেখাচ্ছেন
কোচিং অ্যাকাডেমির হয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিরুদ্ধেও একবার খেলেছিলেন শুভজিৎ। বলছেন, ‘‘বিহারে সেই ম্যাচে ধোনি হেলিকপ্টার শট মারতে গিয়ে তিনটি ব্যাট ভেঙেছিল। ছ’টি বল হারিয়েছিল।"
![বিরাটকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন, বাঙালি ক্রিকেটার এখন রেলকে সিগন্যাল দেখাচ্ছেন Subhajit Chakraborty, now looking after signalling system as a railway employee, claimed Virat Kohli's wicket 11 years back বিরাটকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন, বাঙালি ক্রিকেটার এখন রেলকে সিগন্যাল দেখাচ্ছেন](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2020/06/15231030/web-virat-still-150620.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: অফস্টাম্পের বাইরে পড়া বল মিড উইকেট বা স্কোয়্যার লেগ বাউন্ডারিতে ফেলে দিচ্ছেন অনায়াসে। বিরাট কোহলির এই শট মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। পরে শটটির নামকরণ হয়েছে ‘হুইপ শট’। চাবুকের মতো ব্যাট চালিয়ে কীভাবে এত অনায়াসে বলকে নিজের পছন্দের জায়গায় পাঠান বিরাট, বিস্মিত হয়ে ভেবেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সকলেই।
বাংলার ময়দানে এমন একজন আছেন, যিনি বিরাটের এই ব্রহ্মাস্ত্রের সন্ধান পেয়েছিলেন ১১ বছর আগেই! যখন ক্রিকেটদুনিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেননি বিরাট। তবে তাঁকে সেরা সম্ভাবনা বলে দেখতে শুরু করে দিয়েছিল বিশ্ব।
সেই বঙ্গ ক্রিকেটারের নাম? শুভজিৎ চক্রবর্তী। বড়সড় চেহারার জন্য বাংলার অনূর্ধ্ব ১৬ দলের প্রাক্তন কোচ সতীন্দর সিংহ যাঁর নামকরণ করেছিলেন ‘জায়ান্ট’। তারপর থেকে ময়দানে সেই নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন অফস্পিনার-অলরাউন্ডার। শুভজিৎকে ময়দান মনে রেখেছে বিরাট কোহলির ঘাতক হিসাবে। ২০০৯ সালে ইডেনে পি সেন ট্রফির ফাইনালে তাঁর বলেই যে থেমেছিল বিরাট-তাণ্ডব! ১২১ বলে ১৮৪ রানে আউট হয়েছিলেন বিরাট।
কোহলি যখন বিশ্বক্রিকেটের মধ্যমণি, শুভজিৎ তখন বাইশ গজ থেকে অনেক দূরে। রেলের চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। তবে কোহলির প্রসঙ্গ উঠতেই এখনও ফিরে যান ১১ বছর আগের সেই দিনটায়। এবিপি আনন্দকে শুভজিৎ বললেন, ‘‘পি সেন ট্রফির সেই ফাইনালে আমাদের টাউন ক্লাবের বিরুদ্ধে কী ব্যাটিংটাই না করেছিল মোহনবাগানের হয়ে খেলা বিরাট! সেই ম্যাচে মোহনবাগানের হয়ে বিরাটের সঙ্গে খেলেছিল মণীশ পাণ্ডে, মনোজ তিওয়ারি, সূর্যকুমার যাদব, ঋদ্ধিমান সাহা, মনোজ তিওয়ারিরা। আমাদের দলে ছিল মহম্মদ শামি।“
ইডেনে সেদিন বিরাটের বিধ্বংসী ১৮৪ ম্যাচের রং পাল্টে দিয়েছিল। শুভজিৎ বলছেন, “বিরাটের একটা শট এখনও চোখে লেগে রয়েছে। ওকে স্টেপ আউট করতে দেখে শর্ট বল করেছিলাম। ও মুহূর্তের মধ্যে শরীরের ওজন পিছনের পায়ে নিয়ে গিয়ে কভারের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে দিয়েছিল। অফস্পিনারের বল এভাবে খেলা দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম, এ ছেলে ক্রিকেটে রাজত্ব করতে এসেছে। ওর বিখ্যাত হুইপ শটও সেই ম্যাচেই প্রথম দেখেছিলাম।’’
চেতলায় মামার বাড়ির পাড়ায় অরূপ ভট্টাচার্য ও লোপামুদ্রা ভট্টাচার্যের কাছে ক্রিকেটে হাতেখড়ি শুভজিতের। শৈশবের সেই অ্যাকাডেমিতে ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর হিসাবে তিনি পেয়েছিলেন মোহনবাগানের আই লিগ জয়ী প্রাক্তন কোচ সঞ্জয় সেনকে। তারপর ক্যালকাটা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে গোপাল বসুর কাছে প্রশিক্ষণ। শুভজিৎ বলছেন, ‘‘গোপাল স্যার বিরাটদের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের ম্যানেজার ছিলেন। স্যারের মুখেই প্রথম বিরাটের কথা শুনেছিলাম।’’
পি সেন ট্রফির সেই ম্যাচে সতীর্থ পেসার সৌরভ দত্তের শর্ট বল কীভাবে মিড উইকেট গ্যালারিতে উড়িয়েছিলেন বিরাট, মনে আছে শুভজিতের। আর বিরাটকে আউট করার সেই ডেলিভারি? ময়দানের জায়ান্ট বলছেন, ‘‘বিরাটকে স্টেপ আউট করতে দেখে রাউন্ড আর্ম বল করেছিলাম। লং অনে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ ধরেছিল সৌরভ তিওয়ারি।’’ সেই ম্যাচে ৫ উইকেট এবং ব্যাটে ৪৫ রান করলেও দলকে জেতাতে না পারার হতাশা এখনও রয়েছে জায়ান্টের।
ম্যাচের আগে বিরাটকে নিয়ে ড্রেসিংরুমে কী আলোচনা হয়েছিল? ওঁকে থামানোর জন্য কোনও বিশেষ পরিকল্পনা? ৩৪ বছরের শুভজিৎ বলছেন, “প্রতিপক্ষ দলে বিরাট থাকা মানে বাড়তি চাপ। তবে আমরা ঠিক করেছিলাম, ওকে নিয়ে বেশি ভাবব না। স্বাভাবিক বল করব। তা নাহলে চাপ বাড়বে। আমাদের কোচ সুমন চক্রবর্তীও তাই বলেছিলেন। তবে সেই ম্যাচে বুঝে গিয়েছিলাম, বিরাট নিজের ছন্দে ব্যাট করতে শুরু করলে ওকে থামানো কার্যত অসম্ভব। পরবর্তীকালে গোটা ক্রিকেটবিশ্বই সেটা উপলব্ধি করেছে।”
বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে শুভজিৎ
কোচিং অ্যাকাডেমির হয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিরুদ্ধেও একবার খেলেছিলেন শুভজিৎ। বলছেন, ‘‘বিহারে সেই ম্যাচে ধোনি হেলিকপ্টার শট মারতে গিয়ে তিনটি ব্যাট ভেঙেছিল। ছ’টি বল হারিয়েছিল। ও তখন সদ্য ইন্ডিয়া এ দলের হয়ে কিনিয়া থেকে খেলে ফিরেছে। দারুণ ছন্দে ছিল।’’
বিরাট এখন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হিসাবে সর্বত্র সমাদৃত। আর ১১ বছর আগে কলকাতা ময়দানের বিরাট-ঘাতক ব্যস্ত রেলের চাকরি নিয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্মী শুভজিৎ। আগে পাঁশকুড়ার ইস্ট আউটারে ট্রেনের সিগন্যাল পদ্ধতির দেখাশোনা করতেন। কলকাতার রামগড় থেকে প্রত্যেকদিন যাতায়াত করতেন। তবে তাঁর বিরাটকে আউট করার কথা জানতে পেরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ডিআরএম এত প্রসন্ন হন যে, তাঁকে কাছাকাছি সাঁতরাগাছিতে বদলি করে দেন। সেখানেই সিগন্যালিংয়ের দেখাশোনা করেন।
ক্রিকেট থেকে এত দূরে সরে থাকতে আক্ষেপ হয় না? ‘‘খুব মন খারাপ হয়ে যায়। ২০১১ সাল থেকে চাকরি করছি। ২০১৫-১৬ মরসুমে শেষবার বিএনআর-এর হয়ে সিএবি-র ক্লাব ক্রিকেট খেলেছি। এখন অফিসের ম্যাচ খেলি,’’ বলছিলেন শুভজিৎ। যোগ করলেন, “ওই ম্যাচের পর বিরাট বলেছিল, একমাত্র আমার বল খেলতেই কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। সেটাই আমার পরম প্রাপ্তি। বিরাটকে আউট করায় টাউন ক্লাবের কর্তা দেবব্রত দাস পরের মরসুমের জন্যও আমার সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন।”
ক্রিকেটকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন শুভজিৎ। বলছেন, ‘‘বাচ্চাদের কোচিং করাতে চাই। অনেক তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছি। তাদের কাছে অনেক কিছু শিখেছি। সেই শিক্ষা জুনিয়রদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।’’
![বিরাটকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন, বাঙালি ক্রিকেটার এখন রেলকে সিগন্যাল দেখাচ্ছেন](https://static.abplive.com/wp-content/uploads/sites/3/2020/06/15230913/WhatsApp-Image-2020-06-14-at-12.41.20-PM-300x260.jpg)
খেলার (Sports) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
বিনোদনের
খবর
Advertisement
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)