Alipurduar News: ঘুমন্ত শিশুকন্যাকে ছুরির কোপে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা মায়ের, মানসিক অবসাদের জের?
Alipurduar Crime News: ঘুমন্ত মেয়েকে ধারাল ছুরির আঘাতে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তার মা ২৬ বছরের সান্ত্বনা রায়ের বিরুদ্ধে। মেয়েকে খুনের পর নিজেকেও ছুরির আঘাতে জখম করেন তিনি।
অরিন্দম সেন, ফালাকাটা: সবে সকাল হয়েছে। বাড়ির সবাই নানান কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ করেই ঘর থেকে ভেসে আসে শিশুর আর্তনাদ। ঘরের দরজা ভেঙে হতবিহ্বল হয়ে যান বাড়ির লোকজন (Mother allegedly Killed Girl Child)। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তাঁদের মেয়ে ও তাঁর শিশুসন্তান। সম্বিত ফিরতেই সঙ্গে সঙ্গে মা ও মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। গুরুতর জখম অবস্থায় চিকিৎসাধীন ওই শিশুর মা। তীব্র মানসিক অবসাদে (Depression) শিশুকন্যাকে খুন করে মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য আলিপুরদুয়ার জেলার (Alipurduar) ফালাকাটা থানার জটেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুটিরপার এলাকায়।
অভিযোগ, নিজের সাড়ে ৬ বছরের ঘুমন্ত শিশুকন্যাকে একাধিকবার ছরির আঘাতে মৃত্যু নিশ্চিত করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে তার মা। শিশুর চিৎকারে দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় মৃত শিশু কন্যা ও গুরুতর জখম মাকে। ঘটনায় হতবাক সমগ্র এলাকা। ঘুমন্ত মেয়েকে ধারাল ছুরির আঘাতে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তার মা ২৬ বছরের সান্ত্বনা রায়ের বিরুদ্ধে। মেয়েকে খুনের পর নিজেকেও ছুরির আঘাতে জখম করেন তিনি। ছয় বছরের এক মাত্র সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন সান্ত্বনা।
পরিবারসূত্রে খবর, শান্তনা বর্মনের বিয়ে হয়েছিল প্রায় আট বছর আগে ফালাকাটার গুয়াবরনগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। স্বামী তপন রায় কেরলে শ্রমিকের কাজ করায় শ্বশুর বাড়িতে একাই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন সান্ত্বনা। কিন্তু একাকীত্বের ফলে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন তিনি । অভিযোগ, স্বামীকে ফোন করলেও তিনি স্ত্রীর ফোন দিনের পর দিন ধরতেন না। খোঁজ খবর নিতেন না স্ত্রী ও মেয়ের। এই অবস্থায় মানসিক অবস্থা খারাপের দিকে গেলে সান্ত্বনার পরিবার তাঁকে নিয়ে আসে জটেশ্বরে। সান্ত্বনার স্বামীকে খবর দিয়ে আনা হলেও তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা করেননি বলে অভিযোগ অভিযুক্তের পরিবারের। এমনকি মানসিক অবসাদে স্বামীকেও আঘাত করে বসেছিল সান্ত্বনা। এই ঘটনার পর সান্ত্বনার স্বামী ফিরে যান কেরালায়।
এরপর, মানসিক অবসাদ বাড়তে থাকায় নিজেরাই সান্ত্বনাকে চারমাস ধরে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করায় তাঁর বাবার বাড়ির লোকজন। অভিযোগ, চিকিৎসায় সাড়া দিলেও স্বামী ফোন না ধরায় মানসিক অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিলেন না সান্ত্বনা।
এরইমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮-টা নাগাদ ঘরের দরজা বন্ধ করে ছুরি দিয়ে ঘুমন্ত মেয়ের ঘাড়ে, পিঠে সান্ত্বনা একাধিক আঘাত হানেন বলে অভিযোগ । মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত হলে নিজেকেও আঘাত করেন তিনি। শিশুর চিৎকারে পরিবারের সদস্যরা ঘরের কাঠের দরজা ভেঙে সান্ত্বনাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করলেও ততক্ষণে শিশু কন্যার অবস্থা সঙ্গীন হয়ে ওঠো। দুজনকেই বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। চিকিৎসকরা শিশুকন্যাকে মৃত ঘোষনা করে। পাশাপাশি, আশঙ্কাজনক সান্ত্বনা রায়কে রেফার করা হয় আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে। সেখানেই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন সান্ত্বনা।
ঘটনায় ফালাকাটা থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। মৃত শিশুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে।