Durga Puja 2023: অগ্নিযুগের স্মৃতি বুকে নিয়ে ধ্বংসস্তূপ রাজবাড়ি! এখনও নিষ্ঠাভরে হয় দুর্গাপুজো
Bankura: জৌলুস আর নেই কিন্তু জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে এখনও।
পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া: তখন ভারত পরাধীন। ইংরেজ শাসকদের অত্য়াচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। পরাধীন ভারতে এমন অনেক জমিদারের কথা শোনা যায় যাঁরা ইংরেজ শাসকদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন। কিন্তু বাঁকুড়ার (Bankura) অম্বিকানগরের রাজবাড়ি ছিল অন্যরকম। বলা হয় বিপ্লবীদের পাশেই ছিলেন তাঁরা। কথিত রয়েছে, রাজবাড়ি আদতে বিপ্লবীদের আস্তানা ছিল। ভিতরেই তৈরি হতো অস্ত্র। রাতের অন্ধকারে সেই অস্ত্র ও রসদ পৌঁছে যেত বিপ্লবীদের গোপন ডেরায়। একসময়ের সেই অম্বিকা নগরের রাজপ্রাসাদ আজ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগাছায় ঢেকে গিয়েছে রাজবাড়ি। পুরনো দিনের কিছুই আর নেই। যেটি রয়েছে সেটি হল দুর্গাপুজো। স্থানীয়দের দাবি, জেলার এই পুজোর বয়স অন্তত সাড়ে চারশো বছর। এখন আগের মতো জাঁকজমকপূর্ণ পুজো হয় না এখানে। কিন্তু নিয়ম-নীতি মেনে চলে পুজো (DurgaPuja)। নিষ্ঠাভরে পালন করা হয় সব নিয়ম। লোকমুখে অম্বিকানগরের যে ইতিহাস প্রচলিত সেটাও বেশ চমকপ্রদ।
তখন নাকি খ্রিষ্টিয় ষষ্ঠ অথবা সপ্তম শতকের ঘটনা। সেই সময় ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল দক্ষিণ বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বসবাস ছিল মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর। সেই সময় রাজস্থানের ঢোলপুর এলাকা থেকে পুরী যাওয়ার পথে একটি এলাকা (বর্তমানে সুপুর) ভাল লেগে যায় এক রাজপুতের। তিনি এই এলাকায় স্থায়ীভাবে থাকার জন্য নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। লড়াই করে সেই এলাকায় পুরনো বাসিন্দাদের সরিয়ে নিজের এলাকা তৈরি করেন। পরে সুপুর এলাকাতেই রাজধানী তৈরি করেন ধবল দেওয়ের ওই পরিবার। তারপরে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে চারশো বছর পরে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়ার কারণে রাজত্ব ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
কথিত আছে সেই সময় খড়্গেশ্বর ধবল দেও কুমারী নদীর দক্ষিণে থাকা রাজত্বের একটি অংশে সরে যান। ওখানেই রাজধানী তৈরি করে আলাদা রাজত্ব তৈরি করেন। সেখানে প্রতিষ্ঠা করা হয় কুলদেবী অম্বিকা ও কুলদেবতা কালা চাঁদ জিউকে। পরে দেবী অম্বিকার নামেই নামকরণ হয় অম্বিকানগর। রাজত্ব স্থাপনের সঙ্গেই ওই রাজপরিবারে চালু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। কথিত রয়েছে, এই রাজপরিবারেরই রাজা রায়চরণ ধবল দেও জড়িয়ে পড়েন ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনে। তাঁর আমলেই নাকি অম্বিকানগর রাজ্যের মধ্যে থাকা ছেঁদা পাথরের জঙ্গলে গোপনে তৈরি হয় বিপ্লবীদের বারুদ ও বন্দুক তৈরির কারখানা। কথিত আছে রাজা রায়চরণ ধবল দেও নিজে গভীর রাতে ঘোড়া ছুটিয়ে পৌঁছে যেতেন সেখানে। অম্বিকানগর ও ছেঁদা পাথর এলাকায় দুটি সশস্ত্র বিপ্লবী বাহিনিও নাকি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। গুপ্তচরের মাধ্যমে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের হদিশ পায় ব্রিটিশ সরকার। তারপরেই রাজাকে শায়েস্তা করতে শুরু হয় নানা চেষ্টা। একসময় সূর্যাস্ত আইনে অম্বিকানগর রাজ্য নিলাম করে দেয় ব্রিটিশ সরকার। সেই সময় এই রাজত্ব কিনে নেয় কলকাতার এক জমিদার। তারপরে বিহারে দ্বারভাঙ্গা রাজার হাতে যায় এই রাজত্ব। তারপরেও বন্ধ হয়নি অম্বিকানগরে বিপ্লবী কর্মকাণ্ড। তারপরেই নাকি রাজবাড়ি অবরোধ করে ব্রিটিশ পুলিশ। আলিপুর বোমা মামলায় গ্রেফতার কারা হয় রাজা রায়চরণ ধবল দেওকে। পরে প্রমাণের অভাবে ছাড়া পান তিনি।
এরপর কুমারী নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। দেশ স্বাধীন হয়েছে। সূর্যাস্ত আইনে নিলাম হয়ে যাওয়া রাজত্ব আর ফিরে না পাওয়ায় ধীরে ধীরে জেল্লা হারিয়েছে অম্বিকানগর রাজপরিবার। সংস্কারের অভাবে ভেঙে পড়েছে কুমারী নদীর পারে থাকা বিশাল রাজপ্রাসাদ। ইতিউতি পড়ে রয়েছে শুধুমাত্র ধ্বংসাবশেষ। শুধুমাত্র বাংলার বিপ্লবী ইতিহাসের স্মৃতি বুকে আগলে আজও অম্বিকানগর রাজবাড়িতে প্রাচীন রিতি মেনে চলে আসছে দুর্গাপুজো। স্থানীয় লোকজনের অনেকেই জড়িয়ে এই পুজোর সঙ্গে। জৌলুস আর নেই কিন্তু জনপ্রিয়তা অটুট রয়েছে এখনও।