Bankura: প্রাচীন পট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বীকৃতি, ভরতপুরে ১৫টি মডেল হাউস নির্মাণ রাজ্য সরকারের
Bharatpur : শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে প্রায় অখ্যাত ভরতপুর গ্রামে এখনও ৯ জন পটুয়া টিকিয়ে রেখেছেন তাঁদের পূর্ব পুরুষদের এই শিল্পকলাকে
পূর্ণেন্দু সিংহ, ভরতপুর : বাংলার প্রাচীন শিল্পকলা। পট। অঞ্চল ও শৈলী অনুযায়ী যার প্রকার ভেদ রয়েছে। সেরকমই একটি ঘরানা ভরতপুরের বিলুপ্তপ্রায় ‘বাঁকুড়া পট’। যার অস্বস্তি টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাঁকুড়ার ছাতনার ভরতপুর গ্রামের পট শিল্পীরা। তার স্বীকৃতি অবশ্য পেয়েছেন এখানকার শিল্পীরা। ভরতপুরের এই শিল্পীদের জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ১৫টি মডেল হাউস।
অতীতে অনেক জায়গায় পট আঁকার রীতি ছিল। যার অনেকই কালের গর্ভে তলিয়ে গেছে। কিন্তু, শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে প্রায় অখ্যাত ভরতপুর গ্রামে এখনও ৯ জন পটুয়া টিকিয়ে রেখেছেন তাঁদের পূর্ব পুরুষদের এই শিল্পকলাকে।
‘বাঁকুড়া পটের’ শিল্পীদের গ্রাম ভরতপুর। এখানে মোট ১৮ ঘর চিত্রকর পরিবার থাকলেও, তাঁদের মধ্যে ছবি আঁকেন কেবল ৯ জন। একমাত্র ছবি আঁকার কাগজ ছাড়া, এঁরা নিজেদের রং, তুলি ও আঠা নিজেরাই তৈরি করে নেন। শুশুনিয়ার পাহাড় তলিতে খুঁজে খুঁজে এরা বিভিন্ন রঙের পাথর জোগাড় করেন। তারপর তা গুঁড়ো করে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রং প্রস্তুত করেন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে রং তৈরি করেন বলে এদের আঁকা পটের রং বহুদিন অবিকৃত থাকে। কেমিক্যালের রঙের মতো অত ঔজ্জ্বল্য না থাকলেও, এঁদের আঁকা পটে রয়েছে প্রাণের আরাম। আর ছাগলের লোম ব্যবহার করে যে তুলি তাঁরা ব্যবহার করেন, তা এককথায় অতুলনীয়।
প্রাচীন এই পট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে নজর দিয়েছে রাজ্য সরকার। ভরতপুরের পটচিত্র শিল্পীদের জন্য তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ১৫টি মডেল হাউস। গত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন এই মডেল হাউসিংটির। তারপর শিল্পী পরিবারের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেন তৎকালীন বাঁকুড়া জেলার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার। ছাতনা বিডিওর সহযোগিতায় চিহ্নিত করা হয় ভরতপুর পটচিত্র গ্রামের শতাধিক বছরের পুরনো পটচিত্রশিল্পী পরিবারগুলিকে। এই ১৫ টি পরিবার পেয়েছে ১৫ টি মডেল হাউস।
বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিটি বাড়ি বানাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২ লক্ষ টাকা। এছাড়াও রয়েছে রাস্তা, আলো, সাবমার্সিবল পাম্প এবং একটি পুকুর বানানোর খরচ। মডেল বাড়িগুলির প্রত্যেকটি দেওয়ালে আঁকা রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পটচিত্র। বাড়িগুলিতে রয়েছে টালির চাল এবং একটি করে প্রধান কক্ষ ও সঙ্গে রান্নাঘর। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকায় এক অনন্য রূপ ধারণ করেছে পটশিল্পের গ্রাম।
‘বাংলার হস্তশিল্প’ পোর্টালের উদ্যোগ সরাসরি ভরতপুরে গিয়ে পছন্দমতো পটচিত্র কিনে আনতে পারেন আপনিও। যদিও সকলের পক্ষে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না সময়ের অভাবে। কিন্তু ‘বাংলার হস্তশিল্প’ পোর্টাল থেকে নিজেদের পছন্দসই ভরতপুরের শিল্পীদের আঁকা বাঁকুড়া পটচিত্র পেয়ে যাবেন একেবারে ঘরে বসে ও সাধ্যের মধ্যে।
কীভাবে যাবেন এহেন ভরতপুরে ?
বাঁকুড়া থেকে শুশুনিয়া পাহাড়ের দিকে যেতে প্রথমেই পড়বে ছাতনা। সেখান থেকে আরও কিছুটা যাওয়ার পর বড় রাস্তায় নীল সাইন বোর্ডে বড় বড় করে লেখা ‘চিত্রকর পট শিল্প, ভরতপুর’। এখান থেকে গিয়ে ডানদিকে ভরতপুর গ্রাম মাত্র ৪ কিমি।