Birbhum News : পাশে পাননি বাড়ির লোকদেরও, মনের জোরে মৃত স্বামীর সংরক্ষিত শুক্রাণু ব্যবহার করে হলেন মা
Rampurhat Medical College : রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অভিনব ঘটনার সাক্ষী ও অংশীদার হতে পেরে দারুণ আনন্দিত আমরা সকলেই।
ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বীরভূম : সঙ্গী ছিল শ্রেফ মনের জোর। পাশে ছিল না কেউ। কিন্তু কিছুতেই থমকে যাননি দশরথ মাঝি। একার হাতে পাথর কেটে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছিলেন তিনি। সমাজের বঞ্চনা থেকে শুরু করে নিজের লোকেদের দূরে সরে যাওয়া, কোনও কিছুই আটকাতে পারেনি সঙ্গীতা কেশরীকেও। মনের জোরে ও চিকিৎসা শাস্ত্রের সাহায্যে ৪৮ বছর বয়সে মা হয়েছেন যিনি। আইভিএফ (IVF) পদ্ধতির সাহায্যে মৃত স্বামীর সংরক্ষিত শুক্রাণু দিয়ে মাতৃত্বের স্বাদ পেয়েছেন তিনি। যে পথটা মোটেই দশরথের পাহাড় কাটার থেকে কম কিছু নয়।
জন্মসূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটির বাসিন্দা সঙ্গীতা। ২৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল বীরভূমের মুরারইয়ের অরুণ প্রসাদ কেশরী সঙ্গে। মুদিখানার দোকান ছিল তাঁর। স্বামী-স্ত্রী সংসার ভালভাবেই চলছিল। কিন্তু করোনা মহামারী লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল তাঁদের জীবন। দু'বছর আগে করোনায় মারা যান তিনি। দীর্ঘদিনের দাম্পত্যজীবন কাটালেও সন্তানসুখ থেকে বঞ্চিত ছিলেন কেশরী দম্পতি। মাঝে সন্তান পাওয়ার প্রত্যাশায় বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতার এক ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন সেন্টারে আসছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর একেবারেই একা হয়ে পড়েন সঙ্গীতা। কিন্তু হার মানেননি তিনি। স্থির করেন, সেই সেন্টারে স্বামীর সংরক্ষিত শুক্রাণু দিয়েই আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে মাতৃত্বের স্বাদ অর্জন করবেন।
স্বামীহারা সঙ্গীতা মনের জোরে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও আসেনি কম বাধা। নিজের ভাবনার কথা পরিবারের লোকজনকে জানালে বেঁকে বসেন তাঁরা। বলা ভাল, সরে যান পাশ থেকে। তারপর থেকে সমাজ-আত্মীয় সবাই 'কী ভাববেন-বলবেন' দ্বন্দ্বের প্রবল এক বাধার সামনে একা অকুতোভয় হয়ে লড়তে নামেন সঙ্গীতা। শেষমেশ সেই পথে তিনি পেয়েছেন সাফল্য। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে গত মঙ্গলবার রাতে ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। জন্মের সময় আড়াই কেজি ওজনের সন্তান সুস্থ-স্বাভাবিক থাকলেও বেশি বয়সে মাতৃত্বের স্বাদ নেওয়া সঙ্গীতার শারীরিক অবস্থা কিছুটা জটিল। তিনি এখনও রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি।
রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অভিনব ঘটনার সাক্ষী ও অংশীদার হতে পেরে দারুণ আনন্দিত আমরা সকলেই। বাংলার প্রত্যন্ত এলাকার এক মহিলা এভাবে এগিয়ে আসায় তাঁকে কুর্নিশ জানাতেই হয়। ডায়াবিটিস সহ বেশ কিছু সমস্যার জেরে আপাতত তাঁকে রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। সন্তানটি সুস্থ রয়েছে।
আরও পড়ুন- প্রাক্তন প্রধানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন, আত্মঘাতী তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে