Calcutta High Court: তল্লাশির নামে ব্যক্তিগত কাজ ED আধিকারিকের! অভিষেকের দায়ের করা মামলার রায়দান পিছোল
Abhishek Banerjee: তল্লাশি নামে ব্যক্তিগত কাজ ED আধিকারিকের! অভিষেকের দায়ের মামলার শুনানি পিছোল
সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: তদন্তে নেমে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটার থেকে ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের- (ED) বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সেই মামলার রায়দান পিছিয়ে গেল কলকাতা হাইকোর্টে। যে ১৬টি ফাইল লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটার থেকে ডাউনলোড করা হয়েছে বলে অভিযোগ, সোমবার সেগুলি আদালতে জমা দিতে হবে। সব খতিয়ে দেখে তবেই রায় দেবে কলকাতা কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় ED বনাম অভিষেকের আইনি লড়াইয়ের রায়দান পিছিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বক্তব্য, "মামলাকারী এবং ED, উভয়পক্ষই এই মামলার ক্ষেত্রে অতি স্পর্শকাতর হয়ে পড়ছেন।" লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটার থেকে ED আধিকারিকের ডাউনলোড করা ১৬টি ফাইলের তথ্য দেখে, তবেই রায় দেবেন বলে জানালেন বিচারপতি ঘোষ।
শুধু তাই নয়, শনিবার বিচারপতি এই মর্মেও নির্দেশ দেন যে, ED এবং কলকাতা পুলিশের সাইবার সেলের একজন করে আধিকারিক, ডাউনলোড করা ১৬টি ফাইল সম্পর্কিত বিশদ তথ্য, সোমবার আদালতে জমা দেবেন। ED-র তরফে মিথিলেশ মিশ্র এবং কলকাতা পুলিশের পক্ষে অমিতাভ সিন্হা রায়, সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে ফাইলের তথ্য সংগ্রহ করবেন।
আরও পড়ুন: Abhishek Banerjee: 'I.N.D.I.A জোট ক্ষমতায় এলে রান্নার গ্যাসের দাম ৫০০ টাকা..', প্রতিশ্রুতি অভিষেকের
প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ED-র ECIR খারিজের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। সেই মামলার শুনানিতে এদিন উঠে আসে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে ইডির তল্লাশি-অভিযানের প্রসঙ্গ। অভিষেকের আইনজীবী সওয়াল করেন যে, তাঁর মক্কেল লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টর ছিলেন দু'বছর। তারপর ছিলেন CEO। এটা খুব ছোট অফিস। মাত্র ২ হাজার বর্গফুট এলাকা এবং তিনটি কম্পিউটার রয়েছে। তল্লাশির পরে একটি কম্পিউটার থেকে ১৬টি ফাইল পাওয়া যায়।
অভিষেকের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সিজার লিস্ট তৈরির পরও ইডির এক আধিকারিক সকাল ৬টা পর্যন্ত লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের অফিসে ছিলেন। কিন্তু কেন? গত ২৬ অগাস্ট, কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোডের কথা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসকে জানায় ED।
কিন্তু সংবাদমাধ্যমের কাছে দুই ব্যক্তির নাম জানানোর কি প্রয়োজন ছিল? তাতে কি তদন্তে সাহায্য হতো? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ED-র এই 'দানবীয়' আচরণের অর্থ কী?
বিচারপতি তখন জানতে চান, ED-র তরফে কি এই ধরনের সোশাল মিডিয়া পোস্ট প্রথমবার করা হল? নাকি তারা এটা করেই থাকে? অভিষেকের আইনজীবী তাতে যুক্তি দেন, তদন্তের খতিয়ান সর্বসমক্ষে পেশ করা ভারতের আইন নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তল্লাশি যখন শেষ পর্যায়ে তখন ED-র এক আধিকারিক নিজের ব্যক্তিগত কাজ করেন কী ভাবে?
এর পর, বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানতে চান, ওই ফাইলগুলিতে কী আছে? তাতে অভিষেকের আইনজীবী জানান, যে ফাইল আছে, সেগুলি ক্ষতিকারক কিছু নয়। কিন্তু, কাল যদি ফের তল্লাশি হয় আর তখন যদি ED-র আধিকারিকরা সেগুলি নিয়ে ফের তদন্ত শুরু করেন, তখন কী হবে?
রাজ্য সরকারের আইনজীবী জানান, হার্ডডিস্ক ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এদিন অভিষেকের আইনজীবী আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, যে দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে, সেটা শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি এবং যে হস্টেল খুঁজে দেখা হচ্ছিল, সেটিও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত। ফলে আশঙ্কা থাকবেই। পড়ুয়াদের তালিকায় ছেলেদের নাম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েদের হস্টেলে খুঁজতে গিয়ে ছেলেদের নাম আসছে কেন?
এরপর বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ একের পর এক প্রশ্ন করেন ED-কে। জানতে চান, বড় আর্থিক দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে! টাকা, গয়না উদ্ধার হচ্ছে। কিন্তু চার্জশিট কেন পেশ করতে পারছেন না তদন্তকারীরা? তাঁরা কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? একজন অভিযুক্ত, তাঁর সর্বোচ্চ সাজার অর্ধেক সময় জেলে কাটিয়ে, বিধি মোতাবেক জামিন পেয়ে বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছেন কি?
ফাইল ডাউনলোড বিতর্কের প্রসঙ্গ মনে করিয়ে, বিচারপতি জানতে চান, ED-র এই আধিকারিক কি ডেপুটেশনে এসেছিলেন? জবাবে ED-র আইনজীবী জানান, না। তিনি ED ক্যাডারের অফিসার। বিচারপতি তখন এই ঘটনাটিকে, অত্যন্ত 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে মন্তব্য করেন। ED-র আইনজীবী তার প্রেক্ষিতে বলেন, "ED-র আধিকারিক ভুল করেছেন। লক্ষ্মণরেখা পার করেছেন। কিন্তু অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করছি।"
এর পর মামলার রায়দান পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে, বিচারপতি তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, চাকরিপ্রার্থীরা কলকাতার রাস্তায় বসে আছেন। এটাই বাস্তবচিত্র।