Kolkata Tourist Spot: বৈচিত্রময় শহরের আনাচে কানাচে গল্প, ইতিহাসের সহাবস্থান, ঘুরে দেখুন কলকাতা
'কলকাতা শহরে কোথায় ঘুরবেন'? এ প্রশ্ন বড়ই বেমানান। উত্তর থেকে থেকে দক্ষিণ, একাধিক ট্যুরিস্ট স্পট এখানে। সিনেমা থিয়েটারের মজা থেকে রাজকীয় খানাপিনা। কোথাও আবার ইওরোপিয়ান কান্ট্রির সৌন্দর্য্য।
কলকাতা : সুন্দরী তিলোত্তমা। নিরন্তর ছুটে চলা ব্যস্ত শহর। কোথাও পাঁচতারার ঝাঁ চকচকে জীবন। কোথাও আবার নিম্নবিত্তের যাপন। গঙ্গার পাশে অবিরাম বয়ে চলা এই শহর বৈচিত্রময়। যাঁর রাজপথের প্রতিবাঁকেই রয়েছে কিছু না কিছু গল্প আর ইতিহাসের সহাবস্থান। 'কলকাতা শহরে কোথায় ঘুরবেন'? এ প্রশ্ন বড়ই বেমানান। উত্তর থেকে থেকে দক্ষিণ, একাধিক ট্যুরিস্ট স্পট এখানে। সিনেমা থিয়েটারের মজা থেকে রাজকীয় খানাপিনা। কোথাও আবার ইওরোপিয়ান কান্ট্রির সৌন্দর্য্য়। সবমিলিয়ে কলকাতা (Kolkata) এক কথায় মায়ানগরী। চলুন দেখে নেওয়া যাক তিলোত্তমার সেরা দশ ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল: এই সৌধটি কলকাতা শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত হওয়ায় কলকাতার যে কোনো প্রান্ত থেকে খুব অল্প সময়েই এই স্থানে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে প্রচুর মানুষ সারাবছর এখানে ভিড় করে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের (Victoria Memorial) পরিধিতে ঢোকার জন্যে একটি ১০ টাকা মূল্যের টিকিট কাটার ব্যবস্থা আছে। তবে যারা এখানে প্রাতঃরাশ করেন তাদের ক্ষেত্রে টিকিটের ব্যবস্থা অন্যরকম। বিশেষ দিনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে লেজার শো দেখান হয়। লেজারের আলোয় উঠে আসে অতীতের কলকাতার জীবন্ত ছবি। শহরের বিবর্তনের এই ধারাবিবরণী কলকাতার এক বিশেষ আকর্ষণ।
বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম: শীতের মরশুমে থ্রি-ডি চশমা চোখে গ্রহ-তারা দেখার সুযোগ নিতে পৌঁছে যান বিড়লা তারামণ্ডলে (Birla Planetorium)। ছোটদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য অন্যতম ডেস্টিনেশন হতে পারে পছন্দের ট্যুরিস্ট স্পট বিড়লা তারামণ্ডল। এম পি বিড়লা তারামণ্ডলের এনট্রি ফি ৩০ টাকা। থ্রি-ডি শো-এর জন্য মাথাপিছু খরচ ১০০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের মাথাপিছু এন্ট্রি ফি ৫০০ টাকা। সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বিড়লা তারামণ্ডল।
ভারতীয় জাদুঘর: ভারতীয় জাদুঘর (Indian Mueseam) ঘুরে দেখতে গোটা দিন হাতে রাখুন। প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকদের ঢুকতে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে শিশুদের জন্য টিকিটের দাম ২০ টাকা। বিদেশিদের জন্য টিকিটের দাম ৫০০ টাকা। স্কুল পড়ুয়াদের জন্য কোনও প্রবেশ মূল্য লাগবে না। স্মার্ট ফোনের জন্য আলাদা করে দিতে হবে ৫০ টাকা। শুধু ক্যামেরা হলে ধার্য করা হয়েছে ১০০ টাকা। ছোট ভিডিও ক্যামেরা এবং স্ট্যান্ড-সহ ক্যামেরার জন্য দিতে হবে ২-৫ হাজার টাকা। মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার ১০টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এবং শনি ও রবিবার ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সোমবার মিউজিয়াম বন্ধ থাকে।
প্রিন্সেপ ঘাট: সূর্যাস্তের সৌন্দর্য্য দেখতে চক্ররেলে চেপে চলে যেতে পারেন ব্রিটিশদের নির্মিত এই ঘাটে। যেন বিশ্ব তার অফুরন্ত সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এই ভূমিতে। এখানে গঙ্গার বুকে নৌকা ভ্রমণের স্বাদ নিতে পারেন প্রিন্সেপ ঘাটে (Prinsep Ghat)। মাথাপিছু বা গ্রুপ হিসাবে দরদাম করে ঘুরে নিতে পারেন গঙ্গায়।
আলিপুর জেল মিউজিয়াম: আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের হেরিটেজকে সংরক্ষণ করে তৈরি হয়েছে আলিপুর জেল মিউজিয়াম (Alipore Jail Mueseam)। এই সংশোধনাগারের বহু চর্চিত ইতিহাস নথিবদ্ধ রয়েছে এই আলিপুর মিউজিয়ামের মধ্যেই। প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা। আর এই ইতিহাস বিজড়িত অজস্র কাহিনি নিয়েই আলিপুর মিউজিয়ামে থাকছে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো। এই লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ে প্রবেশ মূল্য থাকছে ১০০ টাকা। ১৯০৬ সালে আদি গঙ্গার পাড়ে তৈরি হয়েছিল এই জেল। এই সংশোধনাগারের মধ্যেই একসময় আটক ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস, জওহরলাল নেহরু, বিধান চন্দ্র রায় থেকে শুরু করে যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, রাধাচরণ পাল, প্রমোদ রঞ্জন চৌধুরীরা। প্রতি মঙ্গলবার থেকে রবিবার খোলা থাকবে এই মিউজিয়াম। সোমবার বন্ধ এই মিউজিয়াম। দুপুর ১২টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। লাইট অ্যান্ড সাউন্ডে প্রথম শো ৭টা ও পরের শো রাত ৮টায় দেখানো হয়।
কফি হাউস: বইপাড়া কলেজস্ট্রিটের অন্যতম আকর্ষণ কফি হাউস (Coffe House)। ১৫, বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটের অ্যালবার্ট বাঙালির একান্ত আপন। সস্তার চা-কফি থেকে কাটলেট, চাউমিন। খুব কম খরচেই রসনা তৃপ্তি হবে এই কফি হাউসে। কাজেই বইপাড়ায় গেলে অবশ্যই ঢুঁ মারুন কফি হাউসে।
ইকো পার্ক: কী নেই রাজারহাট নিউটাউনের এই পার্কে। রিভারসাইড রেস্তোঁরা থেকে মাদার ওয়াক্স মিউজিয়াম (Mother Wax Museam)। সবই রয়েছে সেখানে। পাশাপাশি প্যাগোডা থেকে বনসাই গার্ডেন, কলকাতায় রয়েছে ছোট্ট জাপানও। শীতের দুপুরে বেড়িয়ে আসার মনোরম জায়গা ইকো পার্ক (Eco Park)। যাঁরা শহরে এসে জমিয়ে ফোটোগ্রাফি করতে চাইছেন, তাঁদের জন্যও আদর্শ জায়গা।
নিক্কো পার্ক: গরমকালে তো বটেই। শীতকালেও নিক্কো পার্কের ওয়াটার পার্কে মজা নিতে পর্যটকরা পৌঁছে যান নিক্কো পার্কে (Nicco Park)। এই বিনোদন পার্কে কচিকাচাদের জন্য একাধিক জয় রাইড রয়েছে। নিক্কো পার্কের এন্ট্রি ফি মাথাপিছু ৩০০ টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে প্যাকেজ ৮৫০ টাকা চার্জ। সল্টলেক এলাকার নিক্কোপার্ক অন্যতম পছন্দের ট্যুরিস্ট স্পট।
আলিপুর চিড়িয়াখানা: শীতকাল মানেই চিড়িয়াখানায় বনভোজন। কচিকাচাদের অপেক্ষায় সেখানে রয়েছ শিম্পাঞ্জি বাবুও। আলিপুর চিড়িয়াখানার (Alipore Zoo) গেট খুলতেই উপচে পড়ে ভিড়। এন্ট্রি ফি মাত্র ৩০ টাকা (শনি-রবি এবং অন্য ছুটির দিন)। সপ্তাহের মাঝে এন্ট্রি ফি ২৫ টাকা। পাঁচ বছরের নীচের শিশুদের জন্য মাথাপিছু এন্ট্রি ফি ১০ টাকা। অ্যাকোরিয়াম ঘরের ভাড়া ৫টা টাকা।
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি: উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (Jorasanko Thakurbari)। কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। উত্তর কলকাতার রবীন্দ্রসরণি ও বিবেকানন্দ রোডের দক্ষিণের সংযোগস্থল দ্বারকানাথ ঠাকুর লেন। সেখানেই রয়েছে ঠাকুরবাড়ি। তবে জোড়াসাঁকোর ঠকুর বাড়ির কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় রবীন্দ্রনাথের পুর্বপুরুষ নীলমণি ঠাকুরের কথা। তিনিই তৎকালীন উত্তর কলকাতার চিৎপুর রোডের পুর্বদিকে মেছোবাজারে একটি বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। বর্তমানে ঠাকুর বাড়ি একটি প্রদর্শনিশালা বা মিউজিয়ামে পরিণত হয়েছে। সোম থেকে শুক্র সপ্তাহের ৫ দিন, সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা আর শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকে। রবিবার বন্ধ। প্রবেশ মুল্য ২০ টাকা। এখানে রয়েছে ঠাকুর পরিবারের ঐতিহাসিক সামগ্রী। বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকেই জাদুঘর শুরু। প্রধান দর্শনীয় ঘরের নাম -রবীন্দ্র প্রয়াণকক্ষ। শান্তিনিকেতন থেকে এসে এই ঘরেই বিছানাতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন- লালমাটি, কোপাই, বসন্ত উৎসবে বেঁচে থাকার ঠিকানা, চেনা-অচেনা বীরভূম