এক্সপ্লোর

Dr Bidhan Chandra Roy : আজকের কাজ আজই, কালকের জন্য ফেলে রাখা নয়

Doctors Day : সুশৃঙ্খল, সংযত জীবনের পাঠ তিনি পেয়েছিলেন বাল্যকাল থেকেই

কলকাতা : কর্মশক্তি থেকে স্মরণশক্তি, ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের এ হেন নানাবিধ কার্যকলাপের সাক্ষী থেকেছে তাঁর সময়, উঠে এসেছে নানা লেখাজোখায়। তা অনেকেরই জানা। কিছু অজানাও। তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণার টুকরো কোলাজ এই প্রতিবেদনে। যিনি বেঁচে থাকাকালীন আশা করেছিলেন, নিজের কাজেই বেঁচে থাকবেন। বলেছিলেন, “দেশের কাজেই আমি যেন বেঁচে থাকি ”। 

সুবোধচন্দ্র, সাধনচন্দ্র, বিধানচন্দ্র। তিন ভাই। ছেলেবেলায় বিলাসিতা করার মত আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। ছিল না শিক্ষাগ্রহণের জন্য গৃহশিক্ষক নিয়োগ করে পড়ানোর মত অবস্থা। একইসঙ্গে নিয়মানুবর্তিতা ছিল তিন ভাইয়ের জীবন গড়ার পথে পাথেয়। ধার করে খরচের যেমন নিষেধাজ্ঞা ছিল,  নিষেধ ছিল অতিরিক্ত খরচ করে গৃহশিক্ষক রাখাতেও। ছোট থেকেই দেখে এসেছেন বাবা-মা প্রকাশচন্দ্র রায় ও অঘোরকামিনী দেবীকে। দেখেছেন বাবা-মা সংযত, অনাড়ম্বর, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করেন। আয় অনুযায়ী ব্যয়ের শিক্ষা বাড়ি থেকেই শিখেছেন বিধানচন্দ্র। শৈশবে বাড়ি থেকে যে নিয়মানুবর্তিতার পাঠ পেয়েছিলেন বিধানচন্দ্র তা বোধহয় সারাজীবন ধরে লালন করে গিয়েছিলেন। এই প্রসঙ্গে তাঁদের বাড়িতে ছোটবেলাকার পড়াশোনার রোজকার রীতি-রেওয়াজটা উল্লেখ করা দরকার। সকালে ঘুম ভাঙার পরে বাড়িতে উপাসনা-গৃহে উপাসনা করবার রেওয়াজ ছিল। বাবা-মা প্রকাশচন্দ্র ও অঘোরকামিনী সকালে নিজেদের মধ্যে সংসার আলোচনার পরে উপাসনা গৃহে আসতেন। ছেলেমেয়ে, পরিবারে আশ্রিত অন্যদের সঙ্গে উপাসনা গৃহে শুরু হত আবৃত্তি। তারপরে একটি ব্রহ্ম সঙ্গীত গাওয়া এবং পরে উপাসনার চল ছিল। যে সংস্কৃত শ্লোকটি আবৃত্তি করতে হত, তার ভাবার্থ ছিল এরূপ - "কালকের কাজ আজকেই করে ফেলা উচিত। ফেলে না রেখে বিকেলের কাজ সেরে ফেলা উচিত সকালেই। যে কোনও সময়েই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কোন কাজ শেষ করা হয়েছে আর কোনটি করা হয়নি তা বিচার-বিবেচনা করে মৃত্যু অপেক্ষা করে না। অতএব যেহেতু মানবজীবন অনিত্য, তাই মানুষের কর্মক্ষমতা, যৌবন থাকতে থাকতেই ধর্মশীল হওয়া প্রযোজন।"

শ্লোক - 

স্বঃ কার্য্যমদ্য কূর্ব্বীত পূর্বাহ্নে চাপরাহ্নিকম।

ন হি প্রতীক্ষতে মৃত্যু কৃতমস্য ন বা কৃতম

কো হি জানাতি কস্যাদ্য মৃত্যুকালো ভবিষ্যতি 

যুবৈব ধর্মশীল, স্যাদনীত্যং খলুি জীবিতম।

বাল্যকালের এই নীতিশিক্ষা যে বিধানচন্দ্র রায় সারাজীবন লালন ও পালন করে এসেছেন তা জানা যায় দাদা সুবোধচন্দ্রের স্মৃতিচারণায়। “...ফাইলের পর ফাইল এসে জমেছে, কিন্তু একটিও পড়ে থাকবে না কালকের জন্য। যে সময়ের ভিতরে ওগুলো ডিসপোজ অব করা দরকার, তার আগেই কাজ শেষ করে রেখেছে। কালকের জন্য একটা ফাইলও সময় নেই অজুহাতে কখনও পড়ে থাকবে না। কলকাতার মত একটা বড় সিটিতে বিধানের ডাক্তারিতে খুব বেশি পসার যখন, তখনও সেই একই নীতি ছিল তাঁর কাজ করার। তিনজন ডাক্তার, অ্যাসিস্ট্যান্ট বিধানের কাজে সাহায্য করতেন, ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তাঁরা…। ” কিন্তু তাঁকে ক্লান্ত হতে দেখা যেত না। সময় নেই অজুহাতে কোনও রোগীকে কাল আসতে বলা হত না বা যাঁরা এসে গেছেন, অতিরিক্ত সময় লাগলেও তাঁদের সেদিনই দেখা হত। 

অন্যায়ের সঙ্গে আপস নয়

মেধাবী ছিলেন। ছিলেন সাহসীও। এই প্রসঙ্গে তাঁর ছাত্রাবস্থার একটি গল্প উল্লেখ করা যেতে পারে। তখন ডাক্তারি পড়ছেন তিনি। ইংরেজ আমল। এম বি বি এস ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। একদিন মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক কর্নেল পেকের গাড়ি কলেজ থেকে বেরোনোর সময় কলেজ স্ট্রিটে তাঁর ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে বিদ্যুৎচালিত ট্রামের ছোটোখাটো সংঘর্ষ হয়। কর্নেল পেকের গাড়ির পিছনের দিকটা ভেঙে যায় এই কারণে। বিধানচন্দ্র দাঁড়িয়ে ছিলেন কলেজ গেটে। কর্রেন পেক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি দুর্ঘটনাটা দেখেছেন কি না। বিধানচন্দ্র ইতিবাচক উত্তর দেওয়ার পরই কর্নেল পেকের পরবর্তী প্রশ্ন ছিল - ট্রামটি অধিক গতিতে চলছিল কি না। এবার বিধানচন্দ্রের উত্তর ছিল নেতিবাচক। তিনি আরও বলেন, কর্নেল পেকের গাড়ির কোচম্যানের কারণেই এই দুর্ঘটনা। ব্যাস, যায় কোথায়। পরবর্তীতে ট্রাম কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন কর্নেল পেক। বিধানচন্দ্রকে সাক্ষী দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তাঁর উত্তর ছিল, সাক্ষী তিনি দেবেন। কিন্তু মিথ্যা বলবেন না। অতএব, যা হওয়ার তাই হল। বিধানচন্দ্রকে সাক্ষী দেওয়ার হাত থেকে রেহাই দেওয়া হল। কিন্তু বিধানচন্দ্রের এহেন মতামত ভালভাবে নেননি কর্নেল পেক।

এম বি পরীক্ষার ভাইভাতে শূন্য দেন বিধানচন্দ্রকে। অন্যায়ভাবে অকৃতকার্য করে দেওয়া হয় তাঁকে। অধ্যাপক কর্নেল লিউকিসকে শিক্ষাগুরু মানতেন বিধানচন্দ্র। তাঁর কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা বলেন তিনি। ঘটনার জেরে কার্যত হত্যোদম বিধানচন্দ্রকে ভেঙে না পড়ার পরামর্শ দিয়ে কর্নেল লিউকিস তাঁকে বিকল্প এল এম এস পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এবারও পরীক্ষক সেই কর্নেল পেক। কিন্তু পরীক্ষার সময় তাঁর আচরণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। শান্ত। উল্লেখ, কর্নেল লিউকিসের মধ্যস্থতায় বিধানচন্দ্রের প্রতি অন্যায় আচরণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কর্নেল পেক। এবং তাই তাঁর এ হেন পরিবর্তন। 

ছাত্রাবস্থা থেকে কর্মবস্থা। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের জীবন ছিল প্রকৃত অর্থেই বর্ণময়। তখন কারমাইকেল মেডিকেল কলেজের (অধুনা আর জি কর) অধ্যাপক। কর্মশক্তি, প্রতিভা আর স্বাধীন চিন্তা - এই তিন গুণে ভর করে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছিলেন। গরিবদের প্রতি তাঁর সহানুভূতির কথা তো সর্বজনবিদিত। রোগীর বাড়ি গিয়ে যদি দেখতেন তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ, ফিজ দেওয়ার জন্য জোর করতেন না। কেউ অল্প টাকা জোগাড় করতে পারলে বাড়ির চ্যারিটি বক্সে সেই টাকা দিয়ে আসতে বলতেন। সেই টাকা এককালীন নানা সৎ কাজে দান করে দেওয়া হত। ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুল ও হাসপাতালে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেছিলেন তিনি। তেরো বছর কাজ করার পর পদত্যাগ করেন। পরে যোগ দেন কারমাইকেলে।  

অধ্যাপনার পাশাপাশি দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত ও পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনায় সচেষ্ট ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি রাষ্ট্রবিজ্ঞানেও তিনি ছিলেন মানুষের কল্যাণের ভাবধারায় বিশ্বাসী। একে পরাধীন ভারত, তায় গরিব মানুষ - সবসময় ভাবাত ডাক্তার রায়কে। কীভাবে উন্নতি করবেন মানুষের - প্রশ্ন তখন তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাঁকে, সিদ্ধান্ত নিলেন রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন। সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ ১৯২২-এ। সে জীবনও ছিল আরেক বর্ণময় অধ্যায়। 

কেমন ছিল বিধানচন্দ্র রায়ের হৃদয় ? কেমনই বা হওয়া উচিত একজন চিকিৎসকের প্রাণ ? অধ্যাপক রায়ের শিক্ষা থেকেই সে প্রশ্নের উপসংহারে উপনীত হওয়া যায়। কী কী গুণ একজন চিকিৎসককে আদর্শ চিকিৎসক করে তুলতে পারে ? শিক্ষাগুরু কর্নেল লিউকিসের থেকে যে পাঠ মরমে নিয়েছিলেন সে পাঠই পড়াতেন নিজের ছাত্রদের। আর তা বোধহয় প্রযোজ্য আজও। এখনও। 

“A heart that never hardens/ A temper that never tires/A touch that never hurts”. 

“…এমন একটি হৃদয়, কঠোর হয় না যে কভু/এমন একটি প্রকৃতি, বিরাম চায় না যে কভু/এমন একটি পরশ, বেদনা দেয় না যে কভু”। 

প্রণাম। 

 

আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন

https://t.me/abpanandaofficial

 

তথ্যসূত্র - নগেন্দ্রকুমার গুহরায় (ডাক্তার বিধান রায়ের জীবন-চরিত)

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

Gold Price 2025 : চলতি বছরে গতি থাকবে সোনার দামে ? ইতিমধ্য়েই ১১ শতাংশ বেড়েছে রেট, কোথায় পৌঁছবে মূল্য ? 
চলতি বছরে গতি থাকবে সোনার দামে ? ইতিমধ্য়েই ১১ শতাংশ বেড়েছে রেট, কোথায় পৌঁছবে মূল্য ? 
Best SUVS India: বিক্রির নিরিখে ভারতের সেরা ৬টি এসইউভি হল এগুলি, কে রয়েছে সবার ওপরে ?
বিক্রির নিরিখে ভারতের সেরা ৬টি এসইউভি হল এগুলি, কে রয়েছে সবার ওপরে ?
East Midnapur News: সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ, বাঁচাতে আসা মানুষগুলির কথা অস্পষ্ট হল ক্রমশ, মর্মান্তিক ঘটনা নন্দীগ্রামে !
সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ, বাঁচাতে আসা মানুষগুলির কথা অস্পষ্ট হল ক্রমশ, মর্মান্তিক ঘটনা নন্দীগ্রামে !
Senco Gold Stock Price: ২০ শতাংশ পড়েছে সেনকো গোল্ডের শেয়ার, হোল্ড না সেল করবেন ?
২০ শতাংশ পড়েছে সেনকো গোল্ডের শেয়ার, হোল্ড না সেল করবেন ?
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

Chok Bhanga Chota: মহাকুম্ভের পথে বিপর্যয়, নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১৮ | ABP Ananda LIVEArms Recovery: কার্তুজ কাণ্ডে গ্রেফতার ফারুক মল্লিক, ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ | ABP Ananda LIVEAsansol News: দিল্লির ঘটনার পরেও নড়েনি টনক, আসানসোলে পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতিAsansol News: এবার আসানসোল স্টেশনে হুড়োহুড়ি রেল যাত্রীদের, পদপিষ্টের পরিস্থিতি | ABP Ananda LIVE

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
Gold Price 2025 : চলতি বছরে গতি থাকবে সোনার দামে ? ইতিমধ্য়েই ১১ শতাংশ বেড়েছে রেট, কোথায় পৌঁছবে মূল্য ? 
চলতি বছরে গতি থাকবে সোনার দামে ? ইতিমধ্য়েই ১১ শতাংশ বেড়েছে রেট, কোথায় পৌঁছবে মূল্য ? 
Best SUVS India: বিক্রির নিরিখে ভারতের সেরা ৬টি এসইউভি হল এগুলি, কে রয়েছে সবার ওপরে ?
বিক্রির নিরিখে ভারতের সেরা ৬টি এসইউভি হল এগুলি, কে রয়েছে সবার ওপরে ?
East Midnapur News: সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ, বাঁচাতে আসা মানুষগুলির কথা অস্পষ্ট হল ক্রমশ, মর্মান্তিক ঘটনা নন্দীগ্রামে !
সেপটিক ট্যাঙ্কে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে অসুস্থ, বাঁচাতে আসা মানুষগুলির কথা অস্পষ্ট হল ক্রমশ, মর্মান্তিক ঘটনা নন্দীগ্রামে !
Senco Gold Stock Price: ২০ শতাংশ পড়েছে সেনকো গোল্ডের শেয়ার, হোল্ড না সেল করবেন ?
২০ শতাংশ পড়েছে সেনকো গোল্ডের শেয়ার, হোল্ড না সেল করবেন ?
Arjun Singh: অর্জুন সিংহ-র বাড়িতে বোমাবাজির জের, দোষী সাব্যস্ত ২ জনের কী সাজা NIA আদালতের ?
অর্জুন সিংহ-র বাড়িতে বোমাবাজির জের, দোষী সাব্যস্ত ২ জনের কী সাজা NIA আদালতের ?
Ranveer Allahbadia: 'এমন একটা সময় আসবে যখন তুমি সব হারিয়ে ফেরবে', নাম করে ফের রণবীরকে তোপ নিক্কির?
'এমন একটা সময় আসবে যখন তুমি সব হারিয়ে ফেরবে', নাম করে ফের রণবীরকে তোপ নিক্কির?
New Delhi Station Stampede: নয়াদিল্লিতে পদপিষ্টের ঘটনায় নিখোঁজ বহু, মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর অভিযোগ ! হাসপাতালের বাইরে হাহাকার পরিজনদের..
নয়াদিল্লিতে পদপিষ্টের ঘটনায় নিখোঁজ বহু, মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর অভিযোগ ! হাসপাতালের বাইরে হাহাকার পরিজনদের..
Asteroid 2024 YR4: ৬১ হাজার কিমি বেগে ধেয়ে আসছে এই গ্রহাণু, ধ্বংস হতে পারে ভারতও ! কী জানাল নাসা ?
৬১ হাজার কিমি বেগে ধেয়ে আসছে এই গ্রহাণু, ধ্বংস হতে পারে ভারতও ! কী জানাল নাসা ?
Embed widget

We use cookies to improve your experience, analyze traffic, and personalize content. By clicking "Allow All Cookies", you agree to our use of cookies.