Jiban Krishna Saha : 'খামে টাকা পৌঁছে দিতেন তৃণমূল কাউন্সিলর', ED-র স্ক্য়ানারে জীবনকৃষ্ণর আত্মীয়ের শপিং মল থেকে রেসিডেন্সিয়াল লজ !
TMC MLA: এ যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল ! একজন বলছেন, খাম ভর্তি টাকা ছিল। আরেকজনের দাবি, না না, টাকা না।

পার্থপ্রতিম ঘোষ, কলকাতা : খামে করে জীবনকৃষ্ণ সাহার আন্দির বাড়িতে টাকা পৌঁছে দিতেন সাঁইথিয়ার তৃণমূল কাউন্সিলর ! এমনই চা়ঞ্চল্য়কর অভিযোগ তুলেছেন কাউন্সিলরের একসময়ের সহযোগী, বর্তমানে বীরভূমের এক বিজেপি নেতা। যদিও টাকা ভর্তি খাম পাঠানোর দাবি পুরোপুরি নস্য়াৎ করেছেন তৃণমূল কাউন্সিলর। তাঁর দাবি, তিনি খামে করে পাঠাতেন নানা রকমের কার্ড। এরই মধ্য়ে ED-র স্ক্য়ানারে জীবনকৃষ্ণ সাহার আত্মীয়ের শপিং মল থেকে রেসিডেন্সিয়াল লজ।
এ যেন ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল ! একজন বলছেন, খাম ভর্তি টাকা ছিল। আরেকজনের দাবি, না না, টাকা না। কখনও খামে ছিল বাবার শ্রাদ্ধের কার্ড। কখনও ছেলের পৈতের আমন্ত্রণ পত্র। ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার নাটকীয় জীবনপঞ্জীর মতোই। তাঁকে নিয়ে তাঁর পরিচিতদের দাবি ঘিরেও নানা নাটক।
যেমন শান্তনু রায়। সাঁইথিয়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর। অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে নাকি প্রায়ই টাকা ভর্তি খাম পৌঁছে যেত জীবনকৃষ্ণ সাহার ডেরায় ! এমনই চাঞ্চল্য়কর দাবি করেছেন, তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু রায়ের একসময়ের সহযোগী, বর্তমানে, বিজেপির বীরভূম জেলা কমিটির সদস্য় গৌর হালদার। তিনি বলেন, "তখন আমার রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন শান্তনু রায়। আমাকে বিভিন্ন সময়ে খামে বন্দি করে দিতেন। আমি দিয়ে আসতাম। জীবন সাহাকে। টাকা-পয়সা থাকত মনে হয়। ওখানে গিয়ে বুঝতাম এখানে চাকরির লেনদেন হয়।"
সালটা ২০১৮। সেই সময় গৌর হালদার ও শান্তনু রায় দু'জনই তৃণমূলে ছিলেন। অভিযোগ, সেই সময়, প্রায়ই তাঁকে জীবনকৃষ্ণ সাহার আন্দির বাড়িতে পাঠাতেন শান্তনু রায়। পৌঁছে দিয়ে আসতে হত খাম, ব্য়াগ। গৌর হালদার বলেন, "৪-৫ বার গেছি জীবনকৃষ্ণ সাহার আন্দির বাড়িতে। চাকরির টাকা।" যদিও জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে টাকা ভর্তি খাম পাঠানোর দাবি পুরোপুরি নস্য়াৎ করেছেন তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু রায়। তাঁর দাবি, তিনি খামে করে নানা রকমের কার্ড পাঠাতেন। শান্তনু রায় বলেন, "খামে কোনও সময় টাকা থাকত না। ভুল ধারণা। বিভিন্ন সময়ে যে অনুষ্ঠানগুলো হত তার আমন্ত্রণপত্র থাকত। আমার বাবার শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ সেই খামেই গেছে। গৌর হালদার হয়ত আমার ছেলের পৈতের কার্ড দিতে গিয়েছিল। বিরোধী রাজনৈতিক দল তো ফয়দা তোলার চেষ্টা করবেই। আমন্ত্রণপত্রটাও তারা টাকা ভাববে। টাকার খাম ভাববে।"
ধৃত তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার সম্পত্তি... ব্য়াঙ্ক অ্য়াকাউন্ট ছাড়াও, ED-র স্ক্য়ানারে রয়েছে তৃণমূল বিধায়কের আত্মীয়-পরিচিতদের নামে থাকা একাধিক সম্পত্তি। যেমন, বীরভূমের সাঁইথিয়া স্টেশন রোডের ওপর, সাড়ে ৪ হাজার স্কোয়ার ফিটের এই ৪ তলা শপিং মল। যে জমিতে এই শপিং মল, সেই জমির মালিক সাঁইথিয়া পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহার স্বামী সুব্রত সাহা। এই মায়া সাহা-ই সম্পর্কে জীবনকৃষ্ণ সাহার পিসি এবং সুব্রত সাহা পিসেমশাই।
শপিং মলের স্টোর ম্য়ানেজার শুভঙ্কর দেবনাথ বলেন, "ল্য়ান্ডলর্ড সুব্রত সাহা। মায়া সাহার স্বামী। মলটা ৩ বছর হল হয়েছে। মালিক ও মালিকের ছেলে মাঝে মধ্য়ে আসে। জীবন সাহার নাম খবরে শুনেছি।"
বৃহস্পতিবারই জীবনকৃষ্ণ সাহার পিসি, তৃণমূল কাউন্সিলর মায়া সাহাকে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আদালতে যে নথি জমা পড়ছে সেখানে বলা হচ্ছে, জীবনকৃষ্ণ সাহা বিভিন্ন জায়গায় বেনামে একাধিক সম্পত্তি কিনেছেন, জমি কিনেছেন...অনেকের নামে, তারমধ্যে আপনার নাম রয়েছেন...আপনি তো ওঁর পিসি হন...গোটাটাই বলছে ক্যাশে কেনা হয়েছিল...বেশিরভাটাই ? এর উত্তরে মায়া সাহা বলেন, "না , এটা মিথ্যা। আমি ওসব ব্যাপারে নেই। এই বাড়ি যেটায় বাস করেছি সেটা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে (ইডি)। জায়গা, লজের জন্য জিজ্ঞাসা করেছে। এগুলোই জেনেছেন। কী করে কিনলেন, কী করে হল ।"
শুধু শপিং মলই নয়, সূত্রের খবর, ED-র স্ক্য়ানারে রয়েছে সুবিশাল লজও। মৌচাক রেসিডেন্সিয়াল লজ। ৩৭টা ঘর বিশিষ্ট এই লজের মালিকও জীবনকৃষ্ণ সাহার পিসি, মায়া সাহার স্বামী সুব্রত সাহা। মৌচাক রেসিডেন্সিয়াল লজের কেয়ারটেকার তরুণ সাহা বলেন, "সুব্রত সাহা দেখাশোনা করার জন্য আসেন।"
যদিও এই সম্পত্তি পুরোপুরি তাঁর নিজের টাকাতেই বলে দাবি করেছেন জীবনকৃষ্ণ সাহার পিসেমশাই। তিনি বলেন, "এটা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আমরা বনেদি বড়লোক বলা চলে। কোনও লেনদেন নেই। জীবনকৃষ্ণ সাহার সঙ্গে আমাদের কোনও লেনদেন নেই। আত্মীয়র সম্পর্ক ছাড়া, কোনও লেনদেন হয় না।"
আপাতত জীবনকৃষ্ণ সাহা সিবিআই হেফাজতে। তাঁকে জেরা করে চাকরি বিক্রির রহস্য় উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।






















