Kali Puja 2021 : স্ত্রীর অপঘাতে মৃত্যু, নিস্তার পেতেই নাকি নিস্তারিণী কালীপুজোর শুরু করেছিলেন পাটুলির রাজা !
কথিত আছে, নিত্যদিন সাংসারিক অশান্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন হরিশ্চন্দ্র দত্ত রায়...
সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, শেওড়াফুলি : শেওড়াফুলি নিস্তারিণী কালী দক্ষিণাকালী হিসাবে পূজিত হন। গঙ্গার ধারে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে এই মন্দির। এবার ১৯৫তম বছরে পা দিল এই পুজো।
কথিত আছে, নিত্যদিন সাংসারিক অশান্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে প্রথম স্ত্রীকে হত্যা করেছিলেন পাটুলির রাজা হরিশ্চন্দ্র দত্ত রায়। সঙ্গে এও কথিত অপঘাতে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর স্ত্রীর । ঠিক কীভাবে মৃত্যু তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে নিস্তার পেতেই নিস্তারিণী কালীপুজো শুরু করেন রাজা।
১৮২৭ সালের ঘটনা। বর্ধমানের পাটুলির রাজা হরিশ্চন্দ্রের তিন রানি ছিল। তাঁদের মধ্যে নিত্যদিন অশান্তি লেগেই থাকত। সেদিন নারায়ণপুর প্রাসাদে ফিরে তিন রানির ঝগড়া দেখে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন রাজা। তরবারি দিয়ে বড় রানিকে হত্যা করেন। বর্ধমানের পাশাপাশি শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি অঞ্চলে রাজার অনেক সম্পত্তি ছিল। ঘটনার দিনকয়েক পরে বিষণ্ণ রাজা একদিন রাতে ঘোড়া ছুটিয়ে শ্রীরামপুরে চলে আসেন। সেখানে পূর্বপুরুষ প্রতিষ্ঠিত রামসীতা মন্দিরে সারারাত বসে থাকেন। ক্লান্তি অবসাদে তিনি এক সময় ঘুমিয়ে পড়েন, স্বপ্ন দেখেন। গঙ্গা থেকে পাওয়া কষ্টি পাথর দিয়ে তৈরি হয় কালী মূর্তি।
শেওড়াফুলিতে গঙ্গার পাড়ে মন্দির স্থাপন করে প্রতিষ্ঠা করেন দক্ষিণা কালীর। দেবীর অধিষ্ঠান পঞ্চমুণ্ডির আসনে। মন্দিরে কোনও ঘট নেই। দেবীর হাতে রয়েছে তরবারি, যা আজও সেই রাজ পরিবারের স্মারক বহন করে চলেছে। রাজা হরিশ্চন্দ্রের বড় রানির নাম ছিল সর্বমঙ্গলা। এমনও কথা প্রচলিত রয়েছে, মন্দিরে সেই বড় রানিকেই দেবীর রূপ দিয়েছিলেন রাজা।
সারা বছর নিস্তারিণী মন্দিরে পুজো হয়। প্রত্যেক অমাবস্যায় বিশেষ পুজোপাঠ ও ছাগবলি দেওয়া হয়। কৌশিকী অমাবস্যার রাতে বিশেষ পুজো হয় মন্দিরে। আর কালীপুজোর সময় সারাদিন ধরে চলে পুজো, হোম যজ্ঞ, চণ্ডীপাঠ। পরদিন হয় ভোগ-বিতরণ। বিখ্যাত এই পুজো দেখতে জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন ওই মন্দিরে। নিস্তারিণী মায়ের কাছে মন থেকে কিছু চাইলে তা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস ভক্তদের। আজও সেই বিশ্বাসের টানে দূর দূর থেকে নিস্তারিণী মন্দিরে ভিড় জমান ভক্তরা।
শেওড়াফুলি রাজ বংশের সদস্য আশিস ঘোষ জানান, রানি রাসমণি স্বামী মারা যাওয়ার পর বজরায় করে কাশী যাচ্ছিলেন। শেওড়াফুলি নিস্তারিণী ঘাটে আসার সময় তিনি একটি ফুটফুটে বাচ্চাকে দেখেন লাল পাড় সাদা শাড়িতে। মন্দিরে এসে দেখেন, ওই মেয়েটির সাথে কালীমূর্তির মিল আছে। তারপরে তিনি কাশী না গিয়ে, জানবাজার ফিরে যান। তার ২৪ বছর পর দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির স্থাপিত হয়। নিস্তারিণী কালীর অনুকরণেই দক্ষিণেশ্বরের কালী। এখানে ছাগ বলির প্রথা এখনও প্রচলিত। প্রত্যেক অমাবস্যাতেই ছাগ বলি হয়।
মন্দিরের এক সেবাইত জানান, মন্দিরের দু'পাশে দু'টি শিবলিঙ্গ আছে। এখানে কৃষ্ণপুজো হয়। কৃষ্ণের সাথে রাধা থাকেন না। নিস্তারিণী কালী মায়ের হাতে খর্গর বদলে থাকে তলোয়ার। অষ্ট কল পদ্মের উপর বিরাজমান, পাশের ঘরে বিরাজমান মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা। দীপান্বিতা কালীপুজোর দিন ছাগ বলি হয়, সারারাত পুজো হয়।
মন্দির চত্বর সিসিটিভি দিয়ে ঘেরা।