Mamata Banerjee: 'নির্বাচন কমিশন বিজেপি-র লোকে ভর্তি', ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে তীব্র আক্রমণ, মমতা বললেন, ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই হবে’
Mamata Attacks Election Commission: বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের হেনস্থার প্রতিবাদে বুধবার বৃষ্টিতে ভিজেই কলকাতার রাস্তায় মিছিল করেন মমতা।

কলকাতা: বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন রাজ্যে। আর তার আগে বাঙালি অস্মিতাকে সামনে রেখে, বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের। বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি হেনস্থা, বাংলাভাষী হেনস্থা নিয়ে সরব হলেন তিনি। পাশাপাশি ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে একহাত নিলেন নির্বাচন কমিশনকেও। নির্বাচন কমিশনকে মমতা 'বিজেপি-র দালাল' বলেও আক্রমণ করলেন। ২১ জুলািয়ের আগে আজই মমতা ঘোষণা করে দিলেন, 'খেলা হবে'। (Mamata Banerjee)
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের হেনস্থার প্রতিবাদে বুধবার বৃষ্টিতে ভিজেই কলকাতার রাস্তায় মিছিল করেন মমতা। এর পর ঝাঁঝাল বক্তৃতায় বিজেপি-কে আক্রমণের পাশাপাশি, কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। এদিন মমতা বলেন, "নির্বাচন এলেই নাম বাদ দিয়ে দেবে! আর একটা নির্বাচন কমিশন রয়েছে। অসম্মান করতে চাই না আমি। কিন্তু যদি বিজেপি-র দালালি করে, তাহলে আমরাও ছাড়ব না। বিহারে লক্ষ লক্ষ ভোটারকে তালিকা থেকে বের করে দিয়েছে। এভাবেই মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে জিতেছে বিজেপি। বিহারের পর বাংলাতেও সেই পরিকল্পনা চলছে। আমিও বলে দিচ্ছি, ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লড়াই করব। বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না।" (Mamata Attacks Election Commission)
মমতা আরও বলেন, "আমি ঠিক করেছি, আরও বেশি বাংলায় কথা বলব। ক্ষমতা থাকলে আমাকেও ডিটেনশন শিবিরে রাখুন। অসমে ১২ লক্ষ বাঙালি বাদ দিয়েছেন। রাজবংশীরা হিন্দু না মুসলিম? এই বিজেপি-র দালাল, লজ্জা করে না! নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ভোটার বাদ দিয়ে দিচ্ছে। বলছে ২০০২ সালের তালিকা দেখবে। কত লোক তো মারা গিয়েছেন! কত নতুন লোক এসেছেন, কত বাচ্চা জন্মেছে। কে কী পরবে, কে কী খাবে, কে কোথায় থাকবে, কে কোন ভাষায় কথা বলবে, তা ওরা ঠিক করবে!"
নির্বাচন কমিশন বিজেপি-র হয়ে কাজ করছে বলেও এদিন কার্যত আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, "আগে বলেছিল, ইস বার ২০০ পার। এখন বলছে সব নাম বাদ দাও, ভোট দেবে শুধু বিজেপি। আমরা বলছি, বসে থাকো। ওই আশায় বসে থাকো। নির্বাচন কমিশনে তো বিজেপি ভর্তি! যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন, পদমর্যাদার নিরিখে সম্মান করি ওঁকে। কিন্তু উনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রধান সচিব ছিলেন। অমিত শাহের সচিব ছিলেন উনি। আমি জানি এটা। কোনও পক্ষপাতহীন লোক নেই ওখানে। নির্বাচনের আগে বুঝতে পেরেছে। এভাবেই বিজেপি-কে জিতিয়েছিল। নির্বাচনের সময় ১৮-২০ শতাংশ ভোট হঠাৎ বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিজেপি কিন্তু জেতেনি। পরিষ্কার বলে দিচ্ছি, বাংলার মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখলে, আগামী দিনে রাজনৈতিক ভাবে নির্বাচনের লড়াইয়ে বিজেপি-কে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখবেন বাংলার মানুষ। সেদিনের আর দেরি নেই।"
অন্য রাজ্যে বসে বাংলার মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে কাটা হচ্ছে, সেই জায়গায় অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের নাম ঢোকানো হচ্ছেন বলে দাবি করেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, "অন্যে রাজ্যে বসে এ রাজ্যের নাম কাটা হচ্ছে। অনলাইন নাম কেটে দিচ্ছে। আমাদের একটা ভোটার তো, সঙ্গে তিনটে গুজরাতির নাম, দু'টো দিল্লিবাসীর নাম, তো তিনটে উত্তরপ্রদেশবাসীর নাম, চারটি রাজস্থানবাসীর নাম। এটা কী হচ্ছে? আমদাবাদের লোক এখানকার ভোটার হবেন কেন?"
নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে দিয়ে যা ইচ্ছে ফরমান জারি করা যাবে না বলে এদিন সাফ জানিয়ে দেন মমতা। তিনি বলেন, "এত খাটো করে দেখবেন না, এত ছোট করে দেখবেন না। এজেন্সি লাগিয়ে, নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে যা ইচ্ছে ফরমান জারি করার চেষ্টা করবেন না। মানুষের ভোটাধিকার কাড়ার অধিকার নেই আপনাদের। নতুন ভোটারদের বলব, অগাস্ট থেকে শুরু হবে। ভোটার তালিকায় নাম তুলবেন। চালাকিটা নজরে রাখবেন। বুক দিয়ে লড়াই করবেন। বাংলা আমাদের আছে, থাকবে। আগামী দিনে দিল্লি দখলও করব আমরা। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। ২০২৬-এ বাংলা, তা পর দিল্লিতে যে নির্বাচন হবে, তাতে I.N.D.I.A জিতবে।"
এদিন মমতা জানান, তিনি সব ভাষার মানুষকে সম্মান করেন। পশ্চিমবঙ্গেও হিন্দিভাষী, গুজরাতি ভাষার মানুষ আছেন। কিন্তু এখানে কারও উপর কোনও অত্য়াচার হয় না। বাংলাভাষী এবং বাঙালিদের উপর অত্যাচার হলে, তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে জানান। মমতা বলেন, "আপনারা আমাকে আঘাত করতে পারেন। কিন্তু আঘাত করলে, প্রত্য়াঘাত কী হতে পারে, আপনাদের ধারণা নেই। সুস্থ বাঘের চেয়ে আহত বাঘ আরও ভয়ঙ্কর। আজ বাংলাকে আহত করছেন। বাংলা ভাষায় কথা বললে অসম্মান করছেন, জেলে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আহত। কিন্তু মাথায় রাখবেন, আমরা সুসংহত। এর জবাব আমরা দেবই দেব। তৈরি থাকুন।"






















