SIR in Bengal: ‘আপাতত স্থগিত রাখা হোক SIR’, জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি মমতার
Mamata Banerjee: বিহারের পর ভোটমুখী বাংলাতেও জোরকদমে SIR-এর কাজ চলছে।

কলকাতা: ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন, SIR ঘিরে রাজনীতির পারদ চড়ছেই। সেই আবহেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। SIR আপাতত স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে ওই চিঠি দিয়েছেন তিনি। মমতার দাবি, পরিকল্পনাহীন ভাবে, জোর করে কাজ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যথাযোগ্য পদক্ষেপ করতেও আবেদন জানিয়েছেন। (Mamata Banerjee)
বিহারের পর ভোটমুখী বাংলাতেও জোরকদমে SIR-এর কাজ চলছে। কিন্তু BLO-দের মৃত্যুর খবরও উঠে আসছে লাগাতার। অভিযোগ, অসম্ভব চাপ সহ্য করতে না পেরে কেউ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, কেউ আবার বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার রাস্তা। পশ্চিমবঙ্গ বলেই নয়, রাজস্থান থেকেও এমন ঘটনা সামনে এসেছে। সেই আবহেই জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিলেন মমতা। (SIR in Bengal)
জাতীয় নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে ওই চিঠি লিখেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, “উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কাজ বন্ধ হোক। মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পরিকল্পনাহীন ভাবে আধিকারিক ও মানুষের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে, যা খুবই বিপজ্জনক। BLO-দের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। এত কম সময়ের মধ্যে BLO-দের উপর অবাস্তব কাজের চাপ। সাধ্যের ঊর্ধ্বে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হোক SIR-এর জন্য। অবলম্বন করা হোক সঠিক পদ্ধতি।”
একদিন আগেই জলপাইগুড়ি থেকে এক BLO-র আত্মঘাতী হওয়ার খবর সামনে আসে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আরও অনেকের প্রাণহানির খবর সামনে এসেছে। চিঠিতে তারও উল্লেখ করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘গতকাল SIR-এর চাপে জলপাইগুড়ির মাল-এ BLO আত্মঘাতী হয়েছেন। SIR-এর শুরুতে অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। পরিকল্পনাহীন, হঠকারী সিদ্ধান্তের শিকার মানুষ এবং নির্বাচনের কাজে যুক্ত আধিকারিকরা।” যথাযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন মমতা।
SIR নিয়ে একাধিক আত্মহত্যা, মৃত্যু, অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। একাধিক বার সেই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। গত ১০ নভেম্বর তিনি জানান, SIR-এর নামে সুপারএমার্জেন্সি করা হচ্ছে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "সরকার যাতে কাজ করতে না পারে, তার জন্য ঘুরিয়ে সুপারএমার্জেন্সি করেছেন। নোটবন্দির মতো মানুষকে SIR বন্দি করে রেখে, তার অধিকারকে তালাবন্দি করে রেখে, ভাবছে গায়ের জোরে পগার হবে। পগার পার এমনিতেই হতে হবে ওদের। আমি এখনও মনে করি, SIR স্থগিত হওয়া উচিত।"
একে অল্প সময়, তার উপর চাপ, হুমকি-হুঁশিয়ারি। সেই নিয়ে BLO-রাও বার বার সরব হন। আবার বাবা-ঠাকুরদার আমলের নথি খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেও। এবার মমতা SIR স্থগিত রাখতে আবেদন জানালেন। যদিও কংগ্রেস নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটা বলা মানে...ধরুন বিয়েতে কাউকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াচ্ছেন। ভাত-ডাল-শাক-মাছ-ভাজার পর মিষ্টি ও চাটনি দেওয়ার পালা এলে বলছেন, আর খেতে দেওয়া হবে না। বাড়ি যাও। এই SIR ডেকে এনেছিলেন কে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গের BLO কারা? মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দলেরই ৮০ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে ভোট লুঠ হয়। আজ SIR যখন এল, বড় বড় ভাষণ দিলেন। বললেন, রক্তগঙ্গা বইবে, SIR হতে দেবেন না। তখনই বলেছিলাম, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই সবচেয়ে বেশি তৎপর হবেন SIR চালু করতে। জ্যান্তকে মরা, মরাকে জ্যান্ত করার কাজটা তৃণমূল করে। সুচারু ভাবে ওরাই SIR চালু করাল। এখন যখন প্রশ্ন উঠছে, চিঠি দিয়ে প্রতিবাদ করে দাও। এগুলোকে বলে নাটক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নাটকে অভ্যস্ত।"
বিজেপি-র সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার যদিও বলেন, "নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে। আরও সময় প্রয়োজন বলে যদি কমিশন মনে করে, বিজেপি-র কোনও আপত্তি থাকবে না।"
যদিও তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী বলেন, "SIR-এর নামে এই চাপে গোটা দেশে সঙ্কট। BLO-দের ডেটা এন্ট্রি করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই টেক স্যাভি নন। স্কুলে পড়ানো যাঁদের কাজ, সব শিকেয় গিয়েছে। বিজেপি-কে জেতাতে হবে। একটা রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতা পাইয়ে দিতে হবে বলে কোভিডের সময় বাংলায় সাত দফায় ভোট করিয়েছিল কমিশন। সবের জন্য দায়ী কমিশন। ওদের জবাব দিতে হবে। এই রাজ্য থেকে বিজেপি-র নাম মুছে দেবেন বাংলার মানুষ।"
অন্য দিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী লেখেন, 'মুখোশ খুলে গিয়েছে, তৃণমূল ও পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের অপবিত্র যোগসাজশের পর্দাফাঁস হয়েছে। জেলাশাসকরাই জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের দায়িত্ব সামলান। জেলাশাসকরা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন। একাধিক জেলায় তৃণমূলের নির্বাচনী এজেন্টের মতো কাজ করছেন জেলাশাসকরা। BLO-দের বদলি, সাসপেনশন থেকে বেতন কাটার হুমকি দিচ্ছেন জেলাশাসকরা। জেলাশাসককে অথবা তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের OTP শেয়ার করতে চাপ দিচ্ছেন। BLO অ্য়াপের অপব্যবহার করতেই চাপ দেওয়া হচ্ছে BLO-দের। SIR-এর মাধ্যমে ভোটার তালিকা নির্ভুল করার চেষ্টা করছে কমিশন। ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া গুলিয়ে দিতেই এই চাপ দেওয়া হচ্ছে। ভুয়ো ভোটার যোগ করতে ও প্রকৃত ভোটার বাদ দিতে BLO অ্যাপ হাইজ্যাক করছে মমতা প্রশাসন। এটা শুধু সিস্টেমেটিক রিগিং নয়, দিনের আলোয় গণতন্ত্রের হত্যা'। যদিও শুভেন্দু এবং বিজেপি নেতারাই বার বার BLO-দের হুমকি দেন, জেলে ভরার হুঁশিয়ারি দেন বলে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।





















