Murshidabad : দলে টানতে কোটি কোটি টাকা 'অফার' তৃণমূলের ? গোপন ডেরায় রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা !
Raninagar Panchayat Samity Board : পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধীদের দখলে আসার পরও 'নিস্তার' নেই ! হাজার বা লাখে নয়, দলবদল করলেই দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার 'দমদার' অফার
আবীর দত্ত, রানিনগর : পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের দলে টানতেও এবার নাকি কোটি কোটি টাকা খরচ করতে রাজি তৃণমূল (TMC)। রানিনগর থেকে উঠে এল এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। দলবদলের দাম শুনে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠার জোগাড় রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির (Raninagar Panchayat Samiti) বিরোধী দলের জয়ী সদস্যদের। তবুও এই টানাপোড়েনের হাত থেকে বাঁচতে আপাতত গোপন ডেরায় আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা।
রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও বাম নেতা মুস্তাকিম আলমের অভিযোগ, কাউকে ১ কোটি বলছেন, কাউকে ৫০ লক্ষ বলছেন।
রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য পারভিনা বিবি বলেন, 'আমাকে বলেছিল ২৫ লক্ষ টাকা দেব। কর্মাধ্যক্ষ দেব। এই বলে আমাকে লোভ দেখাচ্ছিল। আমরা তো ওদের লোভে পড়িনি।'
পঞ্চায়েত সমিতি বিরোধীদের দখলে আসার পরও 'নিস্তার' নেই ! হাজার বা লাখে নয়, দলবদল করলেই দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকার 'দমদার' অফার। গোপন ডেরায় গিয়ে থাকতে হচ্ছে রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির একাধিক সদস্যকে।
এমনকি, মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো, হুমকির ভয়েও ঘরছাড়া রয়েছেন বাম-কংগ্রেসের একাধিক নেতা-কর্মী।
সোমবার রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে স্থায়ী বোর্ড গঠনের কথা ছিল। কিন্তু, বোর্ড গঠনের আগে, থানায় হামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বাম-কংগ্রেসের ৩৬ জনে নেতা কর্মীকে। বোর্ড গঠনে বাধা দিতেই তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে আদালতে যায় কংগ্রেস। কংগ্রেসের মামলার প্রেক্ষিতে এদিন, স্থায়ী বোর্ড গঠনে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।
বাম-কংগ্রেসের অভিযোগ, কোনও বিধায়ক বা সাংসদ নয়, একটা পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী বোর্ড নিজেদের হাতে রাখতেও কোটি টাকা দিয়ে ঘোড়া কেনাবেচাতে রাজি তৃণমূল ! এই মুহূর্তে গোপন ডেরায় থাকছেন, রানিনগর ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির ৫ জন সদস্য ও ১ জন অঞ্চল প্রধান। এমনকি গোপন ডেরায় রয়েছেন জেলা পরিষদের ১ জন সদস্যও। রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও বাম নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকি বলছেন, 'আমরা বাইরে ছিলাম। পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। ২ কোটি টাকা ও সভাপতি।'
শুধু টাকার প্রলোভন দেখানোই নয়, বিরোধীদের আরও অভিযোগ, ফাঁসানো হচ্ছে মিথ্যে মামলায়। তাঁদেরকে পড়তে হচ্ছে শাসকদলের হুমকির মুখে । সেই কারণেও ঘরছাড়া রয়েছেন অনেকে।
সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্য সালমা সুলতানা বলেন, "দুই-এক দিন আগে যে সভাটা হল, ওই নিয়ে যে থানা ভাঙচুর-পার্টি অফিস ভাঙচুর, সেটাতে আমার স্বামীর নাম জড়িত আছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। সেই সূত্রেই তিন দিন ধরে ঘরছাড়া আছি।"
অন্যদিকে, রানিনগর পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও বাম নেতা হাসিবুর রহমানের বক্তব্য, "অধীর চৌধুরীর মিটিংয়ে আমরা স্টেজেই ছিলাম। অথচ বেছে বেছে আমরা নাম, আমাদের পাড়ার অনেকের নাম দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।"
এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্পাদক জুলফিকার আলি ভুট্টো বলেন, "সাধারণ মানুষ বসে থাকলে পুলিশ প্রশাসন রাস্তা দিয়ে গিয়ে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিভিন্নভাবে কেসে জড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাস তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। "
যদিও রানিনগরের তৃণমূল বিধায়ক সৌমিক হোসেন বলেন, "জলঙ্গি বিধানসভার যে চারটি অঞ্চল আছে, সেখানে বেশিরভাগ জায়গায় আমরা দেখেছি, সিপিএম-কংগ্রেস জোট জিতেছে। সেখান থেকেই যারা সিপিএম-কংগ্রেস জোটের লোক তারা থানা ভাঙচুর থেকে শুরু করে, তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙা...এসব করেছে। তাই ওদের সদস্যরা আস্তে আস্তে আমাদের তৃণমূলে যোগদান করেছে। এখানে কোনও রকম ভয় দেখানোর বিষয় নেই।"
দলবদলের এই খেলা কি কোনও দিন বন্ধ হবে। নাকি গণতন্ত্রকে এভাবে টাকার দাঁড়িপাল্লায় তোলা হবে বারবার !