Padma Awards 2024:অন্য রকম আওয়াজের জন্য স্কুলে গানের ক্লাস থেকে বের হতে হয়েছিল, সেই উষা উত্থুুপই পদ্মভূষণ আজ
Padma Bhushan Usha Uthup: উষা উত্থুপ, আজকের পর থেকে যিনি পদ্মভূষণ উষা উত্থুপ। সঙ্গীতের দুনিয়ায় অবদানের জন্য এ বছর 'পদ্মভূষণ' পেয়েছেন তিনি।
কলকাতা: পরিপাটি করে পরা চোখধাঁধানো শাড়ি, চুলে তাজা ফুলের মালা, হাতভরা চুরি, কপালে বড় টিপ। এই বর্ণনা শুনে একজনেরই নাম গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে মনে করে এসেছে আসমুদ্রহিমাচল। উষা উত্থুপ, আজকের পর থেকে যিনি পদ্মভূষণ উষা উত্থুপ। সঙ্গীতের দুনিয়ায় অবদানের জন্য এ বছর 'পদ্মভূষণ' পেয়েছেন তিনি। অথচ একদিন অন্য রকম 'গলার আওয়াজের' জন্য কিনা গানের ক্লাস থেকে ধাক্কা খেতে হয়েছিল সেই তাঁকে।
ফিরে দেখা...
মুম্বই তখনও বম্বে। সেখানকার কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরি স্কুলের এক ছাত্রীকে গানের শিক্ষিকা মিস ডেভিডসন বললেন, 'এর পর থেকে আর গানের ক্লাসে এসো না। তোমার আওয়াজ বড় অদ্ভূত, মজার।' কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এসেছিল দশ বছরের ছোট মেয়েটি। সেটা ১৯৫৭ সাল। মিস ডেভিডসন নিশ্চিত ভাবেই তখন টের পাননি, এই মেয়ে একদিন গোটা ভারতের 'পপ সম্র্রাজ্ঞী'-র শিরোপা পাবে। উষা উত্থুপ নামের সঙ্গে জুড়ে যাবে 'হরে রামা হরে কৃষ্ণা', 'রমভা হো হো হো ', 'কোই ইয়াহাঁ আহা নাচে নাচে'-র মতো গান। ভারতীয় শ্রোতাদের কানে এই সব সুর তখন অনেকটাই ছকভাঙা, কিন্তু তাতে কী? 'পপ মিউজিক'-র ঘরানায় তখন প্রায় গোটা দেশকেই মাতিয়ে দিয়েছেন উষা উত্থুপ।
১৯৪৭ সালে চেন্নাইয়ে জন্ম এই সঙ্গীতশিল্পীর। তবে স্কুলজীবনের স্মৃতির অনেকটা জুড়ে মুম্বই বা তৎকালীন বম্বে। সেখানেই মিস ডেভিডসনের সঙ্গে ছোটবেলার ওই অভিজ্ঞতা যা পরে শোনা গিয়েছে সঙ্গীতশিল্পীর মুখে। মজার কথা হল, স্কুলের এই সঙ্গীতশিক্ষিকাই পরে একসময়ে প্রাক্তন ছাত্রীর একটি অনুষ্ঠানে শ্রোতা হিসেবে এসেছিলেন। শিক্ষিকা ও ছাত্রীর মধ্যে সে সময় কী কথাবার্তা হয়েছিল? এসব মুহূর্ত ব্যক্তিগতই থাকুক না হয়।
তবে তিনি যে প্রথাগত ভাবে গানের নোটেশন শেখেননি, সে নিয়ে প্রকাশ্যেই আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছে প্রবীণ এই সঙ্গীতশিল্পীকে। তাতে অবশ্য দমার পাত্র ছিলেন না। বরং এই না-শেখাই নতুন কিছু আয়ত্তে আনতে উদ্বুদ্ধ করে গিয়েছে উষা উত্থুপকে।
যাত্রা শুরু...
চেন্নাইয়ের 'নাইন জেমস' নাইটক্লাবে গান করা দিয়ে সঙ্গীতজীবন শুরু তাঁর। তার পর, তিলোত্তমায় আসা। এই শহরে 'ট্রিনকাস'-এ তাঁর গান দুর্দান্ত জনপ্রিয় হয়। তবে বলিউড-যাত্রার সুযোগ এসেছিল দিল্লির 'দ্য ওবেরয়'-এ গান করার সুবাদে। বলি-তারকা শশী কপুরই সুরকার আর ডি বর্মনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন উষার। তার পর, হিন্দি ছবি 'কভি ধুপ, কভি ছাঁও'-তে প্লেব্যাকের সুযোগ আসে। ১৯৭১ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। উষার প্রথম বলি-গানে অন স্ক্রিন 'পারফর্ম' করতে দেখা যায় হেলেন এবং দারা সিংহ-কে। শোনা যায় এই নিয়ে দাদা শ্যাম সুন্দর খুনসুটি করতেন বোনের সঙ্গে। বলতেন, 'এবার দারা সিংহের জন্য গান গাইছিস!' কিছুতেই দমার পাত্রী ছিলেন না উষা। তাঁর কণ্ঠে যে নারীসুলভ পেলবতার পরিবর্তে অন্য মাধুর্য রয়েছে, সে কথা বুঝতে শুরু করেছিলেন।
সেই কণ্ঠস্বর যাতে মাতোয়ারা হয়েছিলেন গোটা দেশের বহু মানুষ। সেই কণ্ঠস্বর যা শুনতে 'ট্রিনকাস '-এ আসতেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সেই কণ্ঠস্বর যা বিশিষ্ট সুরকার ইলাইয়ারাজা এবং এ আর রহমানের সৃষ্টিতেও প্রাণ দিয়েছে। তবে জনপ্রিয়তা ভুললেও কলকাতার সঙ্গে যোগের কথা কখনও ভোলেননি উষা। তাই তো কেরলের বাসিন্দা, জনি চারকো উত্থুপের সঙ্গে বিয়ের পর কোচিতে নিজেদের বাড়ির নাম রেখেছিলেন 'ট্রিনকাস।'
তার পর বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে অনেক ঢেউ আছড়ে পড়েছে। ১৭টি ভারতীয় ও ৮টি বিদেশি ভাষায় 'পারফর্ম' করার মতো রেকর্ড গড়েছেন উষা উত্থুপ। কিন্তু কলকাতা তথা বাংলার সঙ্গে সম্পর্ক কখনও ধাক্কা খায়নি। আজ তাঁর পদ্মভূষণ সম্মানে তাই সম্মানিত এ রাজ্যও।
প্রতিক্রিয়া...
পদ্মভূষণ পেয়ে প্রবীণ সঙ্গীতশিল্পীর প্রতিক্রিয়া, 'এতটাই আপ্লুত যে সঠিক ভাবে সেটা প্রকাশও করতে পারছি না।...৫৪ বছর ধরে আমার গান ভালোবাসার জন্য সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। নিজের মানুষ ও নিজের দেশের সরকার যখন আপনাকে স্বীকৃতি দেয়, তখন অন্য রকম আনন্দ হয়। আশা করব, এই ভাবে আরও অনেক বছর গান করে যেতে পারি। আরও বলতে চাই, আগামী প্রজন্মের কাছে যেন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারি। তোমাদেরও নিশ্চয়ই কোনও স্বপ্ন রয়েছে। কঠোর পরিশ্রম করলে সেই স্বপ্ন নিশ্চয়ই বাস্তবায়িত হবে। '
আরও পড়ুন:সেলাইয়ের ক্লাসের প্রতি ভালবাসা থেকে বাংলার কাঁথাস্টিচ-কুইন, পদ্মশ্রী তাকদিরার পথচলার গল্প