![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Poila Boisakh 2022 : কম্পিউটারের যুগে হাঁসফাঁস হালখাতা, কোভিড-আমফানের জোড়া ফলায় শেষের পথে ঐতিহ্য?
Haal Khata May Be A Closed Book Soon : কম্পিউটারের যুগে এখন খাতায় নয়, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই এখন হিসেব-নিকেশ গচ্ছিত রাখছেন হার্ডডিস্কে৷ তাই বিক্রি কমেছে হালখাতার৷
![Poila Boisakh 2022 : কম্পিউটারের যুগে হাঁসফাঁস হালখাতা, কোভিড-আমফানের জোড়া ফলায় শেষের পথে ঐতিহ্য? Poila Boishakh 1429 Bengali New Year 2022 Covid, Cyclone, Computer, Haal Khata May Be A Closed Book Soon Poila Boisakh 2022 : কম্পিউটারের যুগে হাঁসফাঁস হালখাতা, কোভিড-আমফানের জোড়া ফলায় শেষের পথে ঐতিহ্য?](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2022/04/14/7816a6a8d1e50e89e7bf882f2516e8a1_original.jpeg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: নববর্ষ মানেই হালখাতা, পঞ্জিকা, মিষ্টিমুখ আর নতুন জামার গন্ধ। বঙ্গের ব্যবসায়ীদের কাছে এটি একটি আর্থিক বছরের সূূচনা বটে। নকম্পিউটারের যুগে হাঁসফাঁস হালখাতা৷ কাল পয়লা বৈশাখ৷ অথচ আগের দিনও মন্দা হালখাতার বাজারে।
নববর্ষের প্রথম দিন লক্ষ্মী-গণেশের পুজো দিয়ে খোলা হয় সারাবছরের বিকিকিনির হিসেবের নতুন খাতা৷ ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের প্রথা৷ কিন্তু আধুনিকতার প্রভাব পড়েছে এই লাল রঙের মলাট দেওয়া খাতাতেও৷ কম্পিউটারের যুগে এখন খাতায় নয়, বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই এখন হিসেব-নিকেশ গচ্ছিত রাখছেন হার্ডডিস্কে৷ তাই বিক্রি কমেছে হালখাতার৷
সেই সঙ্গে করোনা চওড়া থাবা বসিয়েছে অর্থনীতিতেও। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে হালখাতার চাহিদাও কমেছে। কেউ আবার পুজো সেরেছেন নমো নমো করে। সমস্যা দ্বিগুণ হয়েছে. কাগজের দাম বৃদ্ধিতে। ভারতের বৃহত্তম কাগজের বাজারগুলির মধ্যে একটি হল কলকাতার বৈঠাখানা বাজার। হাল খাতা প্রস্তুতকারকরা জানালেন নানা সমস্যায় জর্জরিত তাঁরা।
বিচিত্রা স্টোরের মোহাম্মদ ফারুক জানালেন, "কোভিডে আমাদের গত দুই বছরে ব্যবসা প্রায় শূন্যের হয়ে গিয়েছিল। আগে খেরোর খাতা হট কেকের মতো বিক্রি হত কিন্তু আজ তার 10 শতাংশও পরিমাণ বিক্রি হয় না” । মোঃ ফারুকের ব্যবসা প্রায় ৩০ বছরের বেশি পুরনো। তাঁর আক্ষেপ, আজকাল তো ছোট ব্যবসায়ীরাও আজকাল খাতা বইয়ের পরিবর্তে এক্সেল ফাইলে তাদের অ্যাকাউন্ট বজায় রাখতে পছন্দ করেন। তিনি বললেন, "দুই বছর আগে, বিক্রি ছিল প্রায় 10-15 লক্ষ টাকারপ। তা কমে মাত্র ২ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে।"
বেহাল হালখাতা
তবে, এতদিনের প্রথা বলে কথা৷ তাই আধুনিকতার প্রভাব পড়লেও নতুন বছরের নতুন খাতা কিনতে বাজারমুখী কেউ কেউ৷ ইচ্ছে, এবার অন্তত সন্ধেয়, সকালে মন্দিরে খাতা-পুজো করে, বিকেলে নিমন্ত্রণ জানাবেন ক্রেতাদের। মিষ্টিমুখ করিয়ে বৌনির খাতা খুলবেন। সেই সঙ্গে ক্যালেন্ডার দেওয়াও হবে। এশিয়ার বৃহত্তম বইয়ের বাজার কলেজ স্ট্রিট এবার গত ২ বছরের তুলনায় জমজমাট হলেও, হালখাতার চাহিদার বেহাল দশা চোখে পড়ছে। তাই হয়ত এবার খুবই কম দোকানে পাওয়া যাচ্ছ হাতে সেলাই করা খেরোর খাতা। কেউ দড়িতে বাঁধা খাতা বিক্রি করছেন।
বিচিত্রা পেপারওয়ার্কসের ইমরান বলেন, " গত কয়েক বছরে হাল খাতার বিক্রি কমে যাচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারী ব্যবসা প্রায় শেষ করে দিয়েছে'' । ইমরান আরও বলেন, "কোভিড প্রায় শেষ করে ফেলেছে যারা কাগজের পণ্যে লেনদেন করে। তাছাড়া, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে, বাজার ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে,"
দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষতি
লকডাউনের ধাক্কা এখনও কাটাতে পারেনি এই ইন্ডাস্ট্রি। ইমরান বলেন, বাঁধাইয়ের কাজের শ্রমিক কমে গিয়েছে। "কেউ কেউ খননের কাজ করছে। কেউ ১০০ দিনের কাজে নাম লিখিয়েছে, আবার কেউ চাষবাসে মন দিয়েছে। বেশিরভাগই বাংলার বাইরে চলে গেছে । হয়ত কেউ অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা, তামিলনাড়ুতে চলে গিয়েছে"জানালেন এক ব্যবসায়ী।
বৈঠকখানা বাজারের হাল খাতার বৃহত্তম প্রস্তুতকারক নিতাই শাহ অ্যান্ড সন্সে কাজ করেন মোহাম্মদ রহিম। তিনি বললেন, শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া ছিল। পরিশোধ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় আমফানের আঘাত
জ্বালানীর দাম বৃদ্ধির কারণে কাগজ এবং ক্যানভাসের পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে হাল খাতার দাম বেড়ে গিয়েছে। নির্মাতাদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ফারুক বলেন, "হাল খাতা তৈরির খরচ এখন দুই বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। এ বছর কাগজের দাম ৪০ শতাংশ বেড়েছে।"
খেরোর খাতা
হাল খাতা তৈরি একটি কষ্টকর এবং শ্রমসাধ্য কাজ । চাহিদা কমে যাওয়ায়, হাল খাতা উৎপাদনের কাজ এখন ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করলেই চলে। আগে ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হতো বলে জানান রহিম। খাতার পাতা মোড়া হয়, লাল রুক্ষ তুলোর মতো একটা জিনিস দিয়ে একে বলে "খেরো" ।
রহিম, যিনি জয়নগরের বাসিন্দা, সেই ১৩ বছর বয়স থেকেই খেরোর খাতা তৈরির সাথে জড়িত। এখন ষাটোর্ধ্ব রহিমের মতে, খেরোর খাতা মূলত পূর্ব পাকিস্তানের লোকেরা ব্যবহার করত। বাংলাদেশ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর কিছু লোক তাদের কাছ থেকে কাজ শিখে এখানে ব্যবসা চালায়।
বাঙালির বহু সংস্কৃতিই আধুনিকতার ছোঁয়ায় একে একে হারিয়ে যেতে বসেছে৷ তাহলে কি সেই পথে হালখাতাও?
প্রতিবেদন ও ছবি - অভিষেক দে
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)