Purba Bardhaman News: এনুমারেশন ফর্ম বিলি করতে গিয়ে ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু মহিলা BLO-র, SIR নিয়ে চাপ দেওয়া হচ্ছিল, দাবি পরিবারের
BLO Dies Due to SIR Pressure: মেমারি ২ নম্বর ব্লকের চক বলরামপুর গ্রামের ২৭৮ নম্বক বুথের BLO ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নমিতা হাঁসদা।

রানা দাস, পূর্ব বর্ধমান: SIR-এর চাপে এবার খোদ বুথ লেভেল অফিসারের মৃত্যুর অভিযোগ। কাজের চাপে ব্রেন স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের। বুথে এনুমারেশন ফর্ম বিলির সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মারা যান। পরিবারের দাবি, ফর্ম বিলি নিয়ে চাপে ছিলেন ওই BLO. অবসাদেও ভুগছিলেন। সেই থেকেই ব্রেন স্ট্রোক হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের আশ্বাস মিলেছে। (BLO Dies Due to SIR Pressure)
মেমারি ২ নম্বর ব্লকের চক বলরামপুর গ্রামের ২৭৮ নম্বক বুথের BLO ছিলেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নমিতা হাঁসদা। তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে SIR-এর এনুমারেশন ফর্ম বিলি করছিলেন। গতকাল সন্ধেতেও ফর্ম বিলি করতে বেরোন। সেই সময়ই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। কালনা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে, গভীর রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। (Purba Bardhaman News)
নমিতাদেবীর স্বামীর অভিযোগ, স্ত্রী বেশ মানসিক চাপে ছিলেন। কারণ তাঁর বুথে ১২০০-র বেশি ভোটার রয়েছেন। কেন সেই ফর্ম তাড়াতাড়ি জমা পড়ছে না, আরও তাড়াতাড়ি জমা দিতে হবে বলে বার বার করে চাপ দেওয়া হচ্ছিল নির্বাচন কমিশনের তরফে। স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে বার বার বোঝান তিনি যে এত চাপ নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আস্তে আস্তে কাজ করুন তিনি। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের তরফে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে স্বামীকে জানান নমিতাদেবী।
আর তার পরই শনিবার রাতে মৃত্যু হয় নমিতাদেবীর। জানা গিয়েছে, ব্রেন স্ট্রোক হয় তাঁর। মানসিক চাপ থেকেই এমন পরিণতি বলে মনে করছেন পরিবারের লোকজন। হাসপাতালের তরফেও ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে। সবরকম চেষ্টা হলেও, শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি নমিতাদেবীকে। অন্য কোথাও স্থানান্তরিত করার উপায় ছিল না অত রাতে। শেষ পর্যন্ত মারা যান নমিতাদেবী।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ৮০ শতাংশ ফর্ম কেন তোলা হয়নি এখনও, তা নিয়ে বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছিল নমিতাদেবীকে। দিনরাত খাটতে হচ্ছিল তাঁকে। শনিবার দুপুরে সকালে বেরিয়েছিলেন যেমন, দুপুরে খেয়ে আবারও বেরিয়ে পড়েন। গোটা সন্ধে কাজ করেছেন। কাজ চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্রেন স্ট্রোকেই তিনি মারা যান শেষ পর্যন্ত। এট টার্গেট, এত চাপেই এমন পরিণতি হল বলে মত পরিবারের লোকজনের।
নমিতাদেবীর স্বামী মাধব হাঁসদা সংবাদমাধ্যমে বলেন, "SIR ফর্ম বিলি করতে গিয়ে প্রচুর চাপ দেওয়া হচ্ছিল। বাড়িতে বলত... এত পারসেন্ট, অত পার্সেন্ট বিলি করতে হবে। BDO থেকেই চাপ আসছিল। এখনও ৮০ শতাংশ হয়নি, কী করছেন, এসব বলা হচ্ছিল। আমি বলেছিলাম, সারাদিন কাজ করছো, সন্ধে পর্যন্ত কাজ করছো। এত চাপের কী আছে? ৮০ শতাংশ দেখাতে গিয়ে, চাপেই এটা হয়েছে বলে আমার ধারণা।"
নমিতাদেবীর মৃত্যুতে BLO ঐক্যমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, "এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্য়জনক এবং অপ্রত্যাশিত। একদিকে নির্বাচন কমিশনের চাপ আছে, রাজ্যের শাসক দল এবং প্রধান বিরোধী দলের তরফেও চাপ আছে। সব চাপ গিয়ে পড়ছে BLO-দের উপর। কাজ করতে হবে। কিন্তু এই যে টার্গেট বেঁধে দেওয়া ঠিক নয়। তাই আমরা কমিশনের কাছে সময় বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে। বলেছি, ১১ তারিখের মধ্যে সম্ভব নয়। অনেক বুথে তো দু'দিন, তিন দিন দেরি করে দেওয়া হয়েছে! অস্বাভাবিক চাপ যে রয়েছে, অস্বীকারের উপায় নেই। কমিশনের উচিত, আমাদের দাবি মেনে নেওয়া। দিন তারাই পাল্টাতে পারে। সরকারি কর্মচারী যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরাও মানুষ। তাঁদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ফর্ম বিলি করতেই বেশি সময় লাগে। অথচ তাতেই কম সময় দেওয়া হয়েছে। এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়, যুক্তিযুক্ত নয়, মানবিকও নয়।"
এই ঘটনায় মুখ খুলেছেন তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, "অত্যন্ত দুঃখজনক বললেও কম বলা হয়। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী শুভেন্দু অধিকারী। প্রথম দিন থেকে উনি থ্রেট করছিলেন BLO-দের। 'BLO-দের চাকরি খেয়ে নেব, বিহারের মতো জেলে পুরব' বলে হুমকি দিচ্ছিলেন। এই অমানুষিক স্ট্রেসের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে...পরিবারের লোকই বলছেন। কমিশনের উচিতই হয়নি মাত্র দু'মাসের মধ্যে SIR-এর মতো বিরাট কাজ করা। অধিকাংশ মানুষ এর বাইরে চলে যাবেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে মাত্র দু'মাসের মধ্যে গাজোয়ারি করে এই SIR. তার উপর শুভেন্দু অধিকারীরর মত দেড় আনার নেতাদের হুমকি। এই মৃত্য়ুর জন্য যেমন জ্ঞানেশ কুমার দায়ী, একই ভাবে, তার চেয়েও বেশি দায়ী শুভেন্দু অধিকারী। কমিশনের উচিত শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা। ওকে কে ক্ষমতা দিয়েছে BLO-দের হুমকি দেওয়ার? মানুষের প্রাণ ফেরাতে পারবেন উনি? এত মানুষের প্রাণ...ওঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা উচিত কমিশনের যদি মেরুদণ্ড থাকে।"
সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, "খুবই দুর্ভাগ্যজনক। শোক জানানোর ভাষা নেই। SIR প্রক্রিয়ায় এমন আতঙঅক সৃষ্টি করা হয়েছে, কমিশন যেভাবে রেখেছে, তাতে আতঙ্ক, তৃণমূলের চাপ, তার উপর রোজ BLO-কে ভয় দেখাচ্ছে বিজেপি যে সাসপেন্ড করে দেবে ইত্যাদি। আমি আবারও বলছি, ২০০২ কেন ভিত্তি? ২০২৪, ২০২১, ২০১৯ সালে মানুষ ভোট দিয়েছেন। তাহলে ২০২৪ সালের ভোটে যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা কি পদত্যাগ করবেন? দিল্লিতে বিজেপি-র নেতারা বলতে পারলেন না, কেন ২০০২, কেন ২০২৪ নয়? তোমাদের কথায় তো নির্বাচন কমিশন চলছে? কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরও কেন আধার কার্ড গ্রহণ করা হবে না? মানুষকে অযথা ঝঞ্ঝাটে, বিপদে ফেলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আবারও বলছি, সীমান্ত পার করে কেউ চলে এলে, তা দেখার কাজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। অথচ BLO-র কাঁধে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। রোজ ফোন আসছে। মানুষ আতঙ্কে আছেন।"























