Purba Burdwan Historical Places : ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়স্থান সমৃদ্ধ, পূর্ব বর্ধমানের কোথায় কোথায় ঘোরা যেতে পারে ?
Purba Burdwan Travel Destinations : গোটা জেলাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক মন্দির, পার্ক, ঐতিহাসিক গুরুত্ব-সম্পন্ন স্থাপত্য সহ বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন
বর্ধমান : রাত পোহালেই নতুন বছর। বর্ষশেষ ও বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে মাতোয়ারা গোটা দেশ। এর সঙ্গে রয়েছে ভ্রমণের 'নেশা'। বিশেষ করে অল্পসময়ের মধ্যে এখন অধিকাংশ মানুষই কাছেপিঠে ঘুরে আসতে চান। সেক্ষেত্রে নিজের রাজ্যটাকে ভাল করে চিনে নিলে খুবই সুবিধা হয়। কেউ সমুদ্র ভালবাসেন, কেউ জঙ্গল, তো কেউ পাহাড়। আবার কেউ কেউ ঐতিহাসিক ও ধর্মীয়স্থান ঘুরে দেখতে ভালবাসেন। এক্ষেত্রে ডেস্টিনেশন হয়ে উঠতে পারে পূর্ব বর্ধমান। কিন্তু, কেন এমনটা বলা হচ্ছে ? কারণ, গোটা জেলাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক মন্দির, পার্ক, ঐতিহাসিক গুরুত্ব-সম্পন্ন স্থাপত্য সহ বিভিন্ন ধরনের নিদর্শন।
লর্ড কার্জন গেট- বর্ধমান শহরের দর্শনীয় স্থানগুলির কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসবে লর্ড কার্জন গেট (কার্জন গেট নামেই প্রসিদ্ধ)-এর কথা। বর্ধমান রেলস্টেশন থেকে হাঁটাপথে রয়েছে এই গেট। বাইরে থেকে কোনও মানুষ এলে সুবিশাল এই গেট দেখে আজও মুগ্ধ হয়ে যান। শ্রী বিজয় চাঁদ মহতাবের রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে বর্ধমানের মহারাজা জিটি রোড এবং বিসি রোডের ক্রসিংয়ে এই বিশাল গেটটি তৈরি করেছিলেন। ১৯০৩ সালে এটির নির্মাণ হয়। তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের ১৯০৪ সালে পরিদর্শনের পর এই গেটটি "কার্জন গেট" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এটিকে "বিজয় তোরণ" হিসেবে পুনরায় নামাঙ্কৃত করা হয়।
সর্বমঙ্গলা মন্দির- বর্ধমান শহরে রয়েছে অন্যতম প্রসিদ্ধ এই মন্দির। যার টানে টানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসনে ভক্তরা। কথিত আছে, ১৭০২ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মহারাজ কীর্তিচাঁদ। এই মন্দিরে থাকা সর্বমঙ্গলার মূর্তি প্রায় ১ হাজার বছরের পুরনো। অবিভক্ত বাংলার এটিই প্রথম নবরত্ন মন্দির।
শের আফগানের সমাধি - রাজবাটির কাছে পীর বেহারামের পাশে শের আফগানের সমাধি রয়েছে। ১৬১০ সালে বর্ধমান রেলস্টেশনের কাছে এক ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে নিহত হন কুতুবুদ্দিন খান ও শের আফগান। বর্ধমানের রাজা এই সমাধিগুলি নির্মাণ করেছিলেন। এখন এর রক্ষণাবেক্ষণ করে ASI।
কঙ্কালেশ্বরী কালী মন্দির- বর্ধমান শহরেই কাঞ্চননগর এলাকায় রয়েছে এই মন্দির। এখানে থাকা মা কালীর মূর্তিটি ১৭০০ সালে সংলগ্ন দামোদর নদে পাওয়া যায়। এটিও "নবরত্ন মন্দির"-এর মধ্যে পড়ে। পূর্ব বর্ধমানের এটি দ্বিতীয় নবরত্ন মন্দির।
নবাবহাটের ১০৮ শিবমন্দির- বর্ধমান শহরের উপকণ্ঠে নবাবহাট এলাকায় রয়েছে এই মন্দির। সিউড়ি রোডের পাশে একেবারে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকেই। প্রায় সারাবছরই এখানে ভক্তদের সমাগম দেখা যায়। ১৭৮৮ সালে মহারাজ তিলকচাঁদের স্ত্রী মহারানি বিষণকুমারী এটি নির্মাণ করেছিলেন। আয়তাকার মালার মতো ১০৮টি মন্দির ছাড়াও আরও একটি মন্দির রয়েছে এখানে।
ভাল্কি মাচান- প্রকৃতির কোলে এক নির্জন জায়গা হল এই ভাল্কি মাচান। প্রতাপপুর জঙ্গল রুটে এটি পড়ে। ভাল্কি গ্রাম থেকে ২ কিলোমিটার দূরে। এখানে পুরনো ওয়াচটাওয়ার রয়েছে। কথিত আছে, বর্ধমানের রাজাদের অন্যতম প্রিয় ভালুক শিকারের জায়গা ।
চুপি চর : পূর্বস্থলীতে রয়েছে অক্সবো হ্রদ বা চুপি চর। পাখিদের আবাস স্থান, অন্যতম পছন্দের আনাগোনার জায়গা। অক্স বো লেক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ । স্ফটিকের মতো পরিষ্কার এখানকার জল এবং আশপাশের ফলের বাগানগুলি স্থানীয় এবং পরিযায়ী ৭০ প্রজাতির পাখিদের আকর্ষণ করে।
কালনা রাজবাড়ি মন্দির- ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। অম্বিকা কালনা একসময় প্রাচীন বাংলার বন্দর শহর হিসেবে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। এটি মন্দির শহর হিসেবে প্রসিদ্ধ। বাংলার পোড়ামাটির স্থাপত্যের বেশ কয়েকটি সেরা নিদর্শন রয়েছে এখানে। অষ্টাদশ শতকে বর্ধমান মহারাজারা এখানে বেশ কয়েকটি মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরগুলির অধিকাংশই এখন এএসআই রক্ষণাবেক্ষণ করে।
ক্রাইস্ট চার্চ- মন্দির ও গুরুদোয়ারা ছাড়াও, বর্ধমান শহরে রয়েছে ঊনবিংশ শতকের ক্রাইস্ট চার্চ। বিজয় তোরণের কাছেই রয়েছে ক্যাথলিক চার্চ। লাল ইটের এই গির্জাটি ১৮১৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন চার্লস স্টুয়ার্টের তদারকিতে তৈরি হয়েছিল।
রমনাবাগান জ্যুলজিক্যাল পার্ক- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের কাছে রয়েছে এই ফরেস্ট। ১৪ হেক্টর জায়গার ওপর। রয়েছে প্রচুর সংখ্যক হরিণ। এছাড়াও এখানে দেখা মিলতে পারে চিতা, ভাল্লুক, কুমির, দাগযুক্ত হরিণ ছাড়াও বিভিন্ন রকমের পাখি। বন দফতর এর দেখভাল করে।
কৃষ্ণসায়র ইকোলজিক্যাল পার্ক- ১৬৯১ সালে বর্ধমানের রাজা কৃষ্ণসায়রে একটি বিশাল কৃত্রিম হ্রদ তৈরি করেছিলেন। প্রায় ৩৩ একর জমিতে । এটা অন্যতম জনপ্রিয় একটি পার্ক। পার্কের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে হ্রদটি। আশপাশে রয়েছে গাছপালা ।