এক্সপ্লোর

Rabindranath Tagore: 'সমুখে শান্তি পারাবার, ভাসাও তরণী হে কর্ণধার'

Rabindranath Thakur Death Anniversary: জীবনকে জীবনের মতো করেই দেখতে ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। না হলে কুড়ি বছর বয়সি যুবক ভানুসিংহের পদাবলীতে সাবলীলভাবে কীভাবে লিখে গিয়েছিলেন, 'মরণ রে তুহুঁ মম শ্যামসমান'!

কলকাতা: মৃত্যুর শোক তাঁকে স্পর্শ করেছে এক ভিন্ন আঙ্গিকে। ঠিক যেভাবে আগুনের প্রবল উত্তাপে লোহা নিজেকে আরও দৃঢ় করে তোলে। তাই 'মৃত্যুঞ্জয়ী'র জয়গান করে গিয়েছিলেন আজীবন। তাঁর জীবনে মৃত্যুর শোকযাত্রা তো কম আসেনি। মা-কে হারিয়েছিলেন অল্পবয়সে, এরপর নতুন বৌঠান কাদম্বরী, স্ত্রী মৃণালিনী দেবী, বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কন্যা রেণুকা ও বেলা, কনিষ্ঠ পুত্র শমী- অশীতিপর বয়সে আঘাতের বাণ গ্রহণ করেছেন তিনি। প্রিয়তম পুত্র, কন্যার মৃত্যুযন্ত্রণা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে। এই আঘাত সইতে সইতে একমাত্র দৌহিত্র মীরা দেবীর পুত্রের নিষ্ঠুর শোককে কবি তাঁর মতো ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন ,‘যাবে যদি যাও, অশ্রু মুছে যাও।’

কিন্তু জীবনকে জীবনের মতো করেই দেখতে ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) । না হলে কুড়ি বছর বয়সি যুবক ভানুসিংহের পদাবলীতে সাবলীলভাবে কীভাবে লিখে গিয়েছিলেন, 'মরণ রে তুহুঁ মম শ্যামসমান'! শুধু তাই নয়, জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসেও কবি জীবনকেই দেখছেন। 'গুরুদেব' (Gurudev) বইটিতে রানী চন্দ লিখছেন- 'আবারও অবাক করে দিয়ে অপারেশনের দিন সকালে মহা আশঙ্কার মধ্যে শুয়ে থেকে মুখে মুখে গুরুদেব রচনা করলেন তাঁর জীবনের সর্বশেষ কবিতা। পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের বেদনা হয়তো বা কখনও তাঁকে পীড়িত করে থাকতে পারে, কিন্তু মৃত্যুভয়ে ভীত হওয়ার মতো কোনও নিদর্শন তাঁর জীবনের চালচিত্রে কোথাও কখনও ধরা পড়েনি। বরং সাহসভরে তিনি বলতে পেরেছিলেন-কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়"। 

নিরাকারবাদী ঈশ্বরকেই জীবনদর্শন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবন তরী যে ঘাটের শেষ সীমানায় উপস্থিত তা হয়তো বুঝেছিলেন তিনি। অসুস্থ শরীরে শান্তিনিকেতন (Shantineketan) থেকে কলকাতায় আসার পর বুঝেছিলেন এবার হয়তো 'সাবধানের কোনও মার নেই, মারেরও হয়তো কোনও সাবধান নেই'। অস্ত্রোপচারে সায় ছিল না কবির। কিন্তু সকলের মতের বিরুদ্ধে মত রাখার শারিরিক অবস্থা ছিল না। রানী চন্দ এবং প্রশান্ত মহলানবিশের স্ত্রী নির্মলকুমারী মহলানবিশ ছিলেন তখন কবির কবিতা লিখে দেওয়ার সঙ্গী। রানী চন্দ লিখেছেন, '২৭শে আষাঢ়, কবি অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে আছেন। কথা বলার অবস্থা নেই। হঠাৎই বললেন- বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা কবিতাটি পড়ে শোনাতে। কন্ঠস্থ, পরিচিত কবিতা কিন্তু ভুলে গেলাম মধ্যিখানে। বলতে শুরু করলেন গুরুদেব- দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে নাই-বা দিলে সান্ত্বনা...'

তিনি যে নিজেই মৃত্যুঞ্জয়ী, তাঁর লেখায় সে ব্যাখ্যা আছে বহুবার। নিজের এপিটাফ নিজে লিখে গিয়েছিলেন তাই। ১৩৪৬ বঙ্গাব্দের শীতকালে লিখেছেন এই গান- সমুখে শান্তি পারাবার/ ভাসাও তরণী হে কর্ণধার। ‘ডাকঘর’ নাটকে ব্যবহারের জন্য এই গান তৈরি করেছিলেন। ডাকঘরে অভিনয় করে অবসর নেবেন তিনি, এই ছিল পরিকল্পনা। তবে এই গানটি লিখে শান্তিনিকেতনের সঙ্গীত শিক্ষক শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে শিখিয়ে দিয়ে তাঁর কাছে কবির অনুরোধ ছিল কবির জীবিতকালে এই গানটি না গাওয়ার। 

২২ শ্রাবণ, সেদিন অস্তমিত রবি। ‘শান্তম্‌ শিবম্‌ অদ্বৈতম্’ মন্ত্র, ‘ওঁ পিতা নোঽসি’ শ্লোক, ব্রহ্মসঙ্গীতে মুখর কবির ঘর। বারোটার ঠিক আগে ডান হাতখানা কাঁপতে কাঁপতে উপরে তুলে কপালে ঠেকানোর আগেই শেষ নিঃশ্বাস কবির। মুহূর্তে যেন স্তব্ধ প্রকৃতি। শান্তিনিকেতনে পৌঁছল কবি বিদায়ের বার্তা। যে গান এতদিন গাওয়া হয়নি, রবীন্দ্রনাথের অনুরোধ মতো শান্তিনিকেতনে মন্দিরের উপাসনায় সে দিন সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়েছিল সে গান। চিরযাত্রার এক অমোঘ সঙ্গীত। 

চোখের জলে শৈলজারঞ্জন গাইলেন- 

মুক্তিদাতা, তোমার ক্ষমা তোমার দয়া

হবে চিরপাথেয় চিরযাত্রার । 

হয় যেন মর্তের বন্ধনক্ষয়,  বিরাট বিশ্ব বাহু মেলি লয়–

পায় অন্তরে নির্ভয় পরিচয় মহা-অজানার।।

 

আরও পড়ুন, 'মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা', নববর্ষে আত্মশুদ্ধির মন্ত্র শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ

আরও দেখুন
Advertisement
Advertisement
Advertisement

সেরা শিরোনাম

West Bengal News Live: পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের সমস্ত ওষুধ দ্রুত ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ, সঙ্গে অন্য খবর
পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের সমস্ত ওষুধ দ্রুত ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ, সঙ্গে অন্য খবর
Hail Care Tips: চিন্তা বাড়াচ্ছে 'টাক ভাইরাস', তিন দিনেই ফাঁকা হচ্ছে মাথা !
চিন্তা বাড়াচ্ছে 'টাক ভাইরাস', তিন দিনেই ফাঁকা হচ্ছে মাথা !
Digital Arrest : কী কাণ্ড ! 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' বর্ধমানের 'সাধুবাবা', তারপর ঝটকা খেল প্রতারকই !
কী কাণ্ড ! 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' বর্ধমানের 'সাধুবাবা', তারপর ঝটকা খেল প্রতারকই !
Hotel Room Booking : প্রাপ্তবয়স্ক হলেও হোটেল রুম নিতে পারবে না ছেলে-মেয়েরা ? কোথায় ভয় ! কী বলছে দেশের আইন
প্রাপ্তবয়স্ক হলেও হোটেল রুম নিতে পারবে না ছেলে-মেয়েরা ? কোথায় ভয় ! কী বলছে দেশের আইন
Advertisement
ABP Premium

ভিডিও

TMC News: TMC নেতা দুলাল সরকার হত্যার তদন্তে CID-র সাইবার বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিচ্ছে জেলা পুলিশTMC  News: তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার হত্যার তদন্তে এবার সিআইডির সাইবার বিশেষজ্ঞ | ABP Ananda LiveMedinipur News: সমস্ত সরকারি হাসপাতালে অভিযুক্ত সংস্থার তৈরি ওষুধ ব্যবহারে না করতে নির্দেশBangladesh News: একের পর এক বাঙ্কার তৈরিতে ব্যস্ত বাংলাদেশ। কী পরিকল্পনা ইউনূস প্রশাসনের?

ফটো গ্যালারি

ব্যক্তিগত কর্নার

সেরা প্রতিবেদন
সেরা রিল
West Bengal News Live: পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের সমস্ত ওষুধ দ্রুত ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ, সঙ্গে অন্য খবর
পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালের সমস্ত ওষুধ দ্রুত ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ, সঙ্গে অন্য খবর
Hail Care Tips: চিন্তা বাড়াচ্ছে 'টাক ভাইরাস', তিন দিনেই ফাঁকা হচ্ছে মাথা !
চিন্তা বাড়াচ্ছে 'টাক ভাইরাস', তিন দিনেই ফাঁকা হচ্ছে মাথা !
Digital Arrest : কী কাণ্ড ! 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' বর্ধমানের 'সাধুবাবা', তারপর ঝটকা খেল প্রতারকই !
কী কাণ্ড ! 'ডিজিটাল অ্যারেস্ট' বর্ধমানের 'সাধুবাবা', তারপর ঝটকা খেল প্রতারকই !
Hotel Room Booking : প্রাপ্তবয়স্ক হলেও হোটেল রুম নিতে পারবে না ছেলে-মেয়েরা ? কোথায় ভয় ! কী বলছে দেশের আইন
প্রাপ্তবয়স্ক হলেও হোটেল রুম নিতে পারবে না ছেলে-মেয়েরা ? কোথায় ভয় ! কী বলছে দেশের আইন
WhatsApp News: যেকোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অ্যাড করে করে দিচ্ছে যেকেউ, কী করবেন জানেন ?
যেকোনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অ্যাড করে করে দিচ্ছে যেকেউ, কী করবেন জানেন ?
PM Awas Yojana : আপনার আয় এর বেশি হলেও পাবেন আবাসের বাড়ি ! এবার যোজনায় বড় পরিবর্তন  
আপনার আয় এর বেশি হলেও পাবেন আবাসের বাড়ি ! এবার যোজনায় বড় পরিবর্তন  
East Burdwan: ভাড়াটিয়ার তথ্য থানায় জমা দেওয়ার আবেদন, প্রচারে নামল পুলিশ
ভাড়াটিয়ার তথ্য থানায় জমা দেওয়ার আবেদন, প্রচারে নামল পুলিশ
RG Kar News: আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদী শিল্পীদের বয়কটের ডাক, এবার পাল্টা চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ল সিপিএম
আর জি কর-কাণ্ডে প্রতিবাদী শিল্পীদের বয়কটের ডাক, এবার পাল্টা চ্য়ালেঞ্জ ছুড়ল সিপিএম
Embed widget