(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Poila Baisakh 2023: 'মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা', নববর্ষে আত্মশুদ্ধির মন্ত্র শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
Subho Nababarsha:জানা যায় ১৯৩৯ সালের পয়লা বৈশাখে বিশেষ পাঠ শিখিয়েছিলেন গুরুদেব। তিনি বলেছিলেন, ‘নববর্ষ-ধরতে গেলে রোজই তো লোকের নববর্ষ৷ কেননা, এই হচ্ছে মানুষের পর্বের একটা সীমারেখা৷'
কলকাতা: বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্যর তিনি ধারক-বাহক। তিনি বঙ্গীয় জীবন সাধনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। জীর্ণ-বিদীর্ণকে সরিয়ে ফেলে যিনি নূতনের আহ্বান করতে শিখিয়েছেন আপামরকে, সেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে প্রতিদিনই নববর্ষ।
ব্রাহ্ম উপাসক এবং উপনিষদে ব্রতী কবিগুরুর কাছে প্রতিটি সূর্যোদয় ছিল নূতন বছরের সূচনার দ্যোতক। কোনও একটি নির্দিষ্ট দিন নয়। মৃত্যু ও বিষণ্ণতায় ঘেরা একটি জীবনকে নতুন ভাবে বাঁচিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পালনের দিন হিসেবে দেখে এসেছেন তিনি। কবির কলমে তাই লেখা হয়েছিল, 'এই-যে বৈশাখের প্রথম প্রত্যুষটি আজ আকাশপ্রাঙ্গণে এসে দাঁড়ালো, কোথাও দরজাটি খোলবারও কোনো শব্দ পাওয়া গেল না, আকাশ-ভরা অন্ধকার একেবারে নিঃশব্দে অপসারিত হয়ে গেল, কুঁড়ি যেমন করে ফোটে আলোক তেমনি করে বিকশিত হয়ে উঠল–তার জন্যে কোথাও কিছুমাত্র বেদনা বাজল না। নববৎসরের ঊষালোক কি এমন স্বভাবত এমন নিঃশব্দে আমাদের অন্তরে প্রকাশিত হয়?' (জ্যৈষ্ঠ ১৩১৮)
রবীন্দ্রনাথের জীবনের শেষ নববর্ষ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে৷ ‘সভ্যতার সংকট’ সে দিন পাঠ করা হয়েছিল৷ গাওয়া হয়েছিল, ‘ঐ মহামানব আসে’৷ রানী চন্দের ‘আলাপচারি রবীন্দ্রনাথ’ বই থেকে জানা যায় ১৯৩৯ সালের পয়লা বৈশাখে বিশেষ পাঠ শিখিয়েছিলেন গুরুদেব। তিনি বলেছিলেন, ‘নববর্ষ-ধরতে গেলে রোজই তো লোকের নববর্ষ৷ কেননা, এই হচ্ছে মানুষের পর্বের একটা সীমারেখা৷ রোজই তো লোকের পর্ব নতুন করে শুরু হয়৷’
জানা যায়, পরবর্তীতে পয়লা বৈশাখেই কবির জন্মদিন পালন করা হত। ২৫ বৈশাখে জন্ম রবীন্দ্রনাথের। কিন্তু শান্তিনিকেতনে সেই সময়ে জলে নিদারুণ কষ্ট থাকত। ফলে পয়লা দিনেই জন্মোৎসবের অনুষ্ঠান পালন করা হত। রানী চন্দ লিখেছেন, 'আজ নববর্ষ৷ এবারে ১লা বৈশাখেই গুরুদেবের জন্মোত্সব হবে-আগে থেকেই ঠিক করা হয়েছিল৷ ভোরবেলা কচি শালপাতার ঠোঙায় কিছু বেল জুঁই কামিনী তুলে ‘উদয়ন’-এর দক্ষিণের বারান্দায় গুরুদেবের হাতে দিয়ে তাঁকে প্রণাম করলুম৷ আজ অনেক আগে থেকেই গুরুদেব বারান্দায় এসে বসেছেন৷ ফুলের ঠোঙাটি হাতে নিয়ে তা থেকে গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে ধীরে ধীরে বললেন, ‘আজ আমার জীবনের আশি বছর পূর্ণ হল৷ আজ দেখছি পিছন ফিরে-কত বোঝা যে জমা হয়েছে৷ বোঝা বেড়েই চলেছে৷’
পয়লা বৈশাখ যে কেবল আড়ম্বরের নয়, আত্মশুদ্ধিরও, তা শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথই। চিত্রা কাব্যগ্রন্থের নববর্ষেই সেই মননের দিকই প্রকাশিত করে গিয়েছেন কবি। লিখেছেন অমোঘ বাণী-
'নিশি অবসানপ্রায়, ওই পুরাতন
বর্ষ হয় গত!
আমি আজি ধূলিতলে এ জীর্ণ জীবন
করিলাম নত।
বন্ধু হও, শত্রু হও, যেখানে যে কেহ রও,
ক্ষমা করো আজিকার মতো
পুরাতন বরষের সাথে
পুরাতন অপরাধ যত।'