![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Sandhya Mukhopadhyay Demise: সুরের আকাশে সন্ধ্যা ঘনাল
Sandhya Mukhopadhyay Passes Away: ১৯৪৫ সালে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আর তাঁর পুজোর গান প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। লোকসঙ্গীত, কীর্তন, ভজন, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুলগীতিও গেয়েছেন তিনি।
![Sandhya Mukhopadhyay Demise: সুরের আকাশে সন্ধ্যা ঘনাল Sandhya Mukhopadhyay Demise: Looking back, Sandhya Mukherjee's life Sandhya Mukhopadhyay Demise: সুরের আকাশে সন্ধ্যা ঘনাল](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2022/02/15/a7e9792e660c98416336fac617f81f50_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: বাংলা গান আর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক সোনালি আকাশে সন্ধ্যা ঘনাল। নিভল আলো। চলে গেলেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay Demise)। ১৯৩১-এর আশ্বিন মাসে শিউলি ঝরা সময়ে জন্ম তাঁর। তাঁর বাবা নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন সু-গায়ক। দুর্দান্ত টপ্পা গাইতেন তাঁর মা হেমপ্রভা দেবী। মা-বাবার কাছেই ছোটবেলায় সুরের তালিম শুরু। গল্পদাদুর আসরে গান গেয়ে পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম শিক্ষাগুরু ছিলেন যামিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ছ’বছর তাঁর কাছে তিলিম নিয়েছিলেন সন্ধ্যা। এরপর নিজের বড়দা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাছে তিনি ইচ্ছেপ্রকাশ করেন, বড়ে গুলাম আলি খানের কাছে গান শিখতে চান। তাঁর আবদার রাখতে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বড়দা জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে যান। সেই সময় জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের বাড়িতে ছিলেন বড়ে গুলাম আলি খান। কিছুদিন বাদে বড়ে গুলাম আলি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে গানের তালিম দিতে সম্মতি জানান। সন্ধ্যার হাতে লাল সুতো বেঁধে মুখে তুলে দিয়েছিলেন গুড় আর ছোলা।
এর পর থেকে বড়ে গুলাম আলি খানকে বাবা বলেই সম্বোধন করতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বড়ে গুলাম আলি খানের একটি কথা সারাজীবনের জন্য দাগ কেটে গিয়েছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মনে, ‘কেউ যদি নিষ্ঠাভরে একটি রাগ সঠিক ভাবে গাইতে পারে, তাহলে তার সঙ্গীতশিক্ষা সার্থক।’জৌনপুরী, মালকোশ, গাউতি, জয়জয়ন্তী, ইমন, বাগেশ্রী..আরও কত রাগের তালিম নিতে নিতেই বড়ে গুলাম আলি খানের গান তাঁর চেতনায় ঢুকে গিয়েছিল। বেগম আখতার নিজের হাতে তানপুরা বাঁধতে শিখিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। বেগম আখতারের গানের সঙ্গে তানপুরায় সঙ্গতও করেছেন তিনি। বাংলায় পুজোর গানকে এক অকল্পনীয় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
১৯৪৫ সালে তাঁর প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয়। আর তাঁর পুজোর গান প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে। সেবছর সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুরে পবিত্র মিত্রর লেখা দু’টি গেয়েছিলেন তিনি, ‘কার বাঁশি বাজে’ আর ‘কেন তুমি দূরে চলে যাও গো।’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গীত জীবনের প্রথম দিকে যে গানগুলি বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম হল ‘ওগো মোর গীতিময়।’ রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সুরে কমল ঘোষের লেখা এই গানটি প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। এরপর সন্ধ্যা গাইলেন সলিল চৌধুরীর সুরে অবিস্মরণীয় দু’টি গান ‘আয় বৃষ্টি ঝেঁপে’ আর ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা।’ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলা গান...সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বিস্তার অলঙ্ঘনীয়। ঘনিষ্ঠদের কাছে নিজের একটা অপূর্ণ ইচ্ছের কথাও মাঝে মধ্যেই বলতেন তিনি। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে আর বেশ কয়েকটি লং প্লেয়িং ডিস্ক করার স্বপ্ন ছিল সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম গানের রেকর্ড বেরোনোর পর সিনেমায় প্লেব্যাকের সুযোগ আসতেও দেরি হয়নি। নিউ থিয়েটার্সের ব্যানারে ‘সমাপিকা’-য় গাইলেন সন্ধ্যা, ‘মানুষের মনে ভোর হল আজ।’ প্রথম প্লেব্যাকই ছবির দুনিয়ায় তাঁর সাফল্যের দরজা খুলে দিল। এরপর রাইচাঁদ বড়ালের সুরে ‘অঞ্জনগড়’ ছবিটির জন্য বাংলা আর হিন্দি, দুই ভাষাতেই গাইলেন তিনি। এরপর সুচিত্রা সেনের লিপে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের একের পর এক গান। একের পর এক কালজয়ী হিট।
সিনেমার গানের পাশাপাশি লোকসঙ্গীত, কীর্তন, ভজন, রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং নজরুলগীতিও গেয়েছেন তিনি। আর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তাঁ তিন সপ্তক জোড়া গলায় ঈশ্বরপ্রদত্ত সুর যেন খেলা করত অবলীলায়, অমোঘ সম্মোহনে। গানের মাধুর্য অক্ষুন্ন রেখেই তিনি রাগ বিস্তারে, সরগমে, তানের ফলঝুরিতে মুগ্ধ করে রেখেছেন সুরের প্রকৃত সমঝদারদের। শ্রোতাদের ভালবাসায় কিংবদন্তী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর অসংখ্য অনুরাগীর চিরকালীন ভালবাসাই ছিল তাঁর কাছে সেরা সম্মান।
জাতীয় পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ১৯৭১ সালে ‘জয়জয়ন্তী’ এবং ‘নিশিপদ্ম’ ছবিদু’টির জন্য শ্রেষ্ঠ গায়িকার সম্মান পেয়েছিলেন তিনি। ২০১১-য় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে বঙ্গবিভূষণ পান তিনি। কখনও চোখ বুজে নয়, চোখ খুলে গান গাইতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। বরাবর। অনুজদের কাউকে চোখবুজে গাইতে দেখলে বকুনিও দিতেন। বলতেন, চোখ খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গান প্র্যাকটিস করতে। বাংলা গানের সাম্রাজ্ঞী হয়েও কী অবলীলায় চিরকাল বাহুল্যহীন একটা জীবন যাপন করে গিয়েছেন তিনি। বাড়ির ছাদে একসময় ফুলের গাছগুলোই ছিল তাঁর অবসরের সঙ্গী। ফুল বড্ড ভালবাসতেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
গানের সঙ্গেই কেটে গেল তাঁর সারাটা জীবন। তাঁর গান যেন সন্ধ্যার মেঘমালা হয়েই চিরদিনের জন্য রয়ে গেল বাঙালির হৃদয়ে। গানে গানেই তো তিনি শুনিয়েছিলেন ..‘জানি না ফুরাবে কবে এই পথ চাওয়া।’ সুরের রাজপথে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় চিরকালের সাম্র্যাজ্ঞী। তাঁর গান অক্ষয়, অবিনশ্বর।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)