Sheikh Shajahan: তিনিই 'অলিখিত ট্রেড লাইসেন্স'! তাঁর ভেড়িতে 'হুকিং'! রইল সন্দেশখালির শাহজাহান-নামা
Sandeshkhali Update:গোটা সন্দেশখালির নাকি বেতাজ বাদশা তিনি। তাঁকেই কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কার আশ্রয়ে রয়েছেন তিনি? শেখ শাহাজাহানকাণ্ডে রাজ্য়জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে এই একটাই প্রশ্ন।
সমীরণ পাল, অনির্বাণ বিশ্বাস, আশাবুল হোসেন, কলকাতা: বিদ্য়াধরী নদীর পাড়ে হ্য়াচারি সেন্টারের বোর্ড। সেই বোর্ডের নীচেই রয়েছে শেখ শাহজাহানের নাম। নথি অনুযায়ী, ঠিক তিন দিন আগে হ্যাচারির ট্রেড লাইসেন্স মিলেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ২ বছর ধরে চলছে এই হ্যাচারি।
সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের মারধরের পরে প্রায় দুই সপ্তাহ কাটতে চলল। কিন্তু দেখা নেই শেখ শাহজাহানের। গোটা সন্দেশখালির নাকি বেতাজ বাদশা তিনি। তাঁকেই কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কার আশ্রয়ে রয়েছেন তিনি? শেখ শাহাজাহানকাণ্ডে রাজ্য়জুড়ে ঘুরপাক খাচ্ছে এই একটাই প্রশ্ন।
এলাকায় ঢুঁ মারতেই উঠে এসেছে তারই কিছু টুকরো ছবি। শেখ শাহজাহানের নামে মার্কেটের কথা আগেই জানা গিয়েছে। এবার, সামনে এল শেখ শাহজাহানের হ্যাচারি। ধামাখালির ছোট কলাগাছি ও বিদ্যাধরী নদীর সঙ্গমস্থলের ধারেই রয়েছে 'পিন হ্যাচারি সেন্টার'। হ্যাচারি সেন্টারের বোর্ডের নীচে জ্বলজ্বল করছে শেখ শাহজাহানের নাম।
কিন্তু সন্দেশখালিকাণ্ডের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে, 'ঝুঁকি' নিতে রাজি নন হ্যাচারির ব্যবসায়ীরা। যে পরিচয়ই এতদিন 'অলিখিত ট্রেড লাইসেন্স' ছিল বলে অনেকে দাবি করছেন, সেই পরিচয়ই কি এখন 'গোপন' করতে চাইছেন 'আত্মগোপন' করে থাকা শেখ শাহজাহানেরই ব্যবসায়িক সহযোগীরা? 'ভাই'কে আড়াল করতে কি উঠেপড়ে লেগেছেন তাঁরাও? শেখ শাহজাহানের হ্যাচারির ব্যবসায়িক সহযোগী রফসের মোল্লা বলেন, 'আমরা জমি কিনে করেছি। কিন্তু ভাইয়ের নাম সামনে রেখেছিলাম যাতে এখানে গরিব মানুষরা মাছ কিনে মাছচাষ করতে পারে। ব্যবসাটা আমাদেরই।'
কিন্তু হ্যাচারি সেন্টারের যে ট্রেড লাইসেন্স এই ব্যবসায়ীরা দেখালেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, এ বছরই জানুয়ারির ১৫ তারিখে তার ট্রেড লাইসেন্স হয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র ৩ দিন আগে! কিন্তু, হ্য়াচারি তো চলছে ২০২২ থেকে। তাহলে ট্রেড লাইসেন্স ৩ দিন আগের কেন? তাহলে কি শাহজাহানের নাম থাকলে ট্রেড লাইসেন্সেরও প্রয়োজন নেই? রফসের মোল্লা বলেন, 'শাহজাহান না থাকলেও আমাদের ব্যবসা চালাতে হবে।' শেখ শাহজাহানের হ্যাচারি সেন্টার বলে পরিচিত এই জায়গাটি বেরমজুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত।
বেরমজুর ২ পঞ্চায়েতের প্রধান হাজি সিদ্দিক মোল্লাকে বারবার ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। রামপুরের বাড়ি ও পঞ্চায়েত অফিসে গিয়েও তাঁর দেখা মেলেনি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, 'উনি তৃণমূলের কর্মাধ্য়ক্ষ। তৃণমূলের একজন পঞ্চায়েত মেম্বার হওয়াটা হচ্ছে লুঠ করার লাইসেন্স। আবার আলাদা করে ট্রেড লাইসেন্স নিতে যাবে কোন দুঃখে? ওটাই তো তাঁর লাখ লাখ কোটি কোটি টাকা লুঠ করার লাইসেন্স'
এর পাশাপাশি, শেখ শাহজাহানের প্রাসাদোপম বাগান বাড়ির হদিশও মিলেছে। বাসন্তী হাইওয়ের ধারে রাজবাড়ি এলাকায়, ৪০ বিঘা অর্থাৎ ৮০০ কাঠা জমির ওপর তৈরি শেখ শাহজাহানের বাগানবাড়ি। বাইরে তালা ঝোলানো। অথচ বাড়ির ভিতরে রয়েছে লোকজন। প্রাসাদোপম বাগানবাড়িতে রয়েছে ৫টি এসি। ৪০ বিঘা জমি ঘেরা রয়েছে নেট দিয়ে। বাগানবাড়িতেই রয়েছে মাছের ভেড়ি। চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, যিনি শাসক দলের দাপুটে ব্লক সভাপতি এবং কয়েকদিন আগে পর্যন্ত জেলা পরিষদের কর্মাধ্য়ক্ষ ছিলেন তাঁরই ভেড়িতে না কি বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছে হুকিং করে!
সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো বলেন, 'এটা আমি জানি না, জানতে হবে। এটা আমার জানা নেই। এটা হয়ে থাকলে অন্যায়।' গোটা ঘটনায় তৃণমূল সরকারকে তুলোধনা করেছেন রাজ্য বিজেপির নেতা শমীক ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন: রামভক্তি তুঙ্গে, ২০ কেজির বিস্কুট দিয়ে রাম মন্দির বানালেন দুর্গাপুরের যুবক