Champahati Voter List Row: ছিল ১৮৫০০, কয়েক মাসে বেড়ে ২২৪০০, চম্পাহাটিতে ভুয়ো ভোটার? তুঙ্গে তরজা
Fake Voters: লোকসভা নির্বাচনের সময় চম্পাহাটি পঞ্চায়েতে ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৫০০। কিন্তু চলতি বছরের তালিকায় আচমকা ভোটার বেড়ে ২২ হাজার ৪০০ হয়ে গিয়েছে।

চম্পাহাটি: মহারাষ্ট্র, দিল্লিকে সামনে রেখে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, বিজেপি বাইরে থেকে লোক এনে পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় নাম তোলাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। সেই নিয়ে তরজার মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে ভুতুড়ে ভোটার নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিল। ২৬ এবং ৪১ নম্বর বুথের ভোটার তালিকায় প্রায় ৪০০ নতুন ভোটারের নাম যুক্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যাঁদের নাম নতুন যুক্ত হয়েছে, তাঁরা এলাকার বাসিন্দাই নন বলে দাবি স্থানীয়দের। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যরাও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। (Champahati Voter List Row)
জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের সময় চম্পাহাটি পঞ্চায়েতে ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৫০০। কিন্তু চলতি বছরের তালিকায় আচমকা ভোটার বেড়ে ২২ হাজার ৪০০ হয়ে গিয়েছে। স্ক্রুটিনি করে দেখা যাচ্ছে, ৬০ বছর বয়সেও নতুন ভোটার হিসেবে তালিকায় নাম উঠেছে কারও। সেই নিয়ে যেমন সন্দেহ দেখা দিয়েছে, তেমনই একটি মাত্র ফোন নম্বরের সঙ্গে চার-পাঁচ জন ভোটারের নাম যুক্ত থাকতে দেখা গিয়েছে। মালদা-মুর্শিদাবাদের বারুইপুরের তালিকায় শিলিগুড়ি, মালদা, মুর্শিদাবাদের ভোটারের নাম রয়েছে বলে অভিযোগ। (Fake Voters)
স্ক্রুটিনি করতে গিয়েই বিষয়টি সামনে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে। এলাকাবাসীরা জানাচ্ছেন, তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের এলাকায় কখনও দেখেনইনি। চম্পাহাটি ৪১ নম্বর বুথের সদস্য সুব্রত কুণ্ডু বলেন, “২৫০-৩০০ নতুন ভোটার। এখনও সম্পূর্ণ দেখতে পারিনি। আরও হয়ত বেরোবে। অথচ এঁরা এখানে থাকেনই না। ৬০ বছর বয়সে নতুন ভোটার কার্ড হয়েছে। এক-একটা নম্বর ধরে ফোন করি। কয়েক দিন আগে ফোন ধরেওছিল। কোনওটা মালদা, কোনওটা হুগলি, কোনওটা শিলিগুড়ির কাছাকাছি। প্রথমে ধরলেও, এখন ফোনগুলি বন্ধ। নট রিচেবল বলছে।”
চম্পাহাটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিতালিগায়েন মণ্ডল বলেন, “পাড়ায় সবসময় ঘুরি আমরা। পাড়ায় ঘুরে, স্ক্রুটিনি করে যে তথ্য হাতে পেয়েছি, তাতে আমার ওয়ার্ডেই ১০৬ নতুন ভোটার যুক্ত করা হয়েছে দেখছি। কিন্তু এঁরা কোথা থেকে আবেদন করেছেন, কী করেছেন, জানি না। কিন্তু ঘুরে দেখলাম,এঁরা এলাকার বাসিন্দাই নন। আমার মনে হয়, অনলাইনে ফর্ম ফিলআপ করছেন। বিএলও-কেও জিজ্ঞাসা করেছি। তিনিও বলছেন, তাঁরা করেননি। এই ধরনের অপরাধ বন্ধ হওয়া দরকার। যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা উচিত।”
চম্পাহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান অসিতবরণ মণ্ডল জানিয়েছেন, মানিকচন্দ্র সাহা, গণেশ বিশ্বাস, সীতা গায়েন, ব্রজেন মণ্ডল, সন্ধ্যা মাজি, সনকা কর্মকারের মতো প্রচুর নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। কিন্তু এঁরা কেউ আমার এলাকার বাসিন্দা নন। কারও ৬০, কারও ৬৭ বছর বয়স। এক নম্বর থেকে একাধিক ভোটারের নাম তোলা হয়েছে। ফোন করছি, মালদা, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, শিলিগুড়িতে ফোন যাচ্ছে। ফোন ধরছে সাইবার ক্যাফে।
পর পর বেশ কয়েক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ভোটার তালিকায় হেরফের ঘটানোর অভিযোগ সামনে এসেছে। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, দিল্লিতে বিজেপি-র বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় হেরফের ঘটানোর অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। মহারাষ্ট্রে মাত্র পাঁচ মাসে ৪০ লক্ষ ভোটারের নাম যুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মহা আঘাডি জোট।
সেই আবহেই সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকায় হেরফের করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন মমতা। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ""অনলাইন ভোটার তালিকার নামে নির্বাচন কমিশনের সাহায্য় নেওয়া হচ্ছে। ইডি-সিবিআই পাঠানো হচ্ছে। আমি কাউকে দোষ দিচ্ছি না। কিন্তু ভুতুড়ে রাজনৈতিক দল এই কাজ করছে। ওদের নামও নিতে চাই না। ওরা ভুতুড়ে রাজনৈতিক দল। বিহারের লোকেদের নাম তুলছে অনলাইনে। কেন অনলাইন হবে? ভোটার কার্ড, আধার কার্ডে নাম তুলতে গেলে সশরীরে যেতে হয়। বিজেপি, মহারাষ্ট্রে ৪০ লক্ষ ভোট বাড়ল কী করে? দিল্লিতেই বা কী করেছিলেন? একদিন না একদিন বেরোবেই।"
বিজেপি-কে নিশানা করে মমতা আরও বলেন, "অঙ্কটা কেউ দেরিতে কষে, কেউ আগে কষে। অঙ্কটা কষতে জানতে হয়। আমরা অঙ্ক কষে দেখে নিয়েছি। এখানে বাবুরা বসে রয়েছেন। প্রত্যেক বিধানসভায় ২০ থেকে ৩০ হাজার বাইরের লোকের নাম ঢোকাবে। আর নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট দেওয়াবে। তারা গার্ড দেবে। বাইরের লোক, যারা বাংলার ভোটারই নয়, তারা এসে ভোট দেবে। আপনাদের এই পরিকল্পনা কিন্তু আমরা ভেস্তে দেব। চুরিটা ধরে ফেলেছি।"
ভুয়ো ভোটার ঢুকিয়ে তালিকায় হেরফের ঘটানো নিয়ে সরব হন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "দিল্লিতেও করেছে এটা। ভোটের কাজ যাঁরা করেন, তাঁরা বুঝবেন। দিল্লিতে ভোটার তালিকায় বিস্তর ফারাক রয়েছে। আট মাসে ৪ লক্ষ লোকের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে, যা গত ১৪ বছরে হয়নি। নয়াদিল্লি আসনে ২০ হাজার ভোটে কমে গিয়েছে। কোথাও আবার বেড়েছে ৩০ হাজার। ৭০ আসনে সবমিলয়ে বাড়তি ৪-৪.৫ লক্ষ ভোটার যুক্ত হয়েছে। কমিশনের ভূমিকা নিয়ে যত কম বলা যায়, তত ভাল। গলা বিশ্রাম পাবে।"
বিজেপি যদিও অভিযোগে কর্ণপাত করতে নারাজ। বরং নতুন করে NRC চালুর দাবি তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি শাসিত রাজ্যে যেখানে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে কেন হবে না, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। উত্তরাখণ্ড, গুজরাতের মতো রাজ্যের দেখাদেখি বাংলাতেও NRC চালু করার দাবি তুলেছেন। বাংলাদেশের জঙ্গিরা, রোহিঙ্গারা কী করে ভোট দেয়, সেই প্রশ্নও তোলেন শুভেন্দু। যদিও তৃণমূলের কুণাল ঘোষের সাফ বক্তব্য, "ধর্মের নামে এমন কিছু করা উচিত নয়, যার ফল নেতিবাচক হয়। আমরা রোটি-কপড়া-মকানের রাজনীতি করি। পাল্লা দিতে না পেরে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করে বিজেপি।"
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
