SSC Recruitment Scam: মন্ত্রিকন্যার চেয়ে ১৮ নম্বর বেশি পেয়েও ববিতা 'বেকার', 'নষ্ট' জীবনের পাঁচটি বছর
High Court on SSC: ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২ মে সেই পরীক্ষার ফল বেরোয়।
কলকাতা: প্রথম কুড়ির মধ্যে নাম দেখে চোখেমুখে প্রশান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু সেই শেষ, গত পাঁচ বছরে এক মুহূর্তও শান্তিতে তিষ্ঠোতে পারেননি ববিতা সরকার। অন্য সময় হলে হয়ত, একধাপ পিছনো নিয়ে মাথা ঘামাতেন না তিনি। কিন্তু যে স্কুলের চাকরি পেতে দিনরাত এক করে ফেলেছেন, হাজারো কাজ সামলে চালিয়ে গিয়েছেন, মন্ত্রবলে এক নিমেষে সব ওলটপালট হয়ে যাবে, তা মেনে নিতে পারেননি ববিতা। তাই সামনের জন কতটা প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী, তা না ভেবেই নিজের অধিকার আদায়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সেই একরোখা মনোভাবেই আজ এসএসসি দুর্নীতি মামলায় কাঠগড়ায় স্বয়ং রাজ্যের শিক্ষা প্রতি মন্ত্রী পরেশ অধিকারী (Paresh Adhikary)। প্রভাব খাটিয়ে নিজের কম নম্বর পাওয়া মেয়েকে তিনি চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। তার জেরে বিচারপতি তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর সুপারিশ করেছে। মঙ্গলবার এবিপি আনন্দের ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সমুন অনুষ্ঠানে এসে নিজের অভিজ্ঞতা সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন ববিতা (West Bengal Jobs)।
দীর্ঘ পাঁচ বছরের লড়াই
২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হয়েছিল (SSC Recruitment Scam)। ২০১৭ সালের ২ মে সেই পরীক্ষার ফল বেরোয়। অভিযোগ, SSC-র প্রথম তালিকায় অঙ্কিতা অধিকারীর নামই ছিল না। ২০ নম্বরে নাম ছিল ববিতার (Babita Sarkar)। এর পর যখন নতুন করে মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয় এসএসসি-র তরফে, তাতে নিজের নাম ২১ নম্বরে দেখতে পান ববিতা। প্রথমে অতশত মাথাতেই আসেনি তাঁর। বরং একধাপ নেমে গেলেন কী ভাবে, সেই প্রশ্নই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। তাতেই মাথা ঠান্ডা করে ফের তালিকায় চোখ বোলাতে শুরু করেন। তাতেই চোখে পড়ে এক নম্বরে জ্বলজ্বল করছে অঙ্কিতা অধিকারীর, আগে যাঁর নাম প্রথম ২০-র মধ্যেই ছিল না। সেই থেকে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ।
ববিতা জানিয়েছেন, ওই একধাপ পিছনো নিয়ে হেন জায়গা নেই তিনি যাননি। ধর্নামঞ্চের সদস্যদের কাছে যান সবার আগে। সকলকে নিজের র্যাঙ্কিং কার্ড দেখান। তিনি বলেন, "এর পর একে একে এসএসসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া থেকে তথ্য জানার অধিকার আইনে RTI ফাইল করা, কিছুই বাদ দিইনি আমি। উদ্দেশ্য ছিল একটাই, কোন মন্ত্রবলে একধাপ পিছিয়ে গেলাম, কোন বিষয়ে, কত নম্বর পেয়েছি, তা জানার।" ববিতার অভিযোগ, আজও সেই চিঠির উত্তর পাননি। তবে লড়াই ছাড়েননি তিনি। সংসার, দুই সন্তান সামলে আইন-আদালতের পাশাপাশি, আন্দোলনেও নিয়মিত অংশ নিয়ে চলেছেন বিগত পাঁচ বছর ধরে (Supreme Court)।
আরও পড়ুন: Paresh Adhikari: সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ, এবার ডিভিশন বেঞ্চে গেলেন পরেশ
কিন্তু ববিতার জীবনে বিশেষ কোনও পরিবর্তন না ঘটলেও, চারপাশের অনেক কিছুই এই পাঁচ বছরে পাল্টে গিয়েছে। ২০১৮ সালের ১৭ অগাস্ট ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারেও তিনি রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী। তালিকা থেকে ছিটকে যে বছর চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছিল ববিতাকে, এক নম্বরে নাম উঠে আসা অঙ্কিতা কিন্তু ওই বছরই ২৪ নভেম্বর শিক্ষিকা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। বাবার সুপারিশ কাজে লাগিয়ে PHD-র গবেষণাপত্র জমা দেওয়া বিতর্কেও কিচ্ছু যায় আসেনি তাঁর।
লাভ-ক্ষতির হিসেব কষতে বসে শুধুই আক্ষেপ
ববিতার অভিযোগ, স্বাভাবিক ভাবেই এই পাঁচ বছরে অঙ্কিতা বা অন্য কেউ ববিতার খোঁজ নিতে আসেননি। কিন্তু নিজের লড়াই থেকে একচুলও সরে আসেননি ববিতা। তাঁর এই লেগে পড়ে থাকাই এসএসসি মামলায় মন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছনো গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। কিন্তু ববিতার নিজের কী মত? কোনও মতামত নেই তাঁর, আদালত এবং বোর্ডের উপর সব ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে এসেছে পাঁচটি বছর, জীবনের অনেকটা সময়, পরিশ্রম, সর্বোপরি মনের মধ্যে লালিত স্বপ্ন নষ্ট হয়ে যাওয়ার আক্ষেপ (School Service Commission)।
সেই সব নিয়ে লাভ-ক্ষতির হিসেব কষতে বসে ববিতার হাতে শুধু রয়ে গিয়েছে প্রাপ্ত নম্বরটুকুই, যা আদালতে সরকার নিজেই খোলসা করতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, মন্ত্রিকন্যার থেকে ১৮ নম্বর বেশি ছিল তাঁর। ববিতার প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৭৭। পার্সোনালিটি টেস্টে পেয়েছিলেন ৮। মন্ত্রিকন্যা অঙ্কিতার প্রাপ্ত নম্বর ৬১। পার্সোনালিটি টেস্টে বসেনইনি তিনি।